সোমবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
সাংবাদিক শিমুল হত্যা

ধরা পড়লেন মেয়র মীরু

নিজস্ব প্রতিবেদক

ধরা পড়লেন মেয়র মীরু

সাংবাদিক আবদুল হাকিম শিমুলকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত শাহজাদপুরের পৌর মেয়র হালিমুল হক  মিরু গতকাল রাতে রাজধানী ঢাকা থেকে গ্রেফতার হয়েছেন। রাত ৯টার দিকে ডিবি পুলিশ তাকে শ্যামলী থেকে গ্রেফতার করে। ডিবি সূত্র জানিয়েছে, রমনা জোনাল টিম ও সিরাজগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সমন্বয়ে একটি যৌথ দল ইন্সপেক্টর দীপক দাসের নেতৃত্বে মিরুকে গ্রেফতার করে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ দক্ষিণের উপ-কমিশনার মাশরুকুর রহমান খালেদ জানান, মোবাইল ট্রাকিংয়ের মাধ্যমে মেয়রের অবস্থান শনাক্ত করে রাজধানীর শ্যামলী মোড় থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তিনি মোটরসাইকেলে করে পালানোর চেষ্টা করছিলেন। গ্রেফতারের পর তাকে সিরাজগঞ্জ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

বিচার দাবি : এদিকে সাংবাদিক হত্যার প্রতিবাদে গতকালও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন হয়েছে। এসব মানববন্ধন থেকে শিমুলের ওপর গুলি বর্ষণকারী শাহজাদপুরের পৌর মেয়র হালিমুল হক মিরুর দ্রুত আইনে বিচার দাবি করা হয়। রাজধানীতে গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), ঢাকা বিভাগীয় সাংবাদিক ফোরাম ও সমকাল পরিবারের উদ্যোগে মানববন্ধন করা হয়। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের মহাসচিব ওমর ফারুকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথি ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার। বক্তব্য দেন বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব আবদুল জলিল ভূইয়া, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আতিকুর রহমান চৌধুরী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহেদ চৌধুরী, ডিআরইউ সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, সমকালের নির্বাহী সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি প্রমুখ। শিমুল হত্যার ঘটনায় মেয়র মিরুর বিচার দ্রুত আইনে করার নির্দেশ দিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে গোলাম সারওয়ার বলেন, শুধু গ্রেফতারই যথেষ্ট নয়, শিমুলের ওপর গুলি বর্ষণকারী মেয়র হালিমুল হক মিরুকে দ্রুত বিচার আইনে বিচার করতে হবে। তিনি বলেন, শিমুলের পরিবারের পাশে সাংবাদিকরা আছেন, থাকবেন।

 

 

বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন : একই দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে গতকাল সাংবাদিকরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর অনুযায়ী, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে) গতকাল সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। এতে সিইউজের সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন। সাংবাদিক হত্যার বিচারে আলাদা ট্রাইব্যুনাল দাবি করে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন (আরইউজে) মানববন্ধন করে। বেলা ১১টায় মহানগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। নেত্রকোনায় সাংবাদিক সমাজ বেলা সাড়ে ১১টায় মোক্তারপাড়া পৌরসভার সামনের সড়কে মানববন্ধন করে। এতে সাংবাদিকদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজনও অংশগ্রহণ করেন। লক্ষ্মীপুরে মানববন্ধন করেছেন জেলায় কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা। বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত প্রেস ক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন করা হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জে মানববন্ধন করেছেন জেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা। বেলা ১১টায় তারা ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাংবাদিকবৃন্দ’ ব্যানারে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন। ফেনী প্রেস ক্লাব সকালে ফেনীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। ফরিদপুরে বেলা ১১টায় প্রেস ক্লাবের সামনে আধাঘণ্টার মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন স্থানীয় সাংবাদিকরা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাংবাদিকদের মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে বেলা ১১টায় স্থানীয় প্রেস ক্লাব চত্বরে। গাজীপুরের শ্রীপুরে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বাসস্ট্যান্ডে মানবপ্রাচীর তৈরি ও স্মারকলিপি প্রদান করেন সাংবাদিকরা। পাবনার সাংবাদিকরা মানববন্ধন আয়োজন করেন শহরের আবদুল হামিদ রোডে। টাঙ্গাইল ময়মনসিংহ মহাসড়কের ঘাটাইল উপজেলা পরিষদের সামনে ঘাটাইল প্রেস ক্লাব ও উত্তর টাঙ্গাইল সাংবাদিক ফোরাম যৌথভাবে মানববন্ধন করে। লালমনিরহাটে কমর্রত সাংবাদিকরা সকালে শহরের মিশনমোড় চত্বরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। কুষ্টিয়া প্রেস ক্লাবের সামনের রাস্তায় মানববন্ধন করেন সর্বস্তরের সাংবাদিকরা। কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজ সাংবাদিক সমিতি (কুভিকসাস) দুপুরে কলেজের ক্যাম্পাসে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। নোয়াখালী প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে ক্লাবের সামনে। লক্ষ্মীপুরের রায়পুর প্রেস ক্লাবও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে।

শাহজাদপুরে বিক্ষোভ : সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, শিমুল হত্যার প্রতিবাদে শাহজাদপুর প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও রায়গঞ্জে সাংবাদিকরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন।

ফাঁসি দেইখা মরতে চাই : সাংবাদিক শিমুলের বয়োবৃদ্ধ মা হামিদা খানম বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘আমার সোনার মতো ছেলেটারে গুলি কইরা মাইরা ফেলল? আমার ছেলে কোনো অপরাধ করে নাই। কোনো দিন কারও কোনো ক্ষতি করে নাই। তবে কেন তাকে মরতে হলো? তার হত্যাকারীর আমি ফাঁসি দেইখা মরতে চাই।’

মিরুকে দল থেকে বহিষ্কার : সাংবাদিক আবদুল হাকিম শিমুল হত্যা মামলার প্রধান আসামি পৌর মেয়র ও সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হালিমুল হক মিরুকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সঙ্গে তার অন্যতম সহযোগী উপজেলা আওয়ামী লীগের আরেক সদস্য কে এম নাসিরকেও বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া মেয়র মিরুকে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। গতকাল উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য হাসিবুর রহমানের সভাপতিত্বে জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় সাবেক এমপি চয়ন ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আজাদ রহমান, সহ-সভাপতি শফিউর রহমান শফি, সাংগঠনিক সম্পাদক মুস্তাক আহমেদ ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রহিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

মিরুর পাসপোর্ট জব্দ : পৌর মেয়র হালিমুল হক মিরুর পাসপোর্ট ও ভোটার আইডি কার্ড জব্দ করা হয়েছে। গতকাল বিকালে তার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ এগুলো জব্দ করে। শাহজাদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল হক জানান, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে বিকালে মেয়র মিরুর বাড়ি তল্লাশি করে পাসপোর্ট ও ভোটার আইডি কার্ড জব্দ করা হয়।

আরও একজন আটক : সাংবাদিক শিমুল হত্যা মামলায় সাহেব আলী নামে আরও এক আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকাল ভোররাতে শাহজাদপুর পৌর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার সাহেব আলী শাহজাদপুর উপজেলার নলুয়া গ্রামের আজহার আলীর ছেলে। এর আগে শনিবার রাতে হত্যা মামলার অন্যতম আসামি কে এম নাসির উদ্দিনসহ পাঁচজন ও শুক্রবার বিকালে পৌর মেয়র মিরুর ছোট ভাই হাবিবুল হক মিন্টুকে আটক করে পুলিশ।

সাতজন কারাগারে : আদালত আটককৃত সাতজনকে কারাগারে পাঠিয়েছে। গতকাল দুপুরে শাহজাদপুর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক হাসিবুল হক এ আদেশ দেন। কারাগারে পাঠানোরা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পৌর শহরের ছয়আনি পাড়ার কে এম নাসির উদ্দিন, বাড়াবিল গ্রামের মো. আরসাদ আলী, নাজমুল হোসেন, আলমগীর হোসেন ও শক্তিপুর গ্রামের জহির উদ্দীন।

তাদের মধ্যে প্রথম দুজন মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। অন্যদের সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে পরে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। মেয়র হালিমুল হকের ভাই হাফিজুল হক ও হাবিবুল হককে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

সর্বশেষ খবর