মঙ্গলবার, ৪ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনা করবে বাংলাদেশিরাই

জিন্নাতুন নূর, রাশিয়া থেকে ফিরে

রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনার জন্য রাশিয়ার মস্কোয় দক্ষ জনবল হিসেবে তৈরি হচ্ছেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা। তারা সেখানে ন্যাশনাল রিসার্চ নিউক্লিয়ার ইউনিভার্সিটিতে (মস্কো ইঞ্জিনিয়ারিং ফিজিক্স ইনস্টিটিউট—মেফি) শিখছেন হাতে-কলমে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বৃত্তিপ্রাপ্ত  এসব শিক্ষার্থী রাশিয়ার খ্যাতনামা এই জাতীয় পরমাণু গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত ও পদার্থবিদ্যার জটিল নানা বিষয় সমাধান করছেন। তারা দক্ষতা অর্জন করছেন পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রক্ষণাবেক্ষণ ও অপারেশন কন্ট্রোলিংয়ের ওপর। জানা গেছে, এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের অংশ হিসেবে রাশিয়া সরকার পারমাণবিক প্রকৌশল বিষয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য বৃত্তি দিচ্ছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি করপোরেশনের (রসাটম) তত্ত্বাবধানে মেফিতে বর্তমানে ৪৩ জন মেধাবী বাংলাদেশি শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছেন। তাদের শিক্ষার মূল বিষয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নকশা, পরিচালনা ও প্রকৌশল। প্রথম ব্যাচের গ্র্যাজুয়েশন আগামী বছর শেষ হওয়ার কথা। মেফির শিক্ষার্থী নূরে আলম সিদ্দিকী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাত্তক ও স্নাতকোত্তর শেষে বৃত্তির জন্য মনোনীত হন। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘পারমাণবিক প্রযুক্তিতে রাশিয়া পৃথিবীতে সেরা। নির্দিষ্ট পরীক্ষায় অংশগ্রহণ শেষে বৃত্তির সুযোগ পাই। নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে তিন বছরের মাস্টার্স কোর্সে আমরা তৃতীয় ব্যাচ। এখানে পড়ালেখার পদ্ধতি ভিন্ন। বর্তমানে যে গণিত ও পদার্থবিদ্যা পড়ছি, তা বাংলাদেশে কখনো পড়ানো হয়নি। সরকারের চুক্তি অনুযায়ী দেশে ফিরে রূপপুরে অন্তত ছয় বছর কাজ করতে হবে। দেশের পরমাণু শক্তি কমিশনও তিন মাস অন্তর আমাদের খোঁজ নিচ্ছে।’ নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘এখানে চার ক্যাটাগরিতে শিক্ষা দেওয়া হয়। এখন গণিত ও পদার্থবিদ্যার যে সমস্যাগুলো শিখছি তা পৃথিবীতে আমরাই প্রথম সমাধান করছি। আমি দেশের পরমাণু শক্তিকে ভালো অবস্থানে নিতে নিজেকে তৈরি করতে চাই। রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের এই বৃত্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বৃত্তি পাওয়া শরিফুল বলেন, ‘শিক্ষা গ্রহণ শেষে আমরা দেশে ফিরতে বাধ্য। এখানকার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনা করব।’ মেফির আরেক শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মিজানুর রহমান বলেন, ‘পরমাণু শক্তি বিষয়ে আকর্ষণের জন্যই এসেছি। এখানে গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষা উঁচুমানের। আমি বাংলাদেশকে পরমাণু শক্তিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেখতে চাই।’ বুয়েটের ফারসিব আহমেদ বলেন, ‘শিক্ষা গ্রহণ শেষে কথা আছে রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টে যোগ দেব। ২০২২ সালে শুরু হওয়া প্লান্টে আমাদের রক্ষণাবেক্ষণ ও অপারেশন কন্ট্রোলিংসহ বিভিন্ন কাজ করতে হবে। কোনো সন্দেহ নেই দেশের উন্নয়নে এই জ্বালানি গুরুত্বপূর্ণ। আশা করছি, আমরা ভালোভাবে কাজ করতে পারব।’ বুয়েটের আরেক শিক্ষার্থী সাফাত আসলাম বলেন, ‘পরমাণু বিষয়ে রাশিয়ার মতো গবেষণা বিশ্বে অন্য কোথাও হয় না। এখানে পাওয়া সুবিধা ও নিজের পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশে ফিরে অবদান রাখতে পারব বলে বিশ্বাস করি।’ শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আবু রশিদ আব্বাস বলেন, ‘শিক্ষা-অভিজ্ঞতা দেশের বিদ্যুৎ খাতে কাজে লাগাতে চাই। ভবিষ্যতে আমরা নিজেরাই এ ধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে পারব।’ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যাওয়া শাফিউল ওয়ারা বলেন, ‘পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হিসেবে এখানে পড়া স্বপ্ন পূরণের মতো। প্রচেষ্টা থাকবে দেশে এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর