সোমবার, ২২ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভোটের অপেক্ষায় মানুষ অস্থির

মাহমুদ আজহার

ভোটের অপেক্ষায় মানুষ অস্থির

আন্দালিব রহমান পার্থ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘণ্টা অনেকটা আগেই বেজেছে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ। তিনি বলেন, ‘অতীতে নির্বাচনী ঘণ্টা এত আগে বাজেনি। ২০১৪ সালে একটি রাবার স্ট্যাম্প পার্লামেন্ট হয়েছে। জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। তাই বাংলাদেশের মানুষ এখন অস্থির হয়ে আছে ভোটের অপেক্ষায়। আমাদের জোটগত অবস্থান থেকেও মানুষ একটি ইতিবাচক আভাস পেয়েছে যে, আমরাও নির্বাচনমুখী।’

বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এ মন্তব্য করেন বিজেপি-প্রধান। ব্যারিস্টার পার্থ বলেন, ‘নির্বাচনের ব্যাপারে আমরা ইতিবাচক। তবে তা সহায়ক সরকারের অধীনেই হতে হবে। দলীয় সরকারের অধীনে বিএনপি জোট নির্বাচনে বিগত সময়ে যায়নি, আগামীতেও যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে নির্বাচনের মূল প্রক্রিয়া আরও পরে শুরু হবে। এখন সব দলই নিজেদের মতো করে কথা বলছে। এক দল বলছে একচুলও নড়ব না। আরেক দল বলছে একবিন্দুও ছাড় দেব না। গত নির্বাচনেও আমরা দেখেছি, চুল অনেক নড়ে গেছে। প্রথমে আওয়ামী লীগ বলেছে কোনো ছাড় নয়। এক পর্যায়ে দলটি জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের প্রস্তাবও দিয়েছিল।’ তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে এখন সবাই নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করছে। দল গোছাচ্ছে। আমিও গত পাঁচ দিন সংসদীয় এলাকায় গিয়ে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের ঐক্যবদ্ধ করছি। যদিও নির্বাচনের এখনো অনেক সময় বাকি। সাধারণ মানুষের দাবিগুলো সামনে আসবে। আমরা আমাদের দাবি তুলে ধরব। সরকার তার অবস্থান তুলে ধরবে। সবারই শক্তি পরীক্ষা হবে। এরপর এমন একটি পরিস্থিতি আসবে, যাতে চূড়ান্ত নেগোসিয়েশন হবে। আশা করি, ওই সময়ই নির্বাচনের দ্বার সবার জন্য উন্মুক্ত হবে।’ আন্দালিব রহমান পার্থের মতে, ‘অতীতে বাংলাদেশে কখনই কোনো নির্বাচন শতভাগ ফেয়ার হয়নি। অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছ নির্বাচন হয়েছে। তবে আমরা আগামীতে এমন নির্বাচন করতে চাই না, যার স্বচ্ছতা বা অস্বচ্ছতা নির্ভর করবে আওয়ামী লীগের ওপর। ইচ্ছা হলো নারায়ণগঞ্জের মতো সুষ্ঠু হবে, আবার ইচ্ছা হলো উপজেলা-ইউনিয়নের মতো অস্বচ্ছ নির্বাচন হলো। আমরা চাই পদ্ধতিটা এমনভাবে গড়ে উঠুক, যাতে কেউই নির্বাচনের ওপর হস্তক্ষেপ করতে না পারে। জনগণও স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে।’ বিএনপির ভিশন-২০৩০ সস্পর্কে তিনি বলেন, ‘এটা বিএনপির ভিশন। এর নানা দিক রয়েছে। এটা বাস্তবায়নের বিষয়ও আছে। তবে এর অনেক ইতিবাচক দিক আছে। বিশেষ করে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের বিষয়ে আমিও একমত। যদিও ভিশনে বলা হয়েছে, তা ভবিষ্যতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হতে পারে। আমি বিশ্বাস করি, গত ২০-২৫ বছরে যে শ্রেণির লোকজন রাজনীতিতে ঢুকে পড়েছে, যাতে ভদ্র সমাজের লোকেরা রাজনীতি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। আর আসারও কোনো সুযোগ পাচ্ছে না। এখানে যদি এমন একটি শ্রেণি করা হতো যে, কোনো আইন না করেও এমন কিছু বিজ্ঞ লোককে পার্লামেন্টে আনা, যাদের নির্বাচিত করবেন এমপিরাই। সংরক্ষিত নারী আসনের মতো করেও আনা যায়। এতে সমাজের অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিকে রাজনীতিতে না হলেও সংসদে আনা যাবে।’ তিনি বলেন, ‘গণমান্য শ্রেণি উচ্চকক্ষে এলে পার্লামেন্টে চাটুকারিতাও কমে যাবে। তারা এমন কিছুই করবে না, যাতে সমাজ বা সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দুঃখজনক হলো, এখন পার্লামেন্টে গালিগালাজ হয়, গান গাওয়া হয়, পীর-আওলিয়ার সঙ্গে নিজেদের তুলনা করা হয়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে অবস্থা হয়েছে, সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের বর্তমান প্রক্রিয়ায় এমপি বানানো যাবে না। একমাত্র উচ্চকক্ষের মাধ্যমেই তা সম্ভব।’ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকের বিরোধিতার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, ‘গণমাধ্যমে প্রতিবেদন পড়ে যা বুঝেছি, বিষয়টি নিয়ে পর্যাপ্ত হোমওয়ার্ক হয়নি। এর জন্য আরও সময় প্রয়োজন ছিল। দলে আরও আলাপ-আলোচনার দরকার ছিল। এটা একটি বড় বিষয়, রাতারাতি করা যাবে না। এ নিয়ে প্রয়োজনে একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করা যেতে পারে। সব মহলেই এ নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত।’ আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী তালিকার প্রস্তুতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমার দলের তালিকা এখনো তৈরি করিনি। জোটের সঙ্গে কথা বলেই করব। ২০০১ সালে চারজন এমপি হয়েছিল। এরপর ২০০৮ সালে আমি একাই নির্বাচিত হয়েছি। অনেক দল আছে মনোনয়ন চাওয়ার জন্য নমিনেশন নেয়। আমি তা করব না। বিজয়ের সম্ভাবনা থেকেই যতটা প্রয়োজন জোটের কাছে ততটা নমিনেশন চাইব।’

সর্বশেষ খবর