শিরোনাম
সোমবার, ২০ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

টাইগারদের লঙ্কা জয়

শততম টেস্টে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ইতিহাস

মেজবাহ্-উল-হক

টাইগারদের লঙ্কা জয়

জয় নিশ্চিত করে মুশফিক-মিরাজদের উচ্ছ্বাস —এএফপি

‘এবার টেস্টে ক্রিকেট বিশ্বকে শক্ত বার্তা দিল বাংলাদেশ’— টাইগারদের জয় নিশ্চিত হওয়ার পর চিৎকার করে বললেন ধারাভাষ্যকার আতহার আলী খান! এরপর টিভি স্ক্রিনে যে দৃশ্যটি দেখা গেল, ধারাভাষ্যকারের কণ্ঠ ক্রিকেটপ্রেমীদের কানে যাওয়ার কথা নয়! বিজয়সূচক দ্বিতীয় রান নেওয়ার পর মেহেদী হাসান মিরাজকে জড়িয়ে ধরেন মুশফিকুর রহিম! টাইগার ক্যাপ্টেনের চোখের কোনায় চিকচিক করছিল আনন্দাশ্রু। ততক্ষণে ড্রেসিং রুমের সামনে অপেক্ষমাণ ক্রিকেটাররাও চিতার গতিতে দৌড়ে পৌঁছে গেছেন বাইশ গজে। মুশফিক-মিরাজকে ঘিরে মাঠের মধ্যেই শুরু হয় উৎসব!

ঐতিহাসিক শততম টেস্টে বিজয় বলে কথা! টেস্ট ক্রিকেটের ১৪০ বছরের ইতিহাসে এর আগে এমন ঘটনা ঘটেছিল মাত্র তিনবার—নিজেদের শততম টেস্টে জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তান। এবার চতুর্থ দল হিসেবে সেই মাইলফলক স্পর্শ করল বাংলাদেশ। টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম জয়। ৪ উইকেটে পাওয়া এই জয়ে গতকাল বিদেশের মাটিতে শক্ত প্রতিপক্ষকে হারানোর স্বপ্নও পূরণ হয়ে গেল টাইগারদের। এর আগে বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ের মাটিতে জয় পেলেও লঙ্কানদের বিরুদ্ধে জয়টিই সেরা। কেননা র‍্যাঙ্কিংয়ে ও শক্তিমত্তায় জিম্বাবুয়ে এখন বাংলাদেশের নিচে। আর ২০০৯ সালে বাংলাদেশ হারিয়েছিল খর্বশক্তির ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। কিন্তু গতকাল মুশফিকরা এমন দলকে হারিয়েছেন, যে দলটি কিনা মাস কয়েক আগেই ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার মতো শক্তিশালী দলকে সিরিজে ৩-০তে হোয়াইটওয়াশ করেছে। টেস্টে বাংলাদেশের নবম জয় এটি। অবিস্মরণীয় এই বিজয়গাথায় চির অম্লান হয়ে থাকবেন দুই বন্ধু সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার শততম টেস্টে সেঞ্চুরির পাশাপাশি শিকার করেছেন ৬ উইকেট। আর তামিম প্রথম ইনিংসে ৪৯ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে খেলেছেন ‘মহাকাব্যিক’ ৮২ রানের ইনিংস। টার্নিং উইকেটে চতুর্থ ইনিংসে পঞ্চম দিনে স্পিনারদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকাই বড় পরীক্ষা। সেখানে তামিম লড়াই করলেন বুক চিতিয়ে। অসাধারণ এই ইনিংসের পুরস্কার হিসেবেই ম্যাচসেরা হয়েছেন ড্যাশিং ওপেনার। তবে দুই টেস্ট মিলে ১৬২ রান ও ৯ উইকেট নিয়ে সিরিজ-সেরা হয়েছেন সাকিব। শততম ম্যাচে জয়ের ইঙ্গিতটা আগের দিনই পেয়েছিল বাংলাদেশ। মুস্তাফিজ-সাকিব অসাধারণ বোলিং করে স্বপ্নের পথটা তৈরি করেন। কিন্তু এর পরও ১৯২ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ২২ রানেই দুই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ভীষণ চাপে পড়ে যায় টাইগাররা। তবে পর পর দুই বলে সৌম্য সরকার ও ইমরুল কায়েসকে হারিয়ে টাইগারদের বিজয়াকাশে যে শঙ্কার কালো মেঘ জমতে শুরু করেছিল, তামিম-সাব্বির মিলে তা যেন ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছেন। তারা তৃতীয় উইকেটে ১০৯ রানের জুটি করে বাংলাদেশকে গড়ে দিয়েছেন জয়ের ভিত। ভাগ্যবিধাতা যখন মুখ ফিরে তাকায় তখন যেন ‘ভুল’ থেকেও সাফল্যের বইয়ে যোগ হয় মহাপ্রাপ্তির অধ্যায়! গতকাল ফিল্ডিংয়ের সময় শুভাশিস রায়ের ভুলটির কথা ভাবুন। শর্ট স্কোয়ার লেগে ফিল্ডিং মিস করায় রান নেওয়ার জন্য দৌড় শুরু করলেন দুই লঙ্কান ব্যাটসম্যান দিলরুয়ান পেরেরা ও সুরঙ্গা লাকমল। হতাশ হয়ে দ্বিতীয় দফায় বল কুড়িয়ে থ্রো করলেন শুভাশিস। বল ধরে সঙ্গে সঙ্গে উইকেট ভেঙে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ—পেরেরা রান আউট! ভেঙে যায় ৮০ রানের জুটি। শুভাশিসের সেই ভুলেই ম্যাচে ফিরে আসে বাংলাদেশ। যদিও কালকের ম্যাচে দুর্ভাগ্যের শিকার হয়েছে বাংলাদেশও! সাকিবের আউটটির কথা চিন্তা করুন! জয় থেকে মাত্র ২৯ রান দূরে যখন বাংলাদেশ, তখন সাকিবের ব্যাটে লেগে বল স্ট্যাম্পকে চুমু দিয়ে চলে যায়। বেশ কয়েক সেকেন্ড পর পড়ে যায় বেল। তবে সাকিবের আউটও বাংলাদেশের জয়ে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। ম্যাচে একটুখানি রোমাঞ্চ এনে দিয়েছিল এই যা। শততম ম্যাচে আম্পায়াররাও যেন হয়ে গিয়েছিলেন টাইগারদের প্রতিপক্ষ! আগের দিন মাথা ঝুঁকিয়েও আউট না দিয়ে রহস্য করেছিলেন পাকিস্তানি আম্পায়ার আলিমদার। গতকাল মহাগুরুত্বপূর্ণ সময়ে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিকের বিরুদ্ধে হাস্যকর এক আউটের সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন আরেক আম্পায়ার সুন্দরম রবি। অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল প্যাড এগিয়ে দিয়ে ডিফেন্স করেন টাইগার দলপতি। বাংলাদেশকে বিপাকে ফেলতে যেন ইচ্ছা করেই সঙ্গে সঙ্গে আঙ্গুল উঁচিয়ে ধরেন ভারতীয় আম্পায়ার! রিভিউ নিয়ে নিজেকে রক্ষা করেন মুশফিক। যেখানে ইতিহাস হাতছানি দিয়ে টাইগারদের ডাকছে, সেখানে দু-একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত কি আর বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে! পারেনি। বরং ছোট ছোট ত্যক্ত-বিতর্কিত ঘটনা শততম টেস্টে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয়কে আরও মহিমান্বিত করেছে। এমন জয়ে ক্রিকেট বিশ্বকে অবাক করে দিয়েছেন মুশফিকরা। শাবাশ টিম টাইগার্স! জয়তু বাংলাদেশ!

মুশফিক ও সাকিবকে প্রধানমন্ত্রীর ফোন : শততম টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে বিজয়ী হওয়ায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গভবন প্রেস উইং জানায়, শততম টেস্টে ঐতিহাসিক বিজয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সব খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। ঐতিহাসিক ৭ মার্চে শুরু হওয়া এই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সিরিজের নাম ‘জয় বাংলা কাপ’। যার দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে দ্বিতীয়টিতে চার উইকেটের জয়ে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সমতা নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। ম্যাচ শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেলিফোনে কথা বলেছেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ও ম্যান অব দ্য সিরিজ সাকিব আল হাসানের সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানিয়েছেন, ম্যাচ শেষ হওয়ার পরই ক্রিকেটারদের অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

 প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের সদস্যদের জন্য দোয়া করে বলেন, ‘তোমরা ইতিহাস সৃষ্টি করেছ, তোমাদের প্রাণঢালা অভিনন্দন জানাচ্ছি।’ জয় বাংলা বলে কথা শেষ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়াও অভিন্দন জানান, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, শান্তিতে নোবেলজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস, জাপা মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব এম এ আউয়াল এমপি, জাতীয় প্রেস ক্লাব, দাতাসংস্থা বিশ্বব্যাংক, ন্যাশনাল, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর