রবিবার, ২৮ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা
রমজানে অস্থির বাজার

গত বছরের চেয়ে ১০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়েছে কয়েকটি পণ্যে

নিজস্ব প্রতিবেদক

পবিত্র রমজান মাসেও নিত্যপণ্যের দামে সংযম মানছেন না ব্যবসায়ীরা। আত্মশুদ্ধির এ মাস আসার আগেই বাড়তে শুরু করেছে রমজানের প্রধান প্রধান উপকরণ ছোলা, চিনি, ডাল, খেজুর, টমেটো, কাঁচা মরিচ, ধনেপাতা, পুদিনাপাতা, লেবু, বেগুন ও শসার দাম। ফলে গতকাল মহল্লা থেকে সুপার শপ পর্যন্ত ছিল ক্রেতার আগমনে সরগরম। গত বছর কয়েকটি পণ্য যে দামে বিক্রি হয়েছিল, তার দাম চলতি বছর কেজিতে ১০ থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। খাসির মাংসের দাম কেজিতে বেড়েছে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। এবার এক মাসের ব্যবধানে পণ্যের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত। ঈদ আর রোজা মানেই পণ্যমূল্য বৃদ্ধি এবং বেশি বেশি লাভ— দীর্ঘদিন এ দেশে এমনটিই চলে আসছে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। সরেজমিন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাড়তি মুনাফার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন এক শ্রেণির ব্যবসায়ী। এদিকে রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারি ও বেসরকারিভাবে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। সরকারের একাধিক মন্ত্রী বলেছেন, রমজানে দ্রব্যমূল্য বাড়বে না। এজন্য আগে থেকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাছ ও মুরগির দাম বাড়ানো হয়েছে। হালিপ্রতি ডিমের দাম বেড়েছে ৬ টাকা। গতকাল ১ হালি ডিম বিক্রি হয়েছে ৩৬ টাকায়। গত বছর এই সময়ে বিক্রি হয়েছে ৩২ টাকায়। এ ছাড়া বাজারভেদে ওঠানামা করছে চাল, ডাল ও রসুনের দাম। পাইকারি বাজারে গত সপ্তাহের চেয়ে আলুর দাম বাড়ানো হয়েছে ৪ টাকা। খুচরা বাজারে বর্তমানে সাদা আলু বিক্রি হচ্ছে ২০-২২ ও লাল আলু ২৪ টাকায়। গত বছর এই সময়ে আলু বিক্রি হয়েছে ২০ টাকায়। বেড়েছে কাঁচা মরিচের দামও। পাইকারি বাজারে ৪০ টাকা করে বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে তা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৮০ টাকায়। গত বছর এই সময়ে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায়। বাজারে ব্রয়লার মুরগি ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে মুরগির প্রতি কেজির দাম ছিল ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। গত বছর বিক্রি হয়েছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। গরুর মাংস কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৫২০ টাকায়। গত বছর এই সময়ে গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৪৫০ টাকায়। খাসির মাংস ৮০০ টাকায়। গত বছর ছিল ৬৫০ টাকা। গত সপ্তাহের চেয়ে সবজির দাম কেজিপ্রতি ৩ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে। করলার কেজি ৬০, গ্রীষ্মকালীন টমেটো ৪০-৫০, শসা ৩৫-৪০, বরবটি ৬০-৭০, ঢেঁড়স ৩০, কচুর লতি ৫০ এবং কাঁচকলা ও লেবু প্রতি হালি ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর এসব সবজির দাম ৫ থেকে ১০ টাকা কম ছিল। রাজধানীর পাইকারি বাজার কারওয়ান বাজার ঘুরে আরও দেখা গেছে, প্রতি কেজি ছোলা ৮২-৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে; যা এক মাস আগে ছিল ৭২-৭৫ টাকায়। গত বছর এই সময়ে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৮২ টাকায়। খেসারি ডাল ৬৮-৭০, ডাবলি ৩৫, মুগ ৯৫-৯৮ এবং মসুর মানভেদে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। তবে একই বাজারে ৩ থেকে ৬ টাকা বেশি দরে খুচরা বিক্রি করছেন ক্রেতারা। গত বছর একই সময়ে মসুর ডাল বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। এ ছাড়া কয়েক মাস ধরে বেড়েই চলেছে চালের দাম। সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই এক সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম আবারও বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে মোটা চাল নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৪৬ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে একই মানের চাল কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে সর্বোচ্চ ৪২ টাকায়। এই হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম কেজিতে ৫ থেকে ৬ টাকা বেড়েছে। বাজারে মোটা চালের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেড়েছে মিনিকেটও। গতকাল প্রতি কেজি মিনিকেট মানভেদে বিক্রি হয়েছে ৫২-৫৮ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫০-৫২ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এটি কেজিতে ২ টাকা বেড়েছে। এক বছর আগে মোটা চালের দাম ছিল ৩৬-৩৮ টাকা। আর মিনিকেট ছিল ৪০-৪২। বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)।

সর্বশেষ খবর