রবিবার, ২০ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

শাহ সিমেন্টের ৯০ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি

নিজস্ব প্রতিবেদক

আবুল খায়ের গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান শাহ সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজের বিরুদ্ধে ৯০ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটির তিন বছরের (২০১২, ২০১৩ ও ২০১৪) আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এই ভ্যাট ফাঁকির বিষয়টি উদ্ঘাটন করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মূসক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর।

সূত্র জানায়, উপকরণ কেনার তথ্য গোপন, অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান থেকে কাঁচামাল ক্রয়সহ নানা কৌশলে এ ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে শাহ সিমেন্ট। ২০১৪ সালে শাহ সিমেন্টের রাজস্ব ফাঁকির আরও একটি বড় ঘটনা উদ্ঘাটন করেছিল মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বিভাগের বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ)। এলটিইউ প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ৭৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ আনে। উৎপাদন ক্ষমতার দিক থেকে দেশের অন্যতম বৃহৎ বড় কোম্পানি শাহ সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। এর কারখানা মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুরের চরমিরেশ্বরে। আবু সাঈদ চৌধুরী শাহ সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। শাহ ব্র্যান্ডের সিমেন্ট স্থানীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বাজারজাত করে প্রতিষ্ঠানটি। এনবিআর সূত্র জানায়, ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কোম্পানির হিসাব নিরীক্ষা করা হয়। এর আগে ২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির নিরীক্ষা করা হয়েছে। নিরীক্ষা মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটি ১৩৩ কোটি ৯ লাখ ২৭ হাজার ২০ টাকার মূসক জমা দিয়েছে। ৩ হাজার ২৫৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকার উপকরণ বিদেশ থেকে আমদানি ও ৫২ কোটি ৬ লাখ টাকা ৮৯ পয়সার উপকরণ স্থানীয়ভাবে ক্রয় করেছে। এতে ১১ কোটি ৩ লাখ টাকার অব্যাহতি পেয়েছে। নিরীক্ষা মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটি ৫৫৮ কোটি ১৪ লাখ টাকার রেয়াত গ্রহণ করে। নিরীক্ষা মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটি ৪ হাজার ২১ কোটি ৭৮ লাখ টাকার সিমেন্ট উৎপাদন করেছে। ২০১২, ২০১৩ ও ২০১৪ সালের নিরীক্ষিত বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায় প্রতিষ্ঠানটি ৩ হাজার ৫৩২ কোটি ৫৫ লাখ টাকার সিমেন্ট তৈরির উপকরণ কিনেছে। কিন্তু মূসক রেজিস্টারে (মূসক-১৬) দেখানো হয়েছে, ৩ হাজার ৩১৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকার উপকরণ কেনার তথ্য। প্রতিষ্ঠানটি ২১৬ কোটি ১১ লাখ টাকার উপকরণ কেনার তথ্য আড়াল করেছে। প্রদর্শিত উপকরণের অনুমোদিত মূল্য ঘোষণা অনুযায়ী নির্ধারিত সংযোজন ধরে মূসক আরোপযোগ্য মূল্য হয় ২৭০ কোটি ১৮ লাখ টাকা।

শাহ সিমেন্টের প্রতিটি ব্যাগে ৫০ কেজি সিমেন্ট হিসেবে ধরে এ হিসাব করা হয়েছে। এর ওপর ভ্যাট বা মূসক হয় ৪০ কোটি ৫২ লাখ টাকা। যা প্রতিষ্ঠানটি তিন বছরে ফাঁকি দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মূল্য সংযোজন কর আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৩৭ এর উপধারা ৩ অনুযায়ী ফাঁকি দেওয়া মূসকের ওপর মাসিক ২% হারে সুদ হয় ৩৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। সুদসহ উপকরণে শাহ সিমেন্ট ৭৮ কোটি ৯ লাখ টাকার মূসক ফাঁকি দিয়েছে।

শাহ সিমেন্ট অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান হতে উপকরণ ক্রয়, ক্রয় পুস্তকে কম উপকরণ দেখানো, বিধিবহির্ভূত নমুনা সরবরাহ, উপকরণ মূল্য বৃদ্ধি ৫% হওয়া সত্ত্বেও বিধিবহির্ভূতভাবে রেয়াত গ্রহণ ও উেস মূসক জমা না দেওয়ার মাধ্যমে মোট ৪৭ কোটি ১১ লাখ টাকার মূসক ফাঁকি দিয়েছে। ফাঁকিকৃত মূসকে সুদের পরিমাণ ৪২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। তিন বছরে সুদসহ ভ্যাট ফাঁকির পরিমাণ ৮৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা। শাহ সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ভ্যাট ফাঁকি রোধে নিরীক্ষা মেয়াদ প্রতিষ্ঠানটির পরিশোধকৃত ১৩৩ কোটি ৯ লাখ টাকার সিটিআর যাচাই করার জন্য এলটিইউকে অনুরোধ জানিয়েছে মূসক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। শাহ সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজের ম্যানেজার (ভ্যাট) জামাল উদ্দিন মজুমদার জানান, রিপোর্ট এখনো ফাইনাল হয়নি। আমরা একটা চিঠি পেয়েছি। যে অভিযোগ করা হয়েছে ভ্যাট আইনে তা কতটুকু টিকবে না টিকবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। অভিযোগগুলো সঠিক নয়। তাদের চিঠির জবাবে আমরা প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরব।

সর্বশেষ খবর