লন্ডন সফরের পরই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটযুদ্ধে মাঠে নামবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। চলতি মাসে তার লন্ডন যাওয়ার কথা। যাত্রার দিন ৭ বা ১০ জুলাই। কেউ কেউ বলছেন, আগস্টের শুরুতেও হতে পারে এ সফর। তবে বেগম জিয়া লন্ডন যাচ্ছেন— তা অনেকটাই নিশ্চিত। সেখানে বড় ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার পরিবারের সঙ্গে প্রায় ১৫ দিন কাটাবেন। এ সময়টায় তিনি চোখ ও পায়ের চিকিৎসা করাবেন। এরপর দেশে ফিরেই দেবেন সহায়ক সরকারের রূপরেখা। কার্যত ওই সময় থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটের মাঠে নামবেন ২০-দলীয় জোট নেত্রী বেগম জিয়া। দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক নেতা এ তথ্য দেন। জানা যায়, নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবি নিয়ে ‘মাঠ গরম’ করার চিন্তাভাবনাও রয়েছে বিএনপি জোটের। আগামী নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে বিএনপির বার্তা দেশে-বিদেশে পৌঁছে দেওয়া হবে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সভা-সমাবেশের পাশাপাশি বই আকারে তুলে ধরা হবে খালেদা জিয়ার বক্তব্য। এ ইস্যুতে শেষ পর্যন্ত সরকারকে চাপে রাখার ‘কৌশল’ নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে দলটির। তবে নির্বাচন প্রস্তুতির সঙ্গে খালেদা জিয়ার আন্দোলনের বার্তাও থাকবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘শুধু বিএনপিই নয়, দেশের বেশির ভাগ মানুষ চায় আগামীতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, আর তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রেখে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাই সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থেই বেগম খালেদা জিয়া শিগগিরই একটি রূপরেখা দেবেন। আশা করি, এটা সবার কাছেই গ্রহণযোগ্য হবে।’ বিএনপি সূত্রে জানা যায়, সরকার যদি চেয়ারপারসনের প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে তাহলে পরবর্তী করণীয় নিয়েও চিন্তাভাবনা করছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। তবে দলের সিনিয়র নেতাদের বড় অংশই বলছেন, দাবি নিয়ে রাজপথমুখী হওয়া ছাড়া বিকল্প কোনো পথ খোলা নেই। সে ক্ষেত্রে দেশব্যাপী ‘শান্তিপূর্ণ’ কর্মসূচিই দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। এর আগে সহায়ক সরকারের প্রস্তাবের পক্ষে দেশে-বিদেশে জনমত তৈরির চেষ্টা করা হবে। এ নিয়ে ২০-দলীয় জোট ছাড়াও অন্যান্য রাজনৈতিক দল, বিশিষ্ট নাগরিক, কূটনীতিকসহ সংশ্লিষ্ট সবার পরামর্শও নেবে বিএনপি। রমজানের শেষের দিকে এক ইফতার মাহফিলে অংশ নিয়ে বেগম খালেদা জিয়া ‘শান্তিপূর্ণ’ অবস্থান কর্মসূচিতে যাওয়ার ইঙ্গিতও দিয়েছেন। তিনি নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘প্রস্তুতি নিন। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহায়ক সরকারের দাবি আদায়ে প্রয়োজনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিও আসতে পারে।’ সূত্রে জানা যায়, লন্ডনে চিকিৎসার পাশাপাশি মা-ছেলের আলোচনায় দলের ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে কথাবার্তা হতে পারে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থী কারা হতে পারেন তা নিয়েও তাদের মধ্যে কথাবার্তা হবে। এমনকি সম্ভাব্য প্রার্থীদের একটি তালিকাও তৈরি করা হতে পারে বিএনপির শীর্ষ দুই নেতার দেখা-সাক্ষাতে। জানা যায়, নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। দল সমর্থিত বুদ্ধিজীবীরা বেশ কিছু দিন ধরেই এ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। দলের বাইরেও বিশিষ্টজনদের মতামত নেওয়া হয়েছে। এখন অনেকটাই চূড়ান্ত পর্যায়ে। লন্ডন সফর শেষে দেশে ফিরলেই দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সহায়ক সরকারের প্রস্তাব সংযোজন-বিয়োজন করে তা আনুষ্ঠানিকভাবে জাতির সামনে তুলে ধরবেন বেগম জিয়া।
এদিকে বিএনপির তৃণমূল নেতা-কর্মীরা আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিয়ে রাখছেন। তারা অপেক্ষা করছেন দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তের। নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতির নির্দেশনা পাওয়ামাত্রই মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা ভোটযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বেন। জানা যায়, বিএনপির সহায়ক সরকারের প্রস্তাবে বেশকিছু বিকল্প থাকবে। সংবিধানের ভিতরে থেকেই কীভাবে সবার অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা যায়, সে ধরনের প্রস্তাবও থাকবে। পাশাপাশি বিকল্প হিসেবে সংবিধান সংশোধনীর পরামর্শও থাকবে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য এনে তার অধীনেও নির্বাচনে যাওয়ার প্রস্তাব থাকতে পারে। সহায়ক সরকার পদ্ধতি নিয়ে কাজ করা বিএনপির এক বুদ্ধিজীবী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘প্রস্তাবে বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারকে সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারকেও কিছুটা ছাড় দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।’ বিএনপি নেতারা জানান, দলকে সাংগঠনিকভাবেও প্রস্তুত করা হচ্ছে। সরকার দাবি না মানলে রাজপথের কর্মসূচিতেও থাকবে বিএনপি। সে ক্ষেত্রে গণসম্পৃক্ততা বাড়ানোর উদ্যোগও নেওয়া হবে। সামনের সব কর্মসূচিই হবে শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক। বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান জানান, ‘আন্দোলনের পথ খোলা রেখেই বিএনপি নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের প্রস্তাব দেবে।