মঙ্গলবার, ১৮ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা
ভারতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন

ভোটগ্রহণ সম্পন্ন ফল ২০ জুলাই

নয়াদিল্লি ও কলকাতা প্রতিনিধি

পরাজয় নিশ্চিত। কিন্তু বিষয়টা জয়-পরাজয়ের নয়। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মোড়কে ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের জন্য বিরোধী জোটকে ঐক্যবদ্ধ করাটাই উদ্দেশ্য কংগ্রেসসহ বিরোধী দলের।

অন্যদিকে প্রথমবারের জন্য দলিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করে পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক বার্তা দিতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

এই দুইয়ের টানাপড়েনে গতকাল দিনভর চলল রাষ্ট্রপতি ভোটের পর্ব। সংসদের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভাতেও তা চলেছে। সকাল  ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত  ভোটগ্রহণ করা হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে এনডিএ প্রার্থী রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে বিরোধী প্রার্থী মীরা কুমারের মধ্যে লড়াই হলেও, অঙ্কের হিসেবে অবশ্যই কোবিন্দই এগিয়ে। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, শতাংশের হিসেবে কোবিন্দের পক্ষে প্রায় ৬৫ শতাংশ ভোট পড়তে পারে। এ দিন থেকেই শুরু হয়েছে সংসদের বাদল অধিবেশন। সকালেই সংসদে পৌঁছে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রথম ভোট দেন তিনিই। পরে ভোট দেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী উমা ভারতী। পাশাপাশি ভোট দিয়েছেন উড়িষ্যার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক, মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান, আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালও। সংসদের ১৬ নম্বর ঘরে চলেছে ভোটগ্রহণ। সারা দেশে মোট ৩২টি জায়গায় চলেছে ভোটগ্রহণ। বৃহস্পতিবার এই নির্বাচনের ফল জানা যাবে। ২৪ জুলাই বর্তমান রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এর পর শপথ গ্রহণ করবেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন শুরু হতেই অবশ্য ফের প্রকাশ্যে এসেছে মুলায়ম সিং যাদব এবং অখিলেশ যাদবের মধ্যে মতপার্থক্য। বিজেপির রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী রামনাথ কোবিন্দকেই ভোট দিয়েছেন মুলায়ম। যদিও বিরোধী প্রার্থী মীরা কুমারকে ভোট দেওয়ার জন্য সপা বিধায়কদের নির্দেশ দেন অখিলেশ। অন্যদিকে, এনসিপি নেতা প্রফুল প্যাটেলের দাবি, তাদের দলের সব সংসদ সদস্য ও বিধায়ক মীরাকে ভোট দেবেন। রবিবারই সর্বদলীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে ঐকমত্য হলে ভালো হতো। কিন্তু গোটা প্রচার অভিযানে যেভাবে গণতান্ত্রিক মর্যাদা পালন হয়েছে তা সন্তোষজনক হিসেবেই মন্তব্য করেছেন মোদি।

এদিকে ভারতের ২টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলসহ ৩২টি রাজ্যের বিধানসভা ও দিল্লির সংসদ ভবনের ৬২ নম্বর হলে ভোট নেওয়া হয়। ভোট গ্রহণ কেন্দ্রগুলোয় ছিল কড়া নিরাপত্তা। দেশটির রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন, ১৯৫২ অনুসারে এই ভোটে প্রতিটি রাজ্যের নির্বাচিত বিধায়ক ও সংসদের দুই কক্ষের নির্বাচিত সদস্যরাই অংশ নিয়েছেন। তবে মনোনীত সাংসদ (শচীন টেন্ডুলকারসহ ১২ জন) বা রাজ্যগুলোর বিধানসভায় মনোনীত বিধায়কদের ভোটাধিকার ছিল না। এদিন সংসদ ভবনে ভোট দেন কংগ্রেস সাংসদ ও দলের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, জয়রাম রমেশ, ন্যাশনাল কনফারেন্স সাংসদ ফারুক আবদুল্লাহ প্রমুখ। দুপুরে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় ভোট দেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিসহ বিধায়ক ও সাংসদরা। দিল্লি বিধানসভায় ভোট দেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। এ ছাড়া নিজেদের রাজ্যের বিধানসভায় ভোট দেন সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলোর মুখ্যমন্ত্রীসহ অন্য বিধায়ক ও সাংসদরা। এদিন ভোট দিয়ে সাংবাদিকদের সামনে মমতা বলেন, ‘হারব জেনেও মীরা কুমারকে সমর্থনের মধ্য দিয়েই আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছি। এই বুকের পাটা আমরা ছাড়া অন্য কারও নেই।’ তবে নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে রামনাথ কোবিন্দের প্রতি তৃণমূলের শ্রদ্ধা থাকবে বলেও জানান মমতা। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য দেশটির মোট ৪ হাজার ১২০ জন বিধায়ক ও ৭৭৬ জন (লোকসভা ৫৪৩+রাজ্যসভা ২৩৩) সাংসদ মিলিয়ে ইলেকটোরাল কলেজের মোট ভোট ১০ লাখ ৯৮ হাজার ৮৮২। বিধায়ক ও সংসদ সদস্যের মোট ভোটমূল্যের অর্ধেকের বেশি অর্থাৎ ৫ লাখ ৪৯ হাজার ৪৪২টি ভোট পেলেই রাইসিনা হিলসে প্রবেশাধিকার মিলবে। ভোট গ্রহণের পরই কড়া পাহারায় ব্যালট বাক্সগুলোকে দিল্লিতে উড়িয়ে নিয়ে সংসদের ৬২ নম্বর ঘরে তালাবন্দী রাখা হবে। ২০ জুলাই ভোট গণনার জন্য খোলা হবে ব্যালট বাক্সগুলো। ২৫ জুলাই শপথ নেবেন নতুন রাষ্ট্রপতি।

সর্বশেষ খবর