গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে ৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৫১ জন। আহতদের ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালসহ স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় কাশিমপুরের নয়াপাড়ায় ‘মাল্টিফ্যাবস লিমিটেড’ নামের একটি পোশাক কারখানায় এ বিস্ফোরণ হয়। খবর পেয়ে উদ্ধারকাজে অংশ নেয় জয়দেবপুর, কালিয়াকৈর ও টঙ্গী ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট।
এ ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে সহায়তা এবং শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে আহতদের চিকিৎসা খরচের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একই সঙ্গে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রায়হানুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে গাজীপুর জেলা প্রশাসন। কমিটিকে আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে নিহতদের মধ্যে একজনের পরিচয় তাত্ক্ষণিকভাবে জানা গেছে। ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে গিয়ে গাজীপুর জেলা প্রশাসক ড. মো. হুমায়ুন কবির সাংবাদিকদের বলেন, বিস্ফোরণের ঘটনায় ৮ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত ৫১ জনকে উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতদের প্রতিটি পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ ২০ হাজার টাকা করে সহায়তা করা হবে। ঢামেক সূত্র জানায়, রাত সাড়ে ৯টার দিকে হাসপাতালে সালমান শাহ (৩০) ও কামরুল (৩২) নামে দুজনকে ভর্তি করা হয়। মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে রাত ১১টার দিকে সালমানের মৃত্যু হয়। গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, সন্ধ্যা ৭টার দিকে ওই কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণ হওয়ার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। জয়দেবপুর, কালিয়াকৈর ও টঙ্গী ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা রাত ৮টার দিকে সেখানে উদ্ধারকাজ শুরু করে। ধারণা করা হচ্ছে, ওই বয়লারের সংস্কারকাজ চলাকালেই সেটি বিস্ফোরিত হয়। তবে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও জানান তিনি। প্রত্যক্ষদর্শী ও ওই কারখানার কর্মী জালাল মিয়া জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কারখানার নিচতলায় প্রচণ্ড শব্দে বয়লার বিস্ফোরিত হয়। এতে কারখানায় আগুন ধরে যায়। এ সময় কারখানার চারতলা ভবনের দোতলা পর্যন্ত একপাশের অংশ ধসে পড়ে। ধসে পড়া কক্ষগুলোতে কাঁচামাল ও মেশিনারিজ ছিল। কারখানা সন্ধ্যায় ছুটি হওয়ায় ভিতরে খুব বেশি কর্মী ছিলেন না। রাত পৌনে ৮টার দিকে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধারকাজ শুরু করেন। জাহিদুল হক নামে আরেকজন জানান, বয়লার বিস্ফোরণের পর ধোঁয়ায় ঢাকা পড়ে চারপাশ। দ্রুতই কারখানাটির ছাদের একটি অংশ বসে যায়।
স্থানীয়রা জানান, ঈদের ছুটির পর কারখানাটি মঙ্গলবার খোলার কথা ছিল। তবে সোমবার ডাইং ইউনিটের বয়লার সেকশনটি চালু ছিল। নিচতলায় প্রায় ৩৫-৪০ জন শ্রমিক কাজ করছিলেন। সন্ধ্যায় হঠাৎ করে বিকট শব্দে বয়লার বিস্ফোরণ ঘটলে চারতলা ভবনের নিচতলা ও দোতলার দুই পাশের দেয়াল, দরজা-জানালা ও যন্ত্রপাতি বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। এ সময় কারখানার সামনের রাস্তা দিয়ে চলাচল করা মানুষও আহত হন। বিস্ফোরণের ফলে আশপাশের কারখানার ভবনগুলো কেঁপে ওঠে এবং দরজা-জানালার কাচ ভেঙে যায়। এতে আশপাশের শ্রমিক এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার পরপরই ওই এলাকায় বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।