শিরোনাম
শুক্রবার, ৭ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

নির্বাচনের চূড়ান্ত রোডম্যাপ ঘোষণা ১৬ জুলাই

সংলাপ প্রস্তুতি কমিশনের শুরু ৩০ জুলাই

গোলাম রাব্বানী

নির্বাচনের চূড়ান্ত রোডম্যাপ ঘোষণা ১৬ জুলাই

একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সংলাপ অনুষ্ঠানের জন্য জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ৩০ জুলাই প্রথম ধাপে সুশীলসমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে নির্বাচনী সংলাপ শুরু হতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে সংলাপে অংশগ্রহণকারীদের তালিকা তৈরির কাজও প্রায় শেষ। তবে নির্বাচন কমিশন নিয়োগের সময় সার্চ কমিটি (সুশীলসমাজের) যাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিল, ইসি তাদের সংলাপে আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে কিছু নতুন প্রতিনিধিও যোগ হতে পারে সংলাপে। আর সুশীলসমাজের সংলাপ শেষে পর্যায়ক্রমে সাবেক সিইসি, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে সংলাপ করারও প্রস্তুতি চলছে। ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সংলাপের আগে ১৬ জুলাই নির্বাচনী রোডম্যাপ চূড়ান্ত করার পরিকল্পনাও নিয়েছে ইসি। রোডম্যাপ চূড়ান্ত হলেই সবাইকে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানানো হবে। কেননা আমন্ত্রণপত্রের সঙ্গে সংলাপে অংশগ্রহণকারীদের কাছে রোডম্যাপের কপিও পাঠিয়ে দেওয়া হবে। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৩০ জুলাই নির্বাচনী বিষয়ে সংলাপ শুরু হবে। তবে রাজনৈতিক দলসহ অন্য স্টেকহোল্ডারদের সংলাপের প্রাথমিক সূচি পরিবর্তনও হতে পারে। এ ক্ষেত্রে নভেম্বরের মধ্যে সংলাপের কাজ শেষে এপ্রিলের মধ্যে আইন সংস্কার ও সীমানা পুনর্বিন্যাস চূড়ান্তের কথা রয়েছে। জানা গেছে, সংলাপে নির্বাচনী আইন সংস্কার, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ, নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার ও নির্বাচনে দলীয় ব্যয়ের বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। এবারের নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে নির্বাচনী আইন সংস্কারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এজন্য ইসির মাঠ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে আইন সংস্কারের বিষয়ে প্রস্তাব নিয়েছে ইসি সচিবালয়। রাজনৈতিক দলের সংলাপে এসব আইন সংস্কারের বিষয়ে আলোচনা করা হবে। এজন্য সংলাপের বিষয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করছে ইসি সচিবালয়। ইসির আইন শাখা জানিয়েছে, সংলাপের আগে আইন সংস্কারের প্রস্তাব তৈরি করা হচ্ছে। ইসির মাঠ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে আইন সংস্কারের বিষয়ে বিভিন্ন প্রস্তাবও এসেছে। সেগুলো পর্যালোচনা চলছে। এ ছাড়া ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ, নতুন দলের নিবন্ধনের প্রয়োজনীয় আইন সংস্কারের বিষয়েও প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানান কর্মকর্তারা। এবারের নির্বাচনে অটো সিল ব্যবহারের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু করেছে ইসি। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে ৩০ জুলাই সংলাপ শুরু হবে। প্রথমে সুশীলসমাজের সঙ্গে সংলাপ হবে। এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করব।’ তিনি বলেন, ‘সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের ক্ষেত্রে যে কোনো অভিযোগ আমলে নেওয়া হবে। সেগুলো শুনানি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ প্রস্তুতির বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি চলছে। ৯ জুলাই বৈঠকে সব চূড়ান্ত করতে পারব বলে আশা করছি। এরপর ১৬ জুলাই চূড়ান্ত রোডম্যাপ ঘোষণা করা হতে পারে।’ এদিকে সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণ ভোট অনুষ্ঠান এবং সব দলের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে নির্বাচন কমিশনের আইন সংস্কার ও সংলাপের উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে রাজনৈতিক দলগুলো। বিগত দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী দল বিএনপিও একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ঘর গোছাচ্ছে। এমনকি ইসির সংলাপে অংশগ্রহণের পাশাপাশি ইসির আইন সংস্কারের বিষয়ে পরামর্শ দেবেন বলেও জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। আর সংসদে বর্তমান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসির আইন সংস্কারের উদ্যোগ অনেক ভালো। তারা বলছেন, ইসির ঘোষিত রোডম্যাপে সব দলের জন্য আশার দিক রয়েছে। ইসি সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে আইন সংস্কারের কথা বলছে। তারা এটা করলে একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হবে। এ ছাড়া সুশীলসমাজের একটি প্রতিনিধি দল সিইসির সঙ্গে দেখা করে নির্বাচনী আইন সংস্কারের বিষয়ে লিখিত পরামর্শও দিয়েছেন। তারাও আশাবাদী সংস্কার প্রস্তাবগুলো আমলে নেবে ইসি।

সংলাপের প্রাথমিক সূচি : সুশীলসমাজের প্রতিনিধি ৩০ জুলাই। সাবেক সিইসি ও ইসি ৩ আগস্ট। গণমাধ্যম ১৮ আগস্ট। রাজনৈতিক দল ২৫ আগস্ট-২ অক্টোবর। সুপারিশমালার প্রাথমিক খসড়া প্রস্তুত ১৮ নভেম্বর। সুপারিশমালা চূড়ান্তকরণ ১৮ ডিসেম্বর। গত ২৩ মে আগামী দেড় বছরের কাজের খসড়া সূচি ঘোষণা করেন সিইসি কে এম নূরুল হুদা। এ বছরের জুলাই থেকে নভেম্বরের মধ্যে রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্টদের মতামত নিয়ে আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে তা চূড়ান্ত করা হতে পারে।

সর্বশেষ খবর