মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

কেন ডুবছে দুই সিটি

জয়শ্রী ভাদুড়ী

বৃষ্টি হলেই ডুবে যাচ্ছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অধিকাংশ এলাকা। হাঁটু থেকে গলা পর্যন্ত পানিতে বন্দী হয়ে পড়ে জনজীবন। এই জলাবদ্ধতার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে সিটি করপোরেশনের খাল দখল, অচল ড্রেনেজ জরুরি হয়ে উঠেছে এ নদ-নদীগুলোর খনন, সংস্কার, দখল ও দূষণমুক্ত করা। এদিকে এ চার নদ-নদী এবং চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদী খনন, সংস্কার, দখল ও দূষণমুক্ত করে পরিবেশবান্ধব করে তুলতে গত বছর একটি উদ্যোগ নিয়েছিল নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে একটি প্রস্তাবও পাঠানো হয়েছিল। যাতে নৌবাহিনীকে দিয়ে এ পাঁচ নদ-নদী খনন ও সংস্কার করে এগুলোর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনা যায়। প্রায় আট মাস আগে এ পাঁচ নদ-নদী সংস্কার করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সে কমিটি এ বিষয়ে এখনো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। সে উদ্যোগটাই থমকে আছে রহস্যজনক কারণে। অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে নৌবাহিনীকে কাজ না দিতে সরকারের পদস্থ আমলাদের একটি অংশ পাঁয়তারা চালাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীকে জলবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা করতে জরুরি ভিত্তিতে ঢাকার চারপাশের নদ-নদী খনন করে দখল ও দূষণমুক্ত করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে এ কাজ নৌবাহিনীকে দিয়ে করানো যেতে পারে। তাতে কাজ দ্রুততম সময় ও পরিচ্ছন্নভাবে হওয়ার সুযোগ থাকবে। রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) নির্বাহী সদস্য তোফায়েল আহমদ বলেন, ‘ঢাকা শহর ভৌগোলিক কারণেই বৃষ্টিপাত অঞ্চল। মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের কারণে ঢাকায় তুলনামূলক বৃষ্টি বেশি হয়। তবে সেই বৃষ্টির পানি কোথাও যেতে পারে না। কারণ আমরা ঢাকাকে একটা গামলা বানিয়ে রেখেছি। ফলে বৃষ্টির পানি নগরীর এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় গিয়ে জলাবদ্ধতা তৈরি করে।’ তিনি বলেন, ‘ঢাকার খালগুলো দখল এবং রাজধানীর চারপাশের নদ-নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি দ্রুত নামতে পারে না। এর সঙ্গে নগরীজুড়ে যত্রতত্র বক্সকালভার্ট নির্মাণ পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে।’ তিনি বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব ঢাকার চারপাশের নদ-নদী খনন করে দখল ও দূষণমুক্ত করা গেলে ঢাকাকে জলাবদ্ধতার হাত থেকে বাঁচানো যাবে। না হলে ভবিষ্যতে আরও বড় বিপর্যয় অপেক্ষা করছে ঢাকার জন্য।’ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার চারপাশের চার নদ-নদীকে পরিবেশবান্ধব করে তুলতে এগুলোর দুই তীরের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা, নদীর পানি দূষণমুক্ত করা, দুই তীর রক্ষায় পরিকল্পিতভাবে দেয়াল তুলে নদ-নদীকে রক্ষা করা, ভরাট হয়ে যাওয়া নদ-নদীর তলদেশ খনন ও সংস্কারের মাধ্যমে নদ-নদীর স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনতে একটি প্রকল্প গ্রহণের প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছিল গত বছরের জুন-জুলাইয়ে। প্রস্তাবটি তৈরির পর তা অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। ওই প্রস্তাবে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদী সংস্কারের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছিল। সূত্র জানায়, ওই প্রস্তাবে রাজধানীর চার পাশের চার নদ-নদী এবং চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর সংস্কারের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করে নৌবাহিনীকে দিয়ে এটি বাস্তবায়নেরও প্রস্তাব করা হয়েছিল। যেহেতু নৌবাহিনীর নদী নিয়ে কাজের অভিজ্ঞতা আছে এবং তারা প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ করলে এ প্রকল্প স্বচ্ছতা ও দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছিল। সূত্র জানায়, প্রকল্পটির বিষয়ে প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানোর পর গত বছরের নভেম্বরের দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রকল্প গ্রহণের বিষয়ে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি করে দেন। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে প্রধান করে করা ওই কমিটির সদস্যসচিব হলেন প্রধানমন্ত্রীর দফতরের একজন মহাপরিচালক। অনূর্ধ্ব ১৯ সদস্যের কমিটির বিষয়টি নিয়ে প্রতি মাসে এক থেকে দুটি সভা করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করার কথা থাকলেও গত প্রায় আট মাসেও এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি। জানা গেছে, কমিটি এ আট মাসে মাত্র একটি সভা করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে নৌবাহিনীকে কাজ না দিয়ে সরকারের পদস্থ আমলারা এটিকে ঝুলিয়ে দিয়েছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর