শনিবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

মোদির মধ্যাহ্নভোজে শুধুই হাসিনা-মমতা

প্রধানমন্ত্রী দিল্লিতে, শীর্ষ বৈঠক আজ, ২০ চুক্তি ও ১৫ সমঝোতা স্বাক্ষরের সম্ভাবনা

জুলকার নাইন ও রফিকুল ইসলাম রনি, নয়াদিল্লি থেকে

মোদির মধ্যাহ্নভোজে শুধুই হাসিনা-মমতা

দিল্লি বিমানবন্দরে গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি —এএফপি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারি বাসভবন হায়দরাবাদ হাউসে আয়োজিত আজকের মধ্যাহ্নভোজে থাকছেন শুধুমাত্র তিনজন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে আয়োজিত এ ভোজসভায় থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। মমতার পাশাপাশি আরও কয়েকজন মুখ্যমন্ত্রীকে নয়াদিল্লিতে ডাকা হলেও এ ভোজে তাদের কাউকে রাখা হচ্ছে না। আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বাংলাদেশ বা ভারতের কোনো মন্ত্রীকেও।

নয়াদিল্লির কূটনৈতিক সূত্র জানায়, মধ্যাহ্নভোজের বৈঠকে কূটনৈতিক প্রটোকলের বাইরেও তিস্তা জট নিয়ে আলোচনা করবেন মোদি-হাসিনা-মমতা। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির নৈশভোজেও মমতা থাকছেন। সেখানে রাষ্ট্রপতি প্রণব কথা বলবেন শেখ হাসিনা ও মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে। এর বাইরে পৃথক কোনো বৈঠক হবে কিনা তা এখনো নিশ্চিত নন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব শ্রীপ্রিয়া রঙ্গনাথন। তিনি বলেন, এ সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই। অফিসিয়াল কোনো সিডিউলও নেই। তবে আজ মোদি, হাসিনা ও মমতা যৌথভাবে উদ্বোধন করবেন খুলনা থেকে কলকাতা সরাসরি বাস ও ট্রেন রুট, বিরুলি থেকে রাধিকাপুর ট্রেন রুটের মিসিং রুট সংযুক্ত হবে। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ২০টি চুক্তি সম্পন্ন হবে। পাশাপাশি ১৫টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করবে দুই দেশ। এ ছাড়া বাংলাদেশকে পাঁচ বিলিয়ন ঋণ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ভারতের। তবে নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী বলেছেন, আরও চমক আছে। এ জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, দুই সরকারপ্রধান রাজি থাকলে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি অসম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রীর এ সফর দুই দেশের মধ্যে নতুন মাত্রা যোগ করবে। বিগত দিনে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এগিয়ে গেছে। এবার আরও এগিয়ে যাবে। ভারতের পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে বেসামরিক পরমাণু শক্তি সহায়তাবিষয়ক আন্তসরকার চুক্তি হবে। নিরাপত্তা, সহযোগিতা, সক্ষমতা সৃষ্টিসহ সব বিষয় থাকবে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্লান্ট বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো কিছু নেই। এটি একটি রূপরেখা চুক্তি। বাংলাদেশ চাইলে ভারত সহযোগিতা করবে। এ ছাড়া শেখ হাসিনার সফরে দুই দেশের তেল ও গ্যাস খাতে নতুন সহযোগিতা, টেকসই অগ্রগতি হবে। ভারত থেকে হাইস্পিড ডিজেল বাংলাদেশে সরবরাহের জন্য দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি চূড়ান্ত করা হচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশে, বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে সাশ্রয়ী খরচে ডিজেল পাওয়া সম্ভব হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের জন্য উন্নয়ন সহযোগিতার সুনির্দিষ্ট ঘোষণা আসবে। বাংলাদেশের অনুরোধে বাংলাদেশের জুডিশিয়াল কর্মকর্তাদের ট্রেনিংয়ের সুযোগ দেবে ভারত। অবকাঠামো উন্নয়নে ভারতের ঋণ এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্যের মতো সামাজিক খাতেও সহযোগিতা জোরালো হবে। উগ্রবাদ ও সন্ত্রাস দমনে দুই দেশের মধ্যে চমৎকার সহযোগিতা বিদ্যমান থাকার ঘোষণা আজ দেওয়া হতে পারে। কর্মকর্তারা জানান, গত জুলাই মাসে ঢাকায় হলি আর্টিজানে হামলার পর থেকে আগেই যাতে এ ধরনের হামলা ঠেকানো যায় সে জন্য নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর মধ্যে পারস্পরিক তথ্য বিনিময়ের বিষয়ে একমত হয় দুই দেশ। এখন সেই সহযোগিতা ইতিবাচক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হবে। এর পাশাপাশি সাইবার নিরাপত্তা খাতে সহযোগিতা শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে। আজ তা স্বাক্ষর হতে পারে। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, যৌথ ঘোষণায় দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্য আরও অন্তত পাঁচ-সাত বছরের পরিকল্পনা নেওয়া হতে পারে। দুই দেশের রাজনৈতিক অবস্থান বিবেচনায় নিয়ে এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে একমত হয়েছে দুই পক্ষ। এ ছাড়া আজকের শীর্ষ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরে ভুটানে বাংলাদেশ, ভারত ও ভুটানের যৌথ উদ্যোগে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প গ্রহণ এবং সেখানে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ভারতের ওপর দিয়ে বাংলাদেশের গ্রিডে যুক্ত করার বিষয়ে অগ্রগতি হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গতকাল নয়াদিল্লির বিমানবন্দরে প্রটোকল ভেঙে লালগালিচা সংবর্ধনা দিতে উপস্থিত হয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। ফুল দিয়ে সংবর্ধনা জানানোর পাশাপাশি শেখ হাসিনাকে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে যান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পরে সেখান থেকে সরাসরি সফরসঙ্গীদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলে যান ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে। সেখানেই তার সঙ্গে বিকালে সাক্ষাৎ করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। সন্ধ্যায় নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাটান প্রধানমন্ত্রী। সফরসূচি অনুসারে, আজ সকাল ৯টায় রাষ্ট্রপতি ভবনের ‘ফোর কোর্টে’ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া হবে গার্ড অব অনার। এ সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পাশে থাকবেন। সেখান থেকে রাজঘাটে যাবেন শেখ হাসিনা। ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন এম কে গান্ধীর সমাধিতে। সেখান থেকে সরাসরি চলে যাবেন হায়দরাবাদ হাউসে। দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শুরু হবে সেখানেই। বৈঠকের আগে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীরা একান্তে আলাপ করবেন। আর বৈঠক শেষে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীর হিন্দি অনুবাদের মোড়ক উন্মোচন করবেন হাসিনা-মোদি। স্বাক্ষর হবে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক। এরপরই যৌথ ঘোষণা দেবেন তারা।  বিকাল সাড়ে ৩টায় দিল্লি ক্যান্টনমেন্টে মানেকশ সেন্টারে শেখ হাসিনা ’৭১-এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ভারতীয় যোদ্ধাদের স্বজনদের হাতে সিলভার ক্রেস্ট তুলে দেবেন। নরেন্দ্র মোদিও উপস্থিত থাকবেন সে সময়। এ অনুষ্ঠান শেষে সন্ধ্যায় মওলানা আবুল কালাম আজাদ রোডে ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি  মোহাম্মাদ  হামিদ আনসারীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তারপর ভারতের কংগ্রেসপ্রধান সোনিয়া গান্ধী রাষ্ট্রপতি ভবনে আসবেন শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে। আগামীকাল সকাল ৯টায় এয়ার ইন্ডিয়ার বিশেষ ফ্লাইটে জয়পুর যাবেন শেখ হাসিনা। সেখান থেকে হেলিকপ্টারে আজমীর শরীফে গিয়ে হযরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতির (রহ.) মাজার জিয়ারত করবেন তিনি। সেখান থেকে ফিরে বিকালে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন শেখ হাসিনা। সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করবেন। রাতে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির দেওয়া নৈশভোজে অংশ নেবেন শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রীরা। নরেন্দ্র মোদিও উপস্থিত থাকবেন সেখানে। সফরের শেষ দিন ১০ এপ্রিল সকালে দিল্লির তাজ প্যালেস হোটেলে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে ব্যবসায়ীদের কথাও শুনবেন তিনি। তারপর রাষ্ট্রপতি ভবনে দুপুরের খাবার শেষে বিশ্রাম নেবেন। বিকালে ভারত সফরের সমাপ্তি টেনে দেশে ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সর্বশেষ খবর