বুধবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

নতুন ইসির সামনে যত চ্যালেঞ্জ

সব দলকে আস্থায় এনে জাতীয় নির্বাচন । করতে হবে সিটি, উপজেলা ও উপনির্বাচন

মাহমুদ আজহার

নতুন ইসির সামনে যত চ্যালেঞ্জ

জনমনে আস্থা তৈরি করে রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনমুখী করাই নতুন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রধান চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে অর্পিত সাংবিধানিক দায়িত্ব নিরপেক্ষভাবে পালন করতে হবে। আসন্ন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনসহ কয়েকটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ও উপনির্বাচনে তাদের নিরপেক্ষতার পরীক্ষা হবে।

নতুন নির্বাচন কমিশনকে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম এবং সীমানা নির্ধারণের জটিলতা নিরসন করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় নিতে তাদের সঙ্গে সংলাপ করতে হতে পারে। বিশিষ্ট নাগরিকসহ স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গেও মতবিনিময় করতে পারে কে এম নুরুল হুদা কমিশন। সরকার, স্থানীয় প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা নিতে হবে তাদের। এক কথায় নতুন কমিশনকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ভূমিকায় থেকে কাজ করার চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করে, কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের ইসি সাংবিধানিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেয়েছে। তাদের ওপর দেশবাসীর প্রত্যাশা অনেক। এ বিষয়টি নতুন নির্বাচন কমিশনকে প্রতি মুহূর্তে মনে রাখতে হবে। তাহলেই তারা দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করতে পারবে। পর্যবেক্ষকদের মতে, কেবল নির্বাচন কমিশনই একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারে না। সেখানে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, প্রশাসন সর্বোপরি সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন। একইভাবে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিরোধী দলসহ গণমাধ্যমেরও ভূমিকা রয়েছে। কেবল নির্বাচন কমিশনের ওপর নির্ভর করা ঠিক হবে না। রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতার পাশাপাশি সরকার ও প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা ছাড়া নির্বাচন কমিশনের পক্ষে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান কঠিন। ইসির জন্য এসব বড় চ্যালেঞ্জ। এটা নতুন ইসি কীভাবে মোকাবিলা করবে তাও তাদের ভাবতে হবে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের পরামর্শ, শপথ নিয়েই দ্রুত কাজ শুরু করবে নতুন ইসি। স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে তারা খুব শিগগির সংলাপে বসবে। নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটির কাছে নাগরিক সমাজ বেশকিছু প্রস্তাব দিয়েছিল। তা নতুন ইসি বিবেচনায় নিতে পারে। ইসির ওপর অনেক লেখালেখি ও গবেষণা হয়েছে। সেগুলোও নতুন ইসি পর্যালোচনা করতে পারে। এ ছাড়া ২০০৮ সালে ড. শামসুল হুদা কমিশন বিদায়ের আগে একগুচ্ছ প্রস্তাব রেখেছিল। সেগুলোও খতিয়ে দেখা জরুরি। এ প্রসঙ্গে সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ ছহুল হোসাইন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদাকে। গণমাধ্যমে দেখলাম, তার নিরপেক্ষতা নিয়ে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল প্রশ্ন তুলেছে। এখন তাকেই প্রমাণ করতে হবে তিনি দলনিরপেক্ষ। সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে নতুন কমিশনকে এগোতে হবে।’ ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ—টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নতুন নির্বাচন কমিশনের কাছে আমাদের প্রত্যাশা সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠুভাবে জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করা। সব ধরনের ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় সরকারের সামনের সব নির্বাচন সুষ্ঠু করবেন— সেটাই প্রত্যাশা।’

নুরুল হুদার নেতৃত্বে নতুন কমিশন কেমন হলো— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নতুন নির্বাচন কমিশন এর চেয়ে ভালোও হতে পারত, আবার খারাপও হতে পারত। তারা কী কাজ করবেন, কতটুকু করবেন দিন গেলেই তা বোঝা যাবে। এখনই তাদের সম্পর্কে নেতিবাচক বলা ঠিক হবে না।’ সুশাসনের জন্য নাগরিক—সুজন সভাপতি ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘নতুন নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রত্যাশা হলো— ভঙ্গুর নির্বাচন কমিশনকে একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে হবে। জনগণের আস্থাহীনতা কাটাতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনমুখী করতে হবে।’

জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদ—জানিপপ চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করে দিয়েছেন। নতুন ইসির কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করা এবং সেই ক্ষেত্র প্রস্তুত করা।’ তিনি বলেন, ‘ইসি অনুরাগ-বিরাগের বশবর্তী হয়ে কাজ করবে না, সেখানে নৈতিকতার বিষয়টিও থাকবে।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন নিয়ে যে আস্থার সংকট ছিল, তা যথেষ্টভাবে কাটানো হয়নি। নতুন ইসি বিরোধী দল বিশেষ করে বিএনপির আস্থার সংকট কাটাতে পারবে বলে মনে হয় না। অনেকেই পয়েন্ট আউট করার চেষ্টা করছেন, একজন মুক্তিযোদ্ধাকে সিইসি করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা থাকলেই যে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে যান, বিষয়টি এমন নয়। তাহলে মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহকে কি আওয়ামী লীগ সিইসি বানাবে? সুতরাং এগুলো খোঁড়া যুক্তি।’ তিনি বলেন, ‘নিয়োগের মাধ্যমে নতুন ইসি আস্থায় আসেনি। এখন কাজের মধ্য দিয়েই তাদের আস্থায় আসতে হবে।’

১৫ ফেব্রুয়ারি শপথ নেবে নতুন ইসি : নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নতুন নির্বাচন কমিশনাররা শপথ নেবেন ১৫ ফেব্রুয়ারি। ওই দিন বেলা ৩টায় জাজেস লাউঞ্জে তাদের শপথ বাক্য পাঠ করানো হবে বলে জানিয়েছেন হাই কোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) মো. সাব্বির ফয়েজ। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চার নির্বাচন কমিশনারকে শপথ পড়াবেন। তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতির সম্মতি নিয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি নতুন সিইসি ও চার নির্বাচন কমিশনারের শপথের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। বিদায়ী কমিশনের সিইসি ও তিন কমিশনারের পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হচ্ছে আজ। অন্য এক কমিশনারের মেয়াদ শেষ হবে ১৪ ফেব্রুয়ারি।

সিইসি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সাবেক সচিব কে এম নুরুল হুদা। আর চার কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব তালুকদার, সাবেক সচিব মো. রফিকুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম কবিতা খানম এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী। গত সোমবার রাত সাড়ে ৯টায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে সংবাদ সম্মেলন করে সিইসি ও চার কমিশনার নিয়োগের কথা জানান। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি তাদের নিয়োগ চূড়ান্ত করেছেন। পরে রাতেই প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

সর্বশেষ খবর