বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

যুক্তরাষ্ট্রে বহিষ্কার ঝুঁকিতে লক্ষাধিক বাংলাদেশি

প্রতিদিন ডেস্ক

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণের লক্ষ্যে ২১ ফেব্রুয়ারি হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রী জন কেলি জারিকৃত নতুন এক স্মারকে লক্ষাধিক বাংলাদেশিসহ সোয়া কোটি অবৈধ অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের ঝুঁকিতে পড়েছেন। খবর এনআরবি নিউজ।

এ স্মারক অনুযায়ী, অভিবাসনের মর্যাদা নেই-এমন লোকজনকে গ্রেফতারের পরই নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দিতে বলা হয়েছে। এ কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়িত করার স্বার্থে অতিরিক্ত ১০ হাজার এজেন্ট নিয়োগের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের দিকনির্দেশনাও রয়েছে। খবরটি

শীর্ষস্থানীয় সব মিডিয়ায় প্রকাশ ও প্রচারের পর সমগ্র কমিউনিটিতে উদ্বেগ আর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অভিবাসী এবং মানবাধিকার নিয়ে কর্মরত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি-নৈতিকতার পরিপন্থী এহেন পদক্ষেপ থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে। গত ২৫ জানুয়ারি ট্রাম্পের জারি করা নির্বাহী আদেশে অবৈধভাবে বসবাসরতদের মধ্যে যারা গুরুতর অপরাধে লিপ্ত, কেবল তাদের গ্রেফতার করে নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার প্রসঙ্গ থাকলেও সর্বশেষ এ স্মারকে অপরাধী-নিরপরাধী নির্বিশেষে সব অবৈধ অভিবাসীকে ঢালাওভাবে গ্রেফতারের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। এই বিশেষ নির্দেশ মন্ত্রণালয় থেকে মাঠপর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লসএঞ্জেলেস সিটিতে ‘ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টে’ (আইস)-এর সদস্যরা রাস্তায় নামে অবৈধদের ধরার জন্য। সেই অভিযানের ছবিও মিডিয়ায় বিতরণ করা হয়েছে আইসের পক্ষ থেকেই। আর এ কারণেই সর্বত্র সন্ত্রস্ত ভাব বিরাজ করছে। কংগ্রেসে ডেমোক্রেটিক পার্টির শীর্ষ নেতা সিনেটর চাক শুমার এবং কংগ্রেসওম্যান ন্যান্সি পেলসি পৃথক পৃথক প্রতিক্রিয়ায় এহেন পদক্ষেপকে অ-আমেরিকান হিসেবে অভিহিত করেছেন। এভাবে আমেরিকার বর্ণাঢ্য ঐতিহ্যে চির ধরানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির দুই নেতা।

নিউইয়র্ক সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাসিয়ো বলেছেন, ‘এর ফলে সামাজিক সম্প্রীতি হুমকির মুখে পড়ল। সন্ত্রস্ত লোকজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেখলেই আত্মগোপনে যাবেন। ফলে অপরাধীদের কোনো তথ্য পুলিশ সহজে আর পাবে না। সিটি মেয়র উল্লেখ করেছেন, আমেরিকায় জন্মগ্রহণকারী ছেলেমেয়ের সামনে তাদের মা-বাবাকে ধরে নিয়ে নিজ দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার ফলে পারিবারিক বিভক্তি বাড়বে, যা কোনো সভ্য সমাজের কাম্য হতে পারে না।’ এদিকে ঢালাওভাবে গ্রেফতার ও বহিষ্কারের নয়া নির্দেশনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ন্যাশনাল ইমিগ্রেশন ল সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক মেরিয়েলিনা হিসক্যাপি বলেন, ‘সুযোগের অপব্যবহার করা হচ্ছে মানুষের শ্বাস কেড়ে নিতে। এভাবে তারা মূলত আইনের শাসনের পথ রুদ্ধ করে ফেলছে।’

আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের অ্যাটর্নি লি গেলান্ট গণমাধ্যমে বলেন, ‘এখন আপনি যাকে খুশি তাকে ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সীমানার বাইরে ছুড়ে ফেলতে পারবেন। সভ্য সমাজে এটি কতটা গ্রহণযোগ্য?’ এহেন আইনের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করে যাব।

আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের ইমিগ্রেশন রাইটস প্রজেক্টের পরিচালক ওমর জাডোয়ট বলেন, ‘বিচারাধীন একটি বিষয়ের নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই বিধির মধ্য দিয়ে পরিস্থিতিকে জটিল করার চেষ্টা চলছে। তবে আমরা কখনই অ-আমেরিকান কর্মতত্পরতাকে প্রশ্রয় দেব না।’

সর্বশেষ খবর