শিরোনাম
শুক্রবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা
পোর্ট এক্সপো উদ্বোধন

ন্ধব বন্দর গড়ে তোলাই আমার লক্ষ্য

প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যে কোনো দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য বন্দর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশ একদিকে যেমন নদীমাতৃক অন্যদিকে রয়েছে বিশাল সমুদ্র। কাজেই এই সমুদ্রকে ব্যবহার করা এবং এর মাধ্যমেই আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন আরও কার্যকর করার বিরাট সুযোগ আমাদের হাতে রয়েছে। আমরা যোগাযোগ ব্যবস্থা আঞ্চলিকভাবে গড়ে তুলেছি। আমাদের যে প্রতিবেশী দেশগুলো আছে তাদেরও এই বন্দর ব্যবহারের সুযোগ আছে। আমাদের অর্থনৈতিক উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ভারত, নেপাল ও ভুটান-এই দেশগুলো যাতে বন্দর ব্যবহার করতে পারে আমরা সে সুযোগ করে দিচ্ছি। গতকাল দুপুরে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত পোর্ট এক্সপো উদ্বোধন করে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভৌগোলিক অবস্থান থেকে আমাদের অবস্থান এমন একটা জায়গায়— এই জায়গায় থেকে বাংলাদেশ হচ্ছে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সেতুবন্ধন। বন্দরকে আরও আধুনিক করার জন্য অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি। শ্রমিকদের কল্যাণে সব ব্যাপারে আমাদের দৃষ্টি রয়েছে। বন্দরের  কার্য সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আজকের উদ্যোগের মধ্য দিয়ে বন্দরের সুনাম ব্যাপকভাবে প্রচারিত হবে। বন্দরের সুনাম যেন অক্ষত থাকে, সেদিকে সব সময় দৃষ্টি দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যোগাযোগের জন্য কর্ণফুলী নদীর নিচ দিয়ে টানেল হচ্ছে, রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ করে দিয়ে বন্দর যেন আরও উন্নত হয় সে ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি। আমরা চাই বন্দরটা যাতে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয় সে জন্য সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করবেন। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সবার কল্যাণের জন্য কাজ করবেন, সেটাই আমি চাই। 

১৯৭১ সালে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে জাহাজে করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে অস্ত্র আনার প্রসঙ্গটি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিভিন্ন জাহাজে করে অস্ত্র নিয়ে আসছিল। বন্দরের শ্রমিকরা এতে বাধা দেয়। তখন পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে প্রায় ২৩ জন শ্রমিক প্রাণ দিয়েছিলেন। ওই সোয়াত জাহাজ থেকেই অস্ত্র নামাতে যান জিয়াউর রহমান। তাকে পথেই বাধা দিয়েছিল সাধারণ জনগণ, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী এবং সংগ্রাম পরিষদের নেতারা, যারা প্রতিরোধ গড়ে তুলে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর স্বাধীনতার পর ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থায় মাইন পোতা ছিল। মিত্রশক্তি রাশিয়া এসে এই বন্দরকে মাইনমুক্ত করে দেয়। নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম খালেদ ইকবাল বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীসহ চট্টগ্রাম বন্দর এবং গণভবনে সংসদ সদস্য, ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 

বিচ্ছিন্ন সব এলাকা ডিজিটালাইজড করা হবে : দেশের বিচ্ছিন্ন সব এলাকায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অবকাঠামো তৈরি করে ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে ‘ডিজিটাল আইল্যান্ড মহেশখালী’ প্রকল্পের উদ্বোধন করে তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা প্রায় কার্যকর করে ফেলেছি। এখন এর আরও উন্নয়ন করতে হবে। দেশের বিচ্ছিন্ন এলাকাগুলো ডিজিটাল করে দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই যে একটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মহেশখালী, যা চিরদিন অবহেলিত ছিল, আজকে এই ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে এবং বিশ্বব্যাপী এই মহেশখালীর একটি সংযোগ স্থাপিত হয়ে গেল। এই দ্বীপে বসে এখন বিশ্বটা হাতের মুঠোয় চলে আসবে। আমাদের এই অঞ্চলটা বিশাল সম্পদের ভাণ্ডার। কিন্তু আমরা তা কাজে লাগাতে পারিনি। তিনি বলেন, এই যে সুযোগটা আজকে সৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে এটা শুধু মহেশখালী নয়, আরও যেসব বিচ্ছিন্ন এলাকা আছে সেখানেও আমরা এই ডিজিটাল পদ্ধতিটা চালু করে দেব। সেটাও আমাদের পরিকল্পনায় রয়েছে। আর মহাশূন্যে আমরা যে স্যাটেলাইট উেক্ষপণ করব (বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট) সেটা উেক্ষপণ হয়ে গেলে আরও সুবিধা হবে। 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কোরিয়া থেকে ভিডিও কনফারেন্সে কোরিয়া টেলিকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যান চ্যাং গিউ হোয়াং এবং মহেশখালী থেকে আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও বাংলাদেশে আইওএমের মিশন প্রধান শরত্চন্দ্র দাস বক্তব্য রাখেন। এর আগে ডিজিটাল মহেশখালীর ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। মহেশখালীর বার্মিজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা রশীদা বেগম এবং স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের চিকিৎসক সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরীসহ চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীর সঙ্গেও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, বাংলাদেশে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত আন সিওন দো এবং মহেশখালীতে বাংলাদেশে আইওএম কর্মকর্তা পেপ্পি সিদ্দিক উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক কবির বিন আনোয়ার ভিডিও কনফারেন্স সঞ্চালনা করেন।

সর্বশেষ খবর