শনিবার, ২৭ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা
রমজানে নির্বাচনী রাজনীতি

জোট চাঙ্গা করতে চান এরশাদ

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

বরাবরের মতো এবারও প্রথম রমজানে এতিম, দুস্থ ও আলেম ওলামাদের সঙ্গে ইফতার করবেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে সম্মিলিত জাতীয় জোট (ইউএনএ)-এর ব্যানারে একের পর এক ইফতার মাহফিলে অংশ নেবেন তিনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রমজানে  ‘ইফতার রাজনীতির’ প্রধান লক্ষ্য থাকবে জোটকে শক্তিশালী করা।

জাপার মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, রোজার মাসে মূলত জনসংযোগ এবং ইফতার পার্টিভিত্তিক রাজনৈতিক তত্পরতা চলবে। মাসের পবিত্রতা রক্ষায় এ মাসে ইফতার পার্টি ছাড়া বড় ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি নেই। জোটকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিয়ে রমজান মাসেই চূড়ান্ত হবে ঈদ পরবর্তী কর্মসূচি। তিনি বলেন, আমরা ইউএনএ জোটের ব্যানারে আগামীতে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেব। আমাদের সবকিছুই আগামী জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জোটগতভাবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে রমজান মাসে প্রার্থী তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু করবে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোট (ইউএনএ)। সেই তালিকা যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত করে ঈদের পর জোটের প্রধান লিয়াজোঁ কমিটি ও জোটের চেয়ারম্যান এরশাদের কাছে জমা দেবেন। হেফাজতে ইসলামকে জোটে যুক্ত করার বিষয়ে চেষ্টা চলবে রমজানেই। নেতারা আশা করছেন, তারা হেফাজতের সমর্থন আদায় করতে পারবেন। কারণ হেফাজতে ইসলাম যখন ঢাকার মতিঝিলে সমাবেশ করেছিল তাদের পাশে এরশাদ ছিলেন। তিনি পানি বিতরণ করেছেন। মাওলানা আহমদ শফীর সঙ্গে এইচ এম এরশাদও কয়েক দফা কথা বলেছেন। তা ছাড়া তৃতীয় রমজানে জোটের ব্যানারে কূটনীতিকদের সঙ্গে এবং ছয় রমজান শরিক দলগুলো নিয়ে জোটের ইফতার পার্টি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

জাপা সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের পক্ষ থেকে প্রায় অর্ধশতাধিক ইফতার পার্টির আয়োজন করা হচ্ছে। দক্ষিণের সব থানার পাশাপাশি আবু হোসেন বাবলার নির্বাচনী এলাকা শ্যামপুর কদমতলীতে ১৭টি ইফতার পার্টির আয়োজন করা হচ্ছে। আগামী ১ জুন হোটেল ইম্পেরিয়ালে দক্ষিণের উদ্যোগে ইফতার পার্টির আয়োজন করা হবে। এ ইফতার পার্টিতে জামায়াতে ইসলামী ছাড়া প্রায় সব রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। এরই মধ্যে জাতীয় পার্টির জোটের শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের এক ডজন শীর্ষ নেতা, মন্ত্রী, ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীম, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামী ও খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হককে ইফতারে অংশ নেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অন্য সব দলের নেতাদেরও আমন্ত্রণ জানানো হবে। একইভাবে ঢাকা মহানগর উত্তরেও একাধিক ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হবে। এ ছাড়াও জাতীয় পার্টির প্রতিটি অঙ্গসংগঠন পৃথকভাবে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করবে।

এ ব্যাপারে  সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, ‘পবিত্র রমজান মাসে মিছিল-মিটিং করে রাজনীতি করা যায় না। তাই আমরা ইফতার পার্টির মাধ্যমে সংগঠনকে আরও গতিশীল করার চেষ্টা করব। এজন্য ঢাকা দক্ষিণের পক্ষ থেকে অর্ধশতাধিক ইফতার পার্টির আয়োজন করেছি। এ ইফতার পার্টিতে আমরা আমাদের দলের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি সব রাজনৈতিক দল, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’

বিএনএ জোটের সমন্বয়ক সেকেন্দার আলী মনি বলেন, ‘আমরা জোটের ব্যানারে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করছি। পাশাপাশি আমাদের নিজস্ব ইফতার মাহফিলও থাকবে। আমাদের লক্ষ্য একটাই জোটকে শক্তিশালী করা।’ জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য তাজ রহমান বলেন, ‘রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় আমরা মাঠে-ময়দানে সভা সমাবেশ করি না। ঘরোয়াভাবে ইফতার মাহফিলে একত্রিত হই। সেখানে সুযোগ করে রাজনৈতিক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা হবে।’

হিন্দুদের সুরক্ষায় বিশেষ আইন করবে জাপা : জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা-৪ আসনের এমপি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেছেন, আগামীতে জাতীয় পার্টি রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে হিন্দুসহ সব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুরক্ষায় প্রয়োজনে বিশেষ আইন প্রণয়ন করবে। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। তার কাছে সব ধর্মের মানুষ সমান। তাই তিনি ক্ষমতায় থাকতে হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট করেছিলেন। বিশেষ করে হিন্দুসহ অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপাসনালয়, বাড়িঘর ও জানমাল রক্ষায় বিশেষ আইন প্রণয়ন করা হবে। গতকাল শ্যামপুর কদমতলীর বিভিন্ন মঠ মন্দির ও হিন্দু ধর্মীয় সংগঠনের নেতা-কর্মীদের  সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় তিনি এ মন্তব্য করেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর