মঙ্গলবার, ১৮ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভয়ঙ্কর ব্ল্যাকমেইলিংয়ের জাল

টার্গেট উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভয়ঙ্কর ব্ল্যাকমেইলিংয়ের জাল

দেশে হঠাৎ করে ব্যাপক আকার ধারণ করেছে ব্ল্যাকমেইলিং। ব্ল্যাকমেইল করে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে অর্থবিত্ত। রাজধানীতে তো আছেই, দেশের আনাচে-কানাচে প্রতিদিনই এসব গ্রুপের হাতে অর্থবিত্ত হারাচ্ছে মানুষ। সাধারণত নারীরা সবচেয়ে বেশি ব্ল্যাকমেইলের শিকার হচ্ছেন। তবে ইদানীং উচ্চবিত্ত শ্রেণির ছেলেদের টার্গেট করে ব্ল্যাকমেইল করছে একটি গ্রুপ। এদের অনেকেই মডেলিং, র‌্যাম্পিংয়ের নামে ছড়াচ্ছে এই প্রচারণার জাল। রাজধানীসহ সারা দেশে গত দুই মাসে ঘটেছে বেশ কয়েকটি ব্ল্যাকমেইলের ঘটনা। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অথবা খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে অন্তরঙ্গ মুহূর্তে তোলা হয়েছে ছবি বা তৈরি করা হয়েছে ভিডিও। পরে ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়া বা সবাইকে জানিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আদায় করা হচ্ছে চাহিদামাফিক অর্থ। আর এ জাল থেকে বেরোতে না পেরে অনেকেই বেছে নেন আত্মহত্যার পথ। এসব ঘটনার বেশির ভাগই ঘটছে নারীদের সঙ্গে। ইন্টারনেটে পরিচয়ের মাধ্যমে প্রথমে বন্ধুত্ব, প্রেম আর বিয়ের প্রতিশ্রুতি। পরে কিছু অন্তরঙ্গ ছবি বা ভিডিও তৈরি করে দিচ্ছে ব্ল্যাকমেইলের পথ। দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউবে সক্রিয়। এ মাধ্যমটাকেই কাজে লাগাচ্ছে একশ্রেণির প্রতারক। এ রকম ব্ল্যাকমেইলের অনেক অভিযোগ এসেছে কাউন্টার টেররিজমের সাইবার ক্রাইম বিভাগে। গ্রেফতার করা হয়েছে অনেককে। তবুও থামছে না অপরাধ। একের পর এক ঘটেই চলেছে এসব। সম্প্রতি ব্ল্যাকমেইলাররা শুরু করেছে নতুন ধান্দা। মেয়েদের পাশাপাশি এবার এই গ্রুপের টার্গেট উচ্চবিত্ত শ্রেণির ছেলে। অনুসন্ধানে জানা যায়, গুলশান, বনানী, উত্তরা, ধানমন্ডির উচ্চবিত্ত ছেলেদের টার্গেট করে তাদের বন্ধু, পরিবার-পরিজন সম্পর্কে রেকি করা হয় প্রথমে। এরপর তাদের ঘিরে তৈরি করা হয় পরিকল্পনা। আর এ ব্ল্যাকমেইলে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে মডেল হিসেবে পরিচয় দেওয়া মেয়েদের। বিভিন্নভাবে এসব ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলছে তারা। অন্তরঙ্গ মুহূর্তের কিছু ছবি বা স্বেচ্ছায় করা সম্পর্কের ভিডিও দেখিয়ে ইউটিউবে ছেড়ে দেওয়া, পর্নোগ্রাফিতে ব্যবহার করা এবং ধর্ষণ মামলাসহ বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে ছেলেদের। বনানী, গুলশানে একদিকে বেরিয়ে আসছে ধর্ষণের চিত্র। অন্যদিকে এগুলোকে সামনে এনে ব্ল্যাকমেইলের জাল বুনে চলেছে আরেকটি গ্রুপ। অভিভাবকদের উদাসীনতায় উচ্চবিত্ত পরিবারগুলোয় একদিকে শিথিল হচ্ছে পারিবারিক বন্ধন আর অর্থবিত্তের লোভে এসব পরিবারের ছেলেদের টার্গেট করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে মডেল নামধারী ব্ল্যাকমেইল গ্রুপের সদস্যরা। মুঠোফোন হারিয়েও ব্ল্যাকমেইল অপসংস্কৃতির বেড়াজালে পড়ছে মানুষ। হারানো মোবাইলে থাকা ব্যক্তিগত ছবি দিয়ে করা হচ্ছে ব্ল্যাকমেইল। এসব ছবি ইউটিউবে বা খারাপ পেজে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আর মানসম্মান বাঁচাতে দফায় দফায় তাদের দাবি-দাওয়া পূরণ করেও মিলছে না নিস্তার। সম্প্রতি কাউন্টার টেররিজমের সাইবার ক্রাইম বিভাগে এসেছে এ রকম বেশকিছু অভিযোগ। মূল্যবোধ, নৈতিকতা আর পশ্চিমা সংস্কৃতি গোগ্রাসে গিলে ফেলায় এ রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে বলে বলছেন সমাজবিজ্ঞানীরা। এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেন, ‘অভিভাবকদের সন্তানদের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। রাত ১২টায় ছেলেমেয়েরা যাচ্ছে জন্মদিনের পার্টিতে! আমাদের সংস্কৃতি, সমাজ, ধর্ম ও পারিবারিক বন্ধনকে অগ্রাহ্য করছে তারা।’ তিনি বলেন, ‘ছেলেমেয়েদের পশ্চিমা সংস্কৃতির ভোগবাদী চিন্তা বাদ দিয়ে দেশের সংস্কৃতি ও মূল্যবোধকে জাগ্রত করতে হবে।’

সর্বশেষ খবর