শুক্রবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

দেশে গণতন্ত্র নেই বললেই চলে

মাহমুদ আজহার

দেশে গণতন্ত্র নেই বললেই চলে

বিচারপতি টি এইচ খান

বিচারপতি টি এইচ খান বলেছেন, ‘দেশে এখন গণতন্ত্র নেই বললেই চলে। অরাজকতা, অনাচার ও বিশৃঙ্খলা বেড়েই চলেছে। আমার মনে হয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিচার বিভাগে ক্রমশই স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ কমে আসছে। তারপরও আমি দেশের তরুণদের নিয়ে আশাবাদী। আশা করছি, তারা তাদের মেধা-মনন দিয়ে দেশের পরিস্থিতি উত্তরণে কাজ করে যাবে। দেশের নেতৃত্ব দেবে। দেশ আরও অনেক বেশি শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ হবে। এর মধ্যে অনেক সময় নষ্ট হয়ে গেছে। স্বাধীনতার ৪৬ বছর পার  হয়ে গেছে। এখন সুশাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি। জনসেবার মনোভাব নিয়ে সবাইকে দেশের জন্য কাজ করতে হবে।’ বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ। বিচারপতি টি এইচ খান ৯৭ ছুঁই ছুঁই। এখনো সক্রিয় আইন পেশায়। আলোচিত সব মামলায় লড়ে যাচ্ছেন সদর্পে। তবে তিনি দেশের চলমান রাজনীতি নিয়ে হতাশ। এ নিয়ে কথা বলতে চান না। এই বয়সেও টিভির সামনে বসে ক্রিকেট ও ফুটবল খেলা দেখেন। ক্রিকেট তার দারুণ পছন্দের খেলা। টিভি দেখে আর পত্রিকা পড়ে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির খোঁজখবর নেন। বিএনপির এক নম্বর ভাইস চেয়ারম্যান তিনি। তবে খুব কমই দেখা যায় দলের কর্মকাণ্ডে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে সবচেয়ে প্রবীণ আইনজীবী টি এইচ খান এখনো জটিল মামলা নিয়ে আইন পেশায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে লড়ছেন। বয়োবৃদ্ধ হওয়ার কারণে শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি কিছুটা কমলেও বড় ধরনের কোনো অসুখ নেই তার। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে এখনো নিয়মিত প্র্যাকটিস করছেন। টি এইচ খানের বড় ছেলে অ্যাডভোকেট আফজাল এইচ খান জানান, বাবা রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চান না। তবে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বিব্রত, বিচলিত ও অনেকাংশে হতাশ। বাবা প্রায়ই বলেন, দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো আরও সুদৃঢ় হওয়া জরুরি। বিচার বিভাগ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, প্রশাসনসহ সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। চলমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন বাবা। সব সময় তিনি বলেন, ‘ব্যক্তির চেয়ে দেশ বড়।’  রাজধানীর মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের বাসায় থাকেন প্রবীণ এই আইনজীবী। ২০১১ সালের ১৭ মে টি এইচ খানের সহধর্মিণী বেগম রওশন আরা জোবায়দা খানম ইন্তেকাল করেন। হাঁটুতে দুর্বলতার কারণে প্রবীণ এই আইনজীবীর কারও সহায়তায় চলাফেরা করতে হয়। বাসায় নিজে নিজেই ওয়াকার দিয়ে চলাচল করেন। তিন ছেলে আফজাল এইচ খান, ফজলে এলাহী খান ও ফয়সাল এইচ খান। আফজাল এইচ খান আর ফয়সাল এইচ খান আইন পেশায় নিযুক্ত। ফজলে এলাহী খান অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। একমাত্র মেয়ে ডা. মাহমুদা ফাতেমা খান রাজধানীর হলি ফ্যামিলিতে চিকিৎপা পেশায় নিযুক্ত। ১৯৬৯ সালের মার্চে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের হাই কোর্টে বিচারপতি নিযুক্ত হন টি এইচ খান। এর আগে তিনি পূর্ব পাকিস্তানে ‘সিনিয়র গভর্নমেন্ট প্লিডার’ অ্যাডভোকেট জেনারেলের (বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেল) দায়িত্ব পালন করেন। ’৭৩ সালে ফের আইন পেশায় ফিরে যান। একাধিকবার তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি ছিলেন। ’৭৯ সালে তিনি জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একাধারে তিনি  আইন ও বিচার, শিক্ষা, ভূমি, প্রশাসন, তথ্য ও বেতার, ধর্ম, যুব ও ক্রীড়া এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন প্রবীণ এই আইনজীবী। ১৯৯৫ সালে জাতিসংঘের অধীনে আফ্রিকার রোয়ান্ডার গণহত্যার বিচারের জন্য গঠিত ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল ট্রাইব্যুনালে (আইএসটিআর) ৫ বছর বিচারপতি ছিলেন। ২০০১ সালে সেখান থেকে ফিরে তিনি ফের আইন পেশায় যুক্ত হন। আন্তর্জাতিক আদালতে এশিয়া মহাদেশের টি এইচ খানই একমাত্র বিচারপতি। ময়মনসিংহের ফুলপুর হাইস্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন এবং আনন্দ মোহন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েড পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনশাস্ত্রে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নেন। একই সঙ্গে আইন বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান লাভ করেন। বেশ কিছুদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ কলেজে অধ্যাপনাও করেন সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ এই আইনজীবী।

 

সর্বশেষ খবর