মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

চলচ্চিত্র শিল্পীদের কল্যাণে ট্রাস্ট ফান্ড হবে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

চলচ্চিত্রের শিল্পী, কলাকুশলীদের কল্যাণে একটি ট্রাস্ট ফান্ড করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘চলচ্চিত্র একটি শক্তিশালী মাধ্যম। এ মাধ্যমের শিল্পী, কলাকুশলীদের অনেকেই জীবনের শেষ সময়ে এসে অর্থাভাবে ভোগেন, সঠিক চিকিৎসা পান না। এটা দুঃখজনক। তাদেরসহ এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের কল্যাণে ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করা হবে। চলচ্চিত্রশিল্পের উন্নয়নে ঢাকার পাশে সাভারে “বঙ্গবন্ধু ফিল্ম সিটি” গড়ে তোলা হবে। যা হবে বিশ্বমানের।’ গতকাল বিকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ২০১৫ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পদক প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি ফান্ড আছে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনেও একটি ফান্ড রয়েছে। সে ফান্ডকে আরও বড় পরিসরে করতে চাই; যাতে কোনো শিল্পীকে কারও কাছে হাত পাততে না হয়। ওই ফান্ড থেকেই সহায়তা দেওয়া যায়। প্রায়ই খবর আসে, শিল্পীরা চিকিৎসা করাতে পারছেন না, টাকাপয়সা নেই। যেখানে অনেক সন্তানই বাবা-মার খোঁজখবর নেন না সেখানে একজন শিল্পীর কে খোঁজ নেবে। আর যেন কোনো শিল্পীকে কষ্ট পেতে না হয়, অর্থাভাবে, চিকিৎসার অভাবে মারা যেতে না হয় সে ব্যবস্থা আমি করে যেতে চাই।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই যারা বাংলাদেশে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন তারা আরও উন্নতমানের সিনেমা নির্মাণ করবেন, যাতে আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি-কৃষ্টি সবকিছু ধারণ করবে। দেশের মানুষ এবং আন্তর্জাতিকভাবে যেন আরও সুনাম অর্জন করতে পারে সেদিকে আরও বিশেষভাবে নজর দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান ছিল মরুভূমি, তারা আমাদের দেশের সম্পদ লুট করে নিয়ে যেত। এভাবেই তারা চলত। একটা সময় আমাদের দেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ছিল অনেক উন্নত ও সমৃদ্ধ। আমাদের দেশেই শুটিং করা হতো। শেষে নেগেটিভ লাহোরে নিয়ে যাওয়া হতো, সেখানে কাটছাঁট, সেন্সরশিপ করত। কাস্টমের নামে নানাভাবে টাকা আদায় করত। এক দেশ অথচ কাস্টম আলাদা। আমাদের চলচ্চিত্রের টাকা দিয়ে তারা নিজ দেশের অর্থনীতি উন্নতি করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পাকিস্তান আমাদের সংস্কৃতির ওপর নির্ভর করে চলত। এখান থেকে তারা নানাভাবে আয় করত। তাদের ইন্ডাস্ট্রিও পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) ওপর নির্ভরশীল। যুক্তফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রী হিসেবে ১৯৫৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলা চলচ্চিত্রের উন্নয়নের জন্য তেজগাঁও শিল্প এলাকায় চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন গড়ে তোলার জন্য জায়গা বরাদ্দ করেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর বঙ্গবন্ধু যখন একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার চেষ্টা করছিলেন, তখন তিনি সমানভাবে এ দেশের শিল্প-সংস্কৃতিকেও পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনি সিনেমাকে ভুলে যাননি। সিনেমার উন্নয়নে বিএফডিসি গড়ে তোলেন। সেন্সর নীতিমালা তৈরি করেন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্টদের বিদেশে পাঠান, চলচ্চিত্র সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভের জন্য। তিনি চেয়েছেন এ দেশে ভালো সিনেমা হোক।’ তিনি বলেন, ‘এই এফডিসির চলার রাস্তা এটি আমিই করে দিয়েছি। আগে কারওয়ান বাজারের ভিতর দিয়ে শুঁটকি মাছের গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে আসতে হতো। চলচ্চিত্রের যত উন্নয়ন আমাদের হাত দিয়েই হয়েছে।’

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন তথ্য মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এ কে এম রহমত উল্লাহ, তথ্য সচিব মর্তুজা আহমেদ, পুরস্কারপ্রাপ্তির অনুভূতি প্রকাশ করেন অভিনেত্রী শাবানা। মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ২০১৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিসমূহের মধ্যে ২৫টি বিভাগে দেওয়া হয়েছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কারের ক্রেস্ট ও সনদ গ্রহণ করেন পুরস্কারপ্রাপ্তরা।

আমি যাদের জন্য শাবানা, আজকের এ পুরস্কার তাদের

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে আজীবন সম্মাননাপ্রাপ্তির প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে কাঁদলেন চিত্রনায়িকা শাবানা। অনুষ্ঠানে নিজের বক্তব্য দিতে এসে দীর্ঘদিন আড়ালে থাকা এ নায়িকা বললেন, ‘আমি যাদের জন্য শাবানা, আজকের এ পুরস্কার তাদের।’

কান্নাভেজা বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘এই তো সেদিন আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রথমবারের মতো দেখা করতে গিয়েছিলাম। মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী দুই হাতে আমাকে জড়িয়ে ধরেন। আমি জানি, তিনি যে সম্মান আমাকে সেদিন দিয়েছেন, তা সব শিল্পীর, শিল্পের। তিনি অসুস্থ পরিচালকের পাশে দাঁড়িয়েছেন।’

দেশীয় চলচ্চিত্রের সংকট প্রসঙ্গেও বক্তব্য দেন তিনি। বলেন, ‘আমাদের চলচ্চিত্র আজ সংকটে। কিন্তু যে কোনো সংকটের মাঝে লুকিয়ে থাকে সমাধান। যখন আাামাদের পাশে সবার প্রিয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আছেন তখন কোনো সংকটই থাকতে পারে না। প্রবাসে থাকলেও আমি জ্ঞাত হয়েছি তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বাংলাদেশ সিনেমা ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট করেছেন। বিপুল অর্থের মাধ্যমে বিএফডিসি আধুনিকায়ন করেছেন। জানতে পারি, তিনি ফোর-কে রেজুলেশন প্রজেক্টরের ব্যবস্থা করছেন। যেখানে বিশ্বের অনেক দেশে এখনো টু-কে রেজুলেশন ব্যবহার করা হয়। আমি তাকে সাধুবাদ জানাই।’

সর্বশেষ খবর