শিরোনাম
শনিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

সংস্কারপন্থিদের কাছে টানছেন খালেদা

সবাইকে নিয়ে বিএনপির নির্বাচন প্রস্তুতি

মাহমুদ আজহার

সংস্কারপন্থিদের কাছে টানছেন খালেদা

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলের বাইরে থাকা সংস্কারপন্থিদেরও কাছে টানছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। নির্বাচনের আগে দলকে একটি প্লাটফর্মে দাঁড় করাতে চান তিনি। নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার দাবিতে ফের রাজপথেও নামতে চান বিএনপি প্রধান। এ কারণেই সাংগঠনিক ঐক্যের প্রতি জোর দিয়েছেন তিনি। সংশ্লিষ্টদের বেগম জিয়া বলেছেন, দেশে এখন জাতীয় সংকট চলছে। এ মুহূর্তে ভেদাভেদ কোনোভাবেই কাম্য নয়।  এরই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার রাতে ‘কথিত’ সংস্কারপন্থি নেতা ও দলের সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক জহির উদ্দিন স্বপন ও সাবেক সংসদ সদস্য সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুলকে ডেকে পাঠান বিএনপি প্রধান। অতীত কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চান তারা এবং তাদের দলে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেন বেগম জিয়া। জানা যায়, এখনো প্রায় অর্ধশত সাবেক এমপি ও নেতা  সংস্কারপন্থি অভিযোগে বিএনপির বাইরে রয়েছেন। দু-একজন বাদে দলের বাইরে থাকা সব নেতাকেই পর্যায়ক্রমে দলে নেওয়া হবে। সাংগঠনিক দায়িত্বও পাবেন কেউ কেউ। জনপ্রিয়তাভেদে আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগও পাবেন কয়েকজন। এ নিয়ে বিএনপির কয়েকজন নেতা কাজ করে যাচ্ছেন। তবে সর্বশেষ ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল-পরবর্তী কমিটিতেও সংস্কারপন্থি ওই নেতাদের ঠাঁই হয়নি। এখন বেশ কয়েকটি শূন্যপদসহ বিষয়ভিত্তিক কমিটিতে এই নেতাদের জায়গা করে দেওয়ার কথা ভাবছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে বেগম জিয়া একাধিকবার বলেছেন, ‘এ মুহূর্তে দলে আর কোনো ভেদাভেদ দেখতে চাই না। সব  ভেদাভেদ ভুলে দলের তৃণমূল  থেকে  কেন্দ্র পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই। নির্বাচনের আগে দলকে সুসংহত করতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’ জানা যায়, এরই অংশ হিসেবে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন নেতা সংস্কারপন্থিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে গুলশানে  চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন জহির উদ্দিন স্বপন এবং সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল। খালেদা জিয়া তাদের দুজনের সঙ্গে প্রায় আধাঘণ্টা কথা বলেন। এ সময় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহানও উপস্থিত ছিলেন। পর্যায়ক্রমে সব নেতাকেই ডেকে পাঠানোর নির্দেশনা দেন খালেদা জিয়া।

দশ বছর পর বিএনপি প্রধানের সঙ্গে সরাসরি দেখা-সাক্ষাৎ করে জহির উদ্দিন স্বপন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, আমরা চেয়ারপারসনের কাছে কৃতজ্ঞ। তিনি আমাদের মাতৃস্নেহ দিয়েছেন। আমরাও অতীতের অনাকাঙ্ক্ষিত ভূমিকার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছি। লজ্জিতও হয়েছি। তিনি আমাদের দলে সক্রিয় হতে বলেছেন। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে বলেছেন। দেশে এখন জাতীয় সংকট চলছে। তাই ঐকমত্যের কোনো বিকল্প নেই।

সংস্কারপন্থি অভিযোগে বিএনপির বাইরে থাকা সাবেক এমপি ও নেতার মধ্যে রয়েছেন— চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা  মেজর  জেনারেল  জেড এ খান (অব.), সাবেক সচিব মোফাজ্জল করিম, সাবেক যুগ্ম-মহাসচিব আশরাফ  হোসেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীর, আনোয়ার তালুকদার, শাহ মোহাম্মদ আবুল হোসাইন, সাবেক হুইপ ও পিরোজপুর জেলার সাবেক সভাপতি সৈয়দ শহীদুল হক জামাল, সাবেক দফতর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, সাবেক এমপি ও সুনামগঞ্জ জেলার সাবেক সভাপতি নজির  হোসেন, চাঁদপুর জেলার সাবেক সভাপতি এস এ সুলতান টিটু, সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার শহিদুজ্জামান, বরগুনার সাবেক  জেলা সভাপতি নূরুল ইসলাম মণি, সাবেক এমপি শামীম কায়সার লিঙ্কন, বগুড়ার সাবেক এমপি ডা. জিয়াউল হক মোল্লা ও জি এম সিরাজ, সাবেক এমপি এম এম শাহীন, সাবেক হুইপ খলিলুর রহমান, সাবেক এমপি আবদুল করীম আব্বাসী, সাবেক এমপি শাম্মী শের, সাবেক এমপি আবদুল গনি, সাবেক এমপি দেলোয়ার হোসেন দুলু, আতাউর রহমান খান আঙ্গুর, মনি স্বপন দেওয়ান, ডা. সালেক চৌধুরী, দিলদার হোসেন সেলিম, অধ্যাপক মো. ইউনূস, আবদুল মতিন, অ্যাডভোকেট আবু রেজা ফজলুল হক, আনোয়ারুল হোসেন খান  চৌধুরী, ডা. মো. সানাউল্লাহ, তাসমিন রানা, হোসনে আরা প্রমুখ। সংস্কারপন্থি হিসেবে না থাকলেও এবারও কমিটির বাইরে রয়েছেন বিএনপির সাবেক এমপি মেজর আখতারুজ্জামান (অব.) ও সাবেক এমপি আবু  হেনা। জানা যায়, আগামী সপ্তাহের যে কোনো দিন ডাকা হতে পারে মফিদুল হাসান তৃপ্তি, জিয়াউল হক জিয়া ও নজির হোসেনকে। এর মধ্যে তৃপ্তির বহিষ্কারাদেশও প্রত্যাহার করা হতে পারে। পর্যায়ক্রমে অন্য সব নেতাদেরও ডাকা হবে। বিগত ওয়ান-ইলেভেনের সময় খালেদা জিয়ার পক্ষে অবস্থান নেওয়া বর্তমানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। তবে এখন সংস্কারপন্থিদের দলে ফেরানোর উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘একজন অথবা দুজন করে নয়; অন্য সবাইকে একসঙ্গে নেওয়া উচিত। একই প্রক্রিয়ায় তাদের সবাইকে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেওয়া উচিত।  কারণ, যারা এখনো নিজেদের দলীয় কর্মকাণ্ডের বাইরে রেখেছেন তারাও একই অপরাধে অপরাধী। এরপর তাদের কর্মকাণ্ড দেখে কাকে কোথায় কী অবস্থায় রাখা হবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’ তবে সংস্কারপন্থিদের দলে ফেরানোর উদ্যোগে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেছেন অনেকেই। এ প্রসঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও বরিশাল উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আ ক ন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, ‘ওয়ান-ইলেভেনের প্রেতাত্মা আবারও সক্রিয় হয়েছে। আগের মতো এবারও জহির উদ্দিন স্বপনকে গৌরনদী ও আগৈলঝড়ায় ঢুকতে দেওয়া হবে না। যে কোনো মূল্যে তৃণমূল নেতারা ওই দুষ্টচক্রদের প্রতিহত করবে।’

সর্বশেষ খবর