শনিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

আট বছরেও শেষ হয়নি মামলার কার্যক্রম

ভয়াবহ সেই বিডিআর - হত্যাযজ্ঞের দিন আজ

আনিস রহমান ও আলী আজম

আট বছরেও শেষ হয়নি মামলার কার্যক্রম

আজ সেই দুঃসহ স্মৃতির ২৫ ফেব্রুয়ারি। আট বছর আগে ২০০৯ সালের এদিনে রাজধানীর অনেকেরই ঘুম ভাঙে গুলি ও বোমার বিকট শব্দে। প্রকম্পিত হয়ে ওঠে ঢাকা। দিনটি ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নিয়েছে কলঙ্কিত বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) বিদ্রোহ হিসেবে। ওই দিন ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জন নিহত হন বিপথগামী বিডিআর সদস্যদের হাতে। সেদিন পিলখানার এই বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশের ৫৭টি ইউনিটে। টানা একদিন এক রাত শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি মোকাবিলা করে ২৬ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণে আসে। বিদ্রোহের পর বিডিআর আইন, নাম, পোশাক, পতাকা ও মনোগ্রামসহ অনেক কিছুতেই পরিবর্তন আনা হয়।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারির ঘটনা শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বের ইতিহাসে এক সঙ্গে এত সেনা কর্মকর্তা হত্যার কোনো নজির নেই। ঘটনার সময় ৪ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে অবস্থিত পিলখানায় ৬ হাজার ৯০৩ জন বিডিআর সদস্য কর্মরত ছিলেন। তবে দরবারে উপস্থিত ছিলেন ৯৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ২ হাজার ৪৮৩ জন। পিলখানা বিদ্রোহের ঘটনায় তিনটি মামলা হয়। এর মধ্যে বিডিআর বিদ্রোহ ও হত্যা মামলা নিষ্পত্তি হলেও অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলা এখনো চলছে। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর তৃতীয় দায়রা জজ আদালতে হত্যা মামলার রায় দেওয়া হয়। এ মামলায় ১৫২ জন আসামির ফাঁসি ও ১৫৯ জন আসামির যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়। গত ৮ বছরেও এ মামলার কার্যক্রম শেষ হয়নি। বর্তমানে ডেথ রেফারেন্স, আপিল ও জেল আপিলের ওপরে হাই কোর্টে শুনানি চলছে। বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় পিলখানা হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৫২ আসামির মৃত্যুদণ্ডের অনুমোদন ও আসামিদের আপিলের ওপর শুনানি ২ এপ্রিল পর্যন্ত মুলতবি করেছে হাই কোর্ট। রাষ্ট্রপক্ষ ?শুনানির জন?্য এক মাস সময়ের আবেদন করলে বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের হাই কোর্ট বেঞ্চ গত বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেয়। বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার। পিলখানা হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানির জন্য এই বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করা হয়। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ সারোয়ার কাজল বলেন, আদালত উভয় পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করতে বলেছিল। আসামিপক্ষের যুক্তিতর্কও প্রায় শেষ। ল পয়েন্টে যুক্তিতর্ক কিছু বাকি আছে, সেগুলো শেষ হলে রাষ্ট্রপক্ষে ল পয়েন্টে পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন করবেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। কিন্তু আগামী মাসে অ্যাটর্নি জেনারেল স্যারকে আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার প্রস্তুতি নিতে হবে। তাছাড়া ল পয়েন্টে যুক্তি উপস্থাপনে প্রস্তুতির জন্যও সময় প্রয়োজন। এ কারণে আদালতে আবেদন করলে ২ এপ্রিল পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করা হয়েছে। যুক্তিতর্ক শেষ হলে আদালত মামলার রায়ের তারিখ ধার্য করে দিতে পারে। জানা গেছে, ৩৫৯ কার্যদিবস ধরে এ মামলার কার্যক্রম চলছে। ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল নিয়ে ৩৫ হাজার পৃষ্ঠার পেপারবুক পাঠ করা হয়েছে ১২৪ কার্যদিবস। বাকি ২৩২ কার্যদিবস রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষ যুক্তি উপস্থাপন করেছে। গতকাল ৩৫৯তম দিনে এসে চূড়ান্ত শুনানির তারিখ পেছানো হলো দেশের ইতিহাসে আসামির সংখ্যার দিক দিয়ে সবচেয়ে বড় এ মামলার। পিলখানার ঘটনায় মোট তিনটি মামলা হয়। এর মধ্যে বিডিআর বিদ্রোহ ও হত্যা মামলা নিষ্পত্তি হলেও বিস্ফোরক দ্রব্য ও অস্ত্র মামলা নিম্ন আদালতে এখনো চলছে। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ঢাকার অস্থায়ী মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আকতারুজ্জামান এ হত্যা মামলার রায় দেন। এতে ১৫২ জনকে ফাঁসিসহ অন্য আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড দেওয়া হয়। ২৭১ জন খালাস পান। এই মামলাটি পরে ডেথ রেফারেন্স হিসেবে হাই কোর্টে আসে। এ ছাড়া আসামিরা আপিল ও জেল আপিলও করেন। হাই কোর্টে ডেথ রেফারেন্স, আপিল ও জেল আপিলের শুনানি একসঙ্গে হচ্ছে। অপরদিকে অস্ত্র ও বিস্ফোরক মামলার বিচারকাজ বিশেষ ট্রাইব্যুনালে চলছে। যার আসামি ৮৩৪ জন। এদের মধ্যে ৫ জন মারা গেছেন। বাকি ২০ জন এখনো পলাতক রয়েছেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ বলেন, বিডিয়ার বিদ্রোহের ঘটনায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলা ইতিমধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে। বিস্ফোরক মামলাটি ইতিমধ্যে নিষ্পত্তি হওয়ার কথা থাকলেও আসামিপক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তা হয়নি। আমরা আশাবাদী শিগগিরই এ মামলার বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।

বিজিবির কর্মসূচি : বেদনাবিধুর এ দিবসটি পালনের লক্ষ্যে পিলখানায় নিহতদের জন্য দোয়া, মিলাদ মাহফিল, কবরে ফুল দেওয়ার কর্মসূচি নিয়েছে বিজিবি। রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠনও নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। গতকাল বিজিবির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পিলখানায় সংঘটিত বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডে শহীদ ব্যক্তিদের স্মরণে আজ শাহাদাত বার্ষিকী পালিত হবে। দিনের কর্মসূচি অনুুযায়ী, শহীদদের রুহের মাগফিরাতের উদ্দেশে পিলখানাসহ বিজিবির সব রিজিয়ন, সেক্টর, প্রতিষ্ঠান ও ইউনিটের ব্যবস্থাপনায় বাদ ফজর খতমে কোরআন এবং বিজিবির সব মসজিদে এবং বিওপি পর্যায়ে শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় সকাল ৯টায় বনানী সামরিক কবরস্থানে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধান (সম্মিলিতভাবে), স্বরাষ্ট্র সচিব এবং বিজিবি মহাপরিচালক শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি বাদ আসর পিলখানায় বীর উত্তম ফজলুর রহমান খন্দকার মিলনায়তনে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

সর্বশেষ খবর