মঙ্গলবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো লোকসানে কেন

কারণ খুঁজে বের করার তাগিদ বিশ্বব্যাংকের

মানিক মুনতাসির

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর লাভ লোকসানের হিসাব জানতে চেয়েছে বিশ্বব্যাংক। শুধু তাই নয়, এসব ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণে প্রতি বছর বাজেট থেকে যে অর্থ দেওয়া হচ্ছে তারও বিরোধিতা করেছে সংস্থাটি। বিশ্বব্যাংক বলেছে, কী কারণে ব্যাংকগুলোর ৫ শতাধিক শাখা লোকসান গুনছে তা খুঁজে বের করতে হবে। আর অনিয়ম, দুর্নীতির কারণে সৃষ্ট মূলধন ঘাটতি পূরণে জনগণের করের টাকা দিয়ে তা পূরণ করা হচ্ছে, এর যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে সংস্থাটি। গত পাঁচ বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণে সরকার কত টাকা দিয়েছে এবং এসব ব্যাংকের কোন কোন শাখা দিনের পর দিন লোকসান গুনছে তার ফিরিস্তি জানতে চেয়েছে বিশ্বব্যাংক। সেই সঙ্গে লোকসানের পথ কীভাবে বন্ধ করা যায় সে ব্যাপারেও অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংককে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অর্থবিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পাশাপাশি বাড়ছে মূলধন ঘাটতির পরিমাণ। সেই সঙ্গে ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে বাড়ছে অনিয়মের অভিযোগ। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি বৃদ্ধির ক্রমধারা ব্যাংকিং খাতকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গত রবিবার এক প্রাক বাজেট আলোচনা শেষে তিনি বলেন, ব্যাংক খাতে কিছু সমস্যা রয়েছে। এজন্য আগামী বাজেটেই ব্যাংকিং খাত সংস্কার কমিশন গঠনের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। তার মতে অনিয়ম, দুর্নীতির কারণে পর্যাপ্ত মূলধন সংরক্ষণে ব্যর্থ হচ্ছে সরকারি ব্যাংকগুলো। ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে সরকারও প্রতি বছর শর্তসাপেক্ষে মূলধন ঘাটতি পূরণে টাকা দিচ্ছে। তারপরও অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে না। এজন্য সরকার এখন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। অর্থবিভাগ সূত্র জানায়, গত ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে প্রায় প্রতি অর্থবছরই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণে কমবেশি ৫ হাজার কোটি টাকা করে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এরপরও অবস্থার খুব একটা উন্নতি হয়নি। এজন্য মূলধন ঘাটতি পূরণ ছাড়া এ অর্থ অন্য কোনো খাতে ব্যবহার করা যাবে না বলে শর্ত দিয়েছিল অর্থবিভাগ। আর বাস্তবে গত পাঁচ বছরে এর প্রতিফলন কতটুকু হয়েছে তার একটা চিত্র চেয়েছে বিশ্বব্যাংক। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোর অটোমেশন এবং বিজনেস প্লান বাস্তবায়নের অগ্রগতি, বিশেষ করে পুঞ্জীভূত খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি বা হ্রাস ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে জানতে চেয়েছে অর্থবিভাগ। যার তথ্য সময়ে সময়ে বিশ্বব্যাংককেও পাঠাতে হবে বলে জানা গেছে। এদিকে এসব ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য চলতি অর্থবছরের বাজেটে ২ হাজার কোটি টাকা রাখা হয়েছে। গত অর্থবছরের মূল বাজেটে এ খাতে ৫ হাজার  কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও বছর শেষে ১ হাজার ৮০০ কোটি দেওয়া হয়। এর মধ্যে শুধু বেসিক ব্যাংককেই দেওয়া হয়েছিল ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। আর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মূলধন ঘাটতি মেটাতে দুই ধাপে ব্যাংকগুলোকে ৪ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা দিয়েছিল সরকার। এ ছাড়া এসব ব্যাংকের পাঁচ শতাধিক শাখা এখনো লোকসান গুনছে। অথচ একই বাজারে বেসরকারি ব্যাংকগুলো লাভজনক পর্যায়ে রয়েছে। ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মান উন্নয়নের পাশাপাশি কীভাবে আরও লাভজনক করা যায় সে ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর