শুক্রবার, ২৮ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঘোষণা ছাড়াই মিরপুরে গ্যাস সংযোগ বন্ধ, দুর্ভোগ

জিন্নাতুন নূর

মিরপুর ও আশপাশ এলাকায় কয়েক মাস ধরে বেশ কয়েকবার আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্রাহকের গ্যাস সংযোগ বন্ধ রাখা হয়। কখনো পত্রিকায় নোটিস দিয়ে, আবার কখনো বিনা নোটিসেই এ সংযোগ বন্ধ রাখা হচ্ছে বলে গ্রাহকরা অভিযোগ করেন। আর গ্যাস না থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে মিরপুরবাসীকে। এলাকাবাসীর বক্তব্য, সরকার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করেছে ঠিকই কিন্তু এক বছর ধরে মিরপুরে গ্যাসের চাপ কম থাকায় এবং চলতি বছরজুড়ে মেট্রোরেলের কাজের জন্য গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় তারা ঠিকমতো রান্নার কাজ করতে পারছেন না। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদনেরও ব্যাঘাত ঘটছে। এ অবস্থায় তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ বলছে, মিরপুরে মেট্রোরেল প্রকল্প কাজের জন্য গ্যাসলাইন সরানো হচ্ছে। এজন্য প্রায়ই গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখতে হচ্ছে। আগামী সপ্তাহে শেষ ট্রায়াল শাটডাউন শেষ হলে মিরপুরবাসীর এ সমস্যার সমাধান হবে বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন তিতাস গ্যাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। মিরপুরবাসী জানান, গ্যাসের অভাবে এখন হোটেল-রেস্টুরেন্ট থেকে তাদের খাবার কিনে এনে খেতে হচ্ছে। বর্তমানে মেট্রোরেলের কাজের জন্য মিরপুরের কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, মনিপুর, কাফরুল, ভাসানটেক, সেনপাড়া, ইব্রাহিমপুর, কচুক্ষেত, মিরপুর-১, ২, ৬, ১২, ১৪ ও ১০ নম্বর, মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট, মিরপুর ডিওএইচএস, পাইকপাড়া, ইস্টার্ন হাউজিং, পীরেরবাগ, বড়বাগ, রূপনগর, আগারগাঁও, তালতলাসহ বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সংযোগে বিঘ্ন হচ্ছে। এক বছর ধরে এসব এলাকায় গ্যাস সংকট চলছে। নতুন করে মেট্রোরেলের কাজের জন্য চলতি বছরের শুরু থেকে বিশেষ করে গত দু-তিন মাস এসব এলাকায় গড়ে ৮ থেকে ১৫ ঘণ্টা গ্যাস সংযোগ বন্ধ রাখা হচ্ছে। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ বলছে, মিরপুরে মেট্রোরেল প্রকল্প কাজের জন্য গ্যাসলাইন সরানো হচ্ছে। এজন্য প্রায়ই গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এমনকি অনেক সময় গ্রাহককে আগে থেকে এ ব্যাপারে জানানোর সময়ও পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে গ্রাহকদের কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। ভারী কাজের জন্য অনেক সময় হঠাৎ করেই গ্যাসের পাইপলাইন ভেঙে যাচ্ছে, এজন্য সমস্যাও বেশি হচ্ছে। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক (অপারেশন) প্রকৌশলী এইচ এম আলী আশরাফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বর্তমানে আমরা ট্রায়েল শাটডাউন করছি। আগামী সপ্তাহে ফার্মগেট থেকে মিরপুরের বাসিন্দাদের জন্য শেষ আরেকটি শাটডাউন হবে। এরপর এ এলাকার বাসিন্দাদের আর কষ্ট সহ্য করতে হবে না বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, ‘মাটির নিচে আমাদের যে পাইপ আছে সেগুলো ৪০ বছরের পুরনো আর মেট্রোরেলের কাজ করতে গিয়ে আমাদের কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। ফলে গ্রাহকদের কিছুটা দুর্ভোগ হচ্ছে।’ গতকালও মেট্রোরেলের কাজের জন্য মিরপুরে চার ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ ছিল। এজন্য দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকে। এতে চিড়িয়াখানা রোড, মিরপুর-১, ২, ৬, ৭ নম্বরসহ মিরপুর-১০, ১১ ও ১২-এর রাস্তার পশ্চিম পাশ ইস্টার্ন হাউজিং, রূপনগর, আরামবাগ ও আশপাশ এলাকায় আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্যাস সরবরাহ বন্ধ ছিল। ১২ নম্বর এলাকার এক গৃহিণী রুমানা আক্তার বলেন, ‘গ্যাস থাকবে না তা আগে থেকে জানা ছিল না। এজন্য বাচ্চাদের বাইরে থেকে টিফিন কিনে দিয়েছি। দুপুরের খাবারও হোটেল থেকে এনে খেতে হয়েছে। দুই মাস ধরে গ্যাস সরবরাহে লুকোচুরি হচ্ছে। অবস্থা এমন চললে এলপি গ্যাস কিনতে বাধ্য হব। তাতে সংসারের খরচ আরও বেড়ে যাবে।’ কাজিপাড়ার এক মেসের শিক্ষার্থী সজীব বলেন, ‘গ্যাসের এ লুকোচুরিতে আমাদের মতো ব্যাচেলরদের পুরোপুরি হোটেলের খাবারের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এতে মাসের হাতখরচও বেড়ে গেছে।’ শেওড়াপাড়ার গৃহিণী পারভীন আক্তার বলেন, ‘খাবার যেমন রান্না করতে সমস্যা হচ্ছে তেমনি পানি ফুটাতে পারছি না। উপায় না দেখে যেদিন গ্যাস থাকে না সেদিন আমরা আত্মীয়দের বাসায় চলে যাই।’ সরেজমিন মিরপুরের কয়েকটি এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৩ জুলাই সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা— মোট ১২ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকার কথা বলা হলেও ১২ ঘণ্টার বেশি অতিবাহিত হওয়ার পরও গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়নি। সেদিন রাত সাড়ে ১১টার পর গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হয়।

সর্বশেষ খবর