রবিবার, ২৮ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

অনিক ও রাজুর নেতৃত্বে হত্যা কিলিং মিশনে ২৫ জন

স্কুলছাত্র আদনান হত্যার চার্জশিট প্রস্তুত

আলী আজম

রাজধানীর উত্তরায় চাঞ্চল্যকর স্কুলছাত্র আদনান কবির হত্যার ঘটনায় ২৫ জনকে আসামি করে চার্জশিট প্রস্তুত করেছে পুলিশ। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমতি পেলে চলতি সপ্তাহেই এ চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হবে। গতকাল তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় উত্তরার সেক্টর-১৩, রোড-১৭ এর ১৫ নম্বর বাড়ির সামনে আদনানকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় নিহতের বাবা কবির হোসেন বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ওই মামলায় ৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় স্থানীয় আধিপত্য এবং গ্রুপিংয়ের জের ধরে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। পরে পুলিশি তদন্তে হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত ২৫ জনের নাম বেরিয়ে আসে। এদের মধ্যে ২৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে ১৩ জন। স্বীকারোক্তিতে তারা প্রায় একই বক্তব্য দিয়েছে। তবে এ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী উত্তরার নওয়াব হাবিবুল্লাহ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র নাঈমুর রহমান অনিক এখনো অধরা রয়েছে। অনিককে গ্রেফতার করতে পারলেই মামলাটি পূর্ণাঙ্গতা পাবে। সূত্রমতে, অনিক দেশের বাইরে চলে গেছে, তাই সহসাই তাকে গ্রেফতার করা যাচ্ছে না। এদিকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে গ্রেফতারকৃত আসামিরা বলেছে, অনিক এবং তালাচাবি রাজুর নেতৃত্বে আদনানকে হত্যা করা হয়। এই কিলিং মিশনে ২৫-২৬ জন অংশ নেয়। তাদের প্রত্যেকের হাতেই ছিল লাঠিসোঁটা, রড। অনিকসহ কয়েকজনের হাতে ছিল হকিস্টিক ও চাপাতি। আধিপত্য বিস্তার এবং গ্রুপিংয়ের জের ধরেই আদনানকে হত্যা করা হয়। নিহত আদনান নাইন স্টার গ্রুপের সদস্য এবং প্রতিপক্ষ ডিসকো বয়েজ গ্রুপের সদস্য ছিল। মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেছেন, পুলিশের মূল টার্গেট এখন স্কুলছাত্র আদনান হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী অনিককে গ্রেফতার করা। এ সপ্তাহে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে। তাই তাকে ধরতে চেষ্টা চলছে। শেষ পর্যন্ত না ধরতে পারলে অনিককে পলাতক দেখিয়েই আদালতে চার্জশিট দেওয়া হবে। জানা গেছে, উঠতি তরুণদের গ্যাং গ্রুপ, নাইন স্টার গ্রুপ ও ডিসকো গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হচ্ছে। বহুল আলোচিত এ মামলায় এ পর্যন্ত ২৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১৩ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। যাদের নামে চার্জশিট দেওয়া হচ্ছে তাদের মধ্যে অনিক, রবিউল, সেতু, জিয়ান, ছোটন, জাকির, ডন ও সাকিবের নাম এজাহারে ছিল। খন্দকার শুভর নাম এজাহারে থাকলেও তদন্তে এই নামের কাউকে পাওয়া যায়নি। আসামিদের জবানবন্দির বরাত দিয়ে চার্জশিটে উল্লেখ করা হচ্ছে, ৬ জানুয়ারি জুমার নামাজের পর অনিক তার বন্ধু-বান্ধবদের ফোন দিয়ে বলে- ‘তোরা কোথায়? একটা গ্যাঞ্জাম আছে আয়। ৯ নম্বর সেক্টরের ১০ নম্বর রোডে আয়।’ বিকাল ৩টার পর সেখানে আসে করিম, নূরে আলম, রবিউল, সাদাফ জাকির, অনিক, রনি, নাফিস ডন ও সেতু। এরপর জিহান আরও কয়েকজনকে নিয়ে সেখানে আসে। একটু পর সবাই ১৩ নম্বর সেক্টরের উদ্দেশে রওনা হয়। এ সময় সবাই চিৎকার করে বলে ‘ডিসকো চলবে শহরে’। তখন রনিসহ অনেকের কাছে চাকু ছিল। সেতুর হাতে ছিল চাপাতি। জিহানের হাতে ছিল হকিস্টিক, সবার মুখে ছিল মাস্ক। কেএফসি পেরিয়ে রয়েল ক্লাবের সামনে দিয়ে হেঁটে গ্যাং দলটি ১৭ নম্বর রোডে প্রবেশ করে। ওই সময় তারা মাঠের কোনায় আদনানকে দেখে ধাওয়া করে। একপর্যায়ে মাথায় হকিস্টিক দিয়ে আঘাত করলে আদনান মাটিতে পড়ে যায়। এ সময় কয়েকজন তাকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। মিশন শেষ করে দৌড়ে বিভিন্ন দিক দিয়ে গ্যাং সদস্যরা পালিয়ে যায়। এ ব্যাপারে পুলিশের উত্তরা জোনের সিনিয়র এসি আতিকুল ইসলাম বলেন, আদনান হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন হয়েছে। কী কারণে কেন কারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে- তা পরিষ্কার। চার্জশিট তৈরির কাজও শেষ। যে কোনো সময় আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে। তবে এই হত্যাকাণ্ডের অন্যতম আসামি অনিক এখনো গ্রেফতার হয়নি। তাকে ধরতে অভিযান চলছে।

সর্বশেষ খবর