মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

বরিশাল ও বরগুনার ডিসি প্রত্যাহার

নিজস্ব প্রতিবেদক

দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার অভিযোগে বরিশালের ডিসি গাজী সাইফুজ্জামান ও বরগুনার ডিসি বশিরুল আলমকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে তাদের প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাজী তারিক সালমনের বরিশালে নাজেহাল হওয়ার ঘটনায় এই দুই ডিসিকে প্রত্যাহার করল সরকার। অপরদিকে ইউএনও তারিক সালমনের সঙ্গে সেদিন বরিশাল আদালতে কি ঘটেছিল তার বিস্তারিত জানতে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি করেছে সরকার। গতকাল কমিটির বিষয়ে সাংবাদিকদের অবহিত করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। কমিটি আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে জমা দেবে।

২ ডিসি প্রত্যাহার : জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোজাম্মেল হক খান গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, বরিশালের জেলা প্রশাসক গাজী মো. সাইফুজ্জামান এবং বরগুনার জেলা প্রশাসক বশিরুল আলমকে প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ফেরত আনা হয়েছে। তাদের জায়গায় নতুন দুজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বরিশাল ও বরগুনার ডিসি যে দায়িত্বে ছিলেন, তারা তা পালন করতে পারেননি, প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিতে পারেননি। এ কারণেই তাদের প্রত্যাহার করা হয়েছে। তারিক সালমন বরিশালের আগৈলঝাড়ার ইউএনও থাকাকালে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে ‘বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃত করে ছাপিয়েছিলেন’ অভিযোগ করে ৭ জুন মামলা করেন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ওবায়েদ উল্লাহ সাজু। মামলায় সমন জারির প্রেক্ষাপটে ১৯ জুলাই তারিক সালমন আদালতে হাজির হলে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বরিশালের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক মো. আলী হোসাইন। অভিযোগ উঠেছে, এ ঘটনায় ডিসি সাইফুজ্জামানের উসকানি ছিল। ‘বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃত করে ছাপানোর’ জন্য তিনি এবং বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার এপ্রিল মাসে তারিক সালমনকে শোকজ করেছিলেন। এতেই আইনজীবী সাজু মামলা করার সুযোগ পেয়েছিলেন। এ ঘটনায় প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের মধ্যে ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারকে নিয়ে ক্ষোভ-অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে গতকাল বরিশালের ডিসিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। অন্যদিকে বরগুনার ডিসি তার অধীনস্থ সদর উপজেলার ইউএনও তারিক সালমনকে সুরক্ষা দিতে না পারায় তাকেও প্রত্যাহার করা হয়েছে। গতকাল মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তারিক সালমনের বিরুদ্ধে মামলা ও পরের ঘটনাপ্রবাহে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ একটি তদন্ত কমিটি করেছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব বজলুল করিম চৌধুরীকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। অপর চার সদস্য হলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের একজন, আইন ও বিচার বিভাগের এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন করে যুগ্ম-সচিব। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিভাগীয় কমিশনার এপ্রিল মাসে ইউএনও তারিক সালমনের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য যে সুপারিশ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছিলেন সেটি ওই সময়ই খারিজ করে দেওয়া হয়েছিল ইউএনওর কোনো ত্রুটি না থাকায়।

বরিশাল ও বরগুনায় নতুন ডিসি : এদিকে গতকালই বরিশালের ডিসি হিসেবে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর পিএস হাবিবুর রহমান এবং বরগুনার ডিসি হিসেবে পাবনা জেলা পরিষদের সিইও মোখলেসুর রহমানকে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। গতকালই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে তাদের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

ইউএনওর মামলার নথি খতিয়ে দেখা হচ্ছে : বঙ্গবন্ধুর ছবি ‘বিকৃতি’র অভিযোগে বরগুনার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাজী তারিক সালমনের বিরুদ্ধে মামলার নথি খতিয়ে দেখা হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টে। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার তলবের প্রেক্ষিতে বরিশালের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলী হোসাইনের পাঠানো নথিগুলো গতকাল সুপ্রিম কোর্টে এসে পৌঁছে। নথির সঙ্গে তিনি একটি ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর পাঠানো চিঠিতে বরিশালের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট লিখেছেন, আদালতের কার্যপ্রণালী শেষে এজলাস ত্যাগ করে খাসকামরায় এসে শুনি ইউএনওর জামিন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে মর্মে অনলাইন মিডিয়ায় সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করা হয়নি। ফলে জেলহাজতে প্রেরণের প্রশ্নই ওঠে না। সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার)  মো. সাব্বির ফয়েজ সাংবাদিকদের বলেন, বরিশালের মুখ্য মহানগর হাকিমের কাছে ঘটনার ব্যাখ্যাসহ সংশ্লিষ্ট মামলার নথি চাওয়া হয়। তিনি সেটা পাঠিয়েছেন। মামলার নথিপত্র ও তার ব্যাখ্যা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। স্বাধীনতা দিবসের আমন্ত্রণপত্রে বঙ্গবন্ধুর ‘বিকৃত’ ছবি ব্যবহারের অভিযোগের মামলায় সমনের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার বরিশালের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলী হোসাইনের আদালতে হাজির হন আগৈলঝাড়ার সাবেক ইউএনও তারিক। শুনানির পর বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বলে জানিয়েছিলেন তারিকের আইনজীবী মোখলেছুর রহমান খান। তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আদেশের কিছুক্ষণ পর একই আদালত তারিকের জামিন মঞ্জুর করে। জামিন মধ্যবর্তী সময়ে ঘণ্টা দুয়েক ইউএনওকে কারা হাজতে থাকতে হয়। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে প্রধান বিচারপতির নির্দেশে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার কার্যালয় থেকে বিচারক মো. আলী হোসাইনের কাছে মামলার নথি ও ঘটনার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে বিচারক মামলার নথি ও ব্যাখ্যা দেন।

সর্বশেষ খবর