সোমবার, ১ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

হাওরে বাঁধ নির্মাণে গাফিলতি পেলে ব্যবস্থা : প্রধানমন্ত্রী

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

হাওরে বাঁধ নির্মাণে গাফিলতি পেলে ব্যবস্থা : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় হাওরে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন —বাংলাদেশ প্রতিদিন

বন্যায় ব্যাপক ফসলহানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হাওর এলাকা পরিদর্শন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে এক সমাবেশে তিনি বলেন,  হাওরের একটি লোককেও না খেয়ে মরতে দেওয়া হবে না। বোরো ফসল রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঁধ নির্মাণে কারও গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বন্যায় ফসলহানির সুযোগে কেউ খাদ্যশস্যের দাম বাড়িয়ে দিলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেন প্রধানমন্ত্রী।

গতকাল সকালে শাল্লা উপজেলা সদরের শাহেদ আলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন তিনি। পরে স্পিডবোটে ক্ষতিগ্রস্ত হাওর পরিদর্শন করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। হাওরের ফসলের ক্ষতি হলেও দেশের খাদ্যের ওপর প্রভাব পড়বে না। যত খাবার লাগবে, আমরা দিতে পারব। প্রয়োজনে আমদানি করব। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য আমরা বিনামূল্যে যে খাদ্য বিতরণ চালু করেছি তা আকাল দূর না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। চৈত্র মাসের মাঝামাঝি এসে বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনাসহ ছয় জেলার হাওরাঞ্চলে বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যায় আধাপাকা বোরো ধান। এতে লাখ লাখ বোরো চাষি মহাবিপাকে পড়েন। সুনামগঞ্জে এবার প্রায় সোয়া দুই লাখ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয় বোরা ধান। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, হাওরাঞ্চলের ছয় জেলায় মোট দুই লাখ ১৯ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় আট লাখ ৫০ হাজার ৮৮টি পরিবার। সুনামগঞ্জ, সিলেট, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের দুই হাজার ৮৬০টি বাড়ি সম্পূর্ণ এবং ১৫ হাজার ৩৪৫টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ছয় জেলায় মোট ২১৩ দশমিক ৯৫ মেট্রিক টন মত্স্য সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। সুনামগঞ্জে তিন হাজার ৯০২টি হাঁস ও চারটি মহিষ মারা গেছে। সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, হাওরে গো-খাদ্যের অভাব রয়েছে। তাও দেওয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্ত হাওরের ইউনিয়ন পর্যায় পর্যাপ্ত ওএমএস ডিলার নিয়োগ দিতে খাদ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের নগদ সহায়তা এবং আগামী মৌসুমের জন্য বিনামূল্যে বীজ ও সার দেওয়া হবে। মত্স্যজীবী ও কৃষকদের ঋণের সুদের হার অর্ধেক করা হবে। মাছের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পানি একটু নামলেই এখানে মাছের পোনা ছেড়ে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, হাওরের বন্যাকবলিত এলাকায় বিতরণের জন্য তিন হাজার ৫২৪ মেট্রিক টন চাল এবং নগদ ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রতি পরিবারকে মাসে ৫০০ টাকা অর্থ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। শাল্লার সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী হাওরে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর ঋণের কিস্তি আদায় স্থগিত ও সুদ মওকুফের আহ্বান জানান। হাওরে কী ধরনের বাঁধ দেওয়া যায়, আদৌ বাঁধ লাগবে কিনা, দিলে পরে আবার প্রাকৃতিক পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে কিনা— এসব বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখার কথাও বলেন তিনি। হাওরে বিকল্প আয়ের উৎস বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাওর এলাকার মানুষকে শুধু ফসলের ওপর নির্ভরশীল না থেকে মাছ, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি পালন বাড়াতে হবে। হাওরের খালগুলো যেন বেশি পানি নিষ্কাশন করতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। হাওরকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। হাওরের সম্ভাবনাকেও কাজে লাগাতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সিলেট বিভাগের সব জেলায় ভূমিহীনদের বিনা পয়সায় ঘর তুলে দেওয়া হবে। কেউ ভূমিহীন থাকবে না। কেউ ভিক্ষা করতে পারবে না। যা যা মানুষের প্রয়োজন সব আমরা দেব। সবাই যাতে সম্মানের সঙ্গে থাকতে পারেন তা আমরা করব। হাওর এলাকায় শিক্ষার উন্নয়নে আবাসিক স্কুল করব। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর