মঙ্গলবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

জনগণের প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করা যেতে পারে : ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

জনগণের প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করা যেতে পারে : ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘দেশের সংবিধানে যেহেতু বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটে, তাই প্রয়োজনে তা পরিবর্তন করা যেতে পারে।’ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে দেখতে গিয়ে গতকাল বিএনপি মহাসচিব এ মন্তব্য করেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। কাদের সিদ্দিকী রবিবার টাঙ্গাইলে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহর তত্ত্বাবধায়নে তার চিকিৎসা চলছে। মির্জা ফখরুল বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর চিকিৎসার খোঁজ নেন এবং তার আরোগ্য কামনা করেন। এ সময়ে অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ছাত্র নেতা ইসমত কাদির গামা, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান খোকা, অধ্যাপক নাজিউর রহমান চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। কাদের সিদ্দিকীর পাশে বসে বিএনপি মহাসচিব কথা বলার একপর্যায়ে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ কেবিনে প্রবেশ করেন। বঙ্গবীরের একপাশে মির্জা ফখরুল এবং অন্যপাশে কাজী ফিরোজ বসে কথা বলেন কিছুক্ষণ। এরপর মির্জা ফখরুল যান সদ্য প্রয়াত দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাংবাদিক সঞ্জীব চৌধুরীর বাসভবনে। এ সময় তার পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানান। বিএনপি নেতা গৌতম চক্রবর্তীসহ অনেকেই তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন। নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ব্যাখ্যা ‘সঠিক’ নয় বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘সহায়ক সরকারের ব্যাখ্যা তিনি (ওবায়দুল কাদের) যেটি দিয়েছেন, সেটা সঠিক নয় বলে আমার কাছে মনে হয়। কারণ সহায়ক সরকার বলতে আমরা যেটা বুঝিয়েছি সেটা হচ্ছে— যে একটা সম্পূর্ণ দল-নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকার থাকবে নির্বাচনের সময়। এটার সঙ্গে তাদের (আওয়ামী লীগ) যে চিন্তা, সেই চিন্তার কোনো মিল নেই।’

তিনি বলেন, ‘আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে সহায়ক সরকারের ব্যাপারে কথা বলে নির্বাচনে যাতে সব দল অংশগ্রহণ করতে পারে। সেই একটা ব্যবস্থা নিয়ে আমরা আগামী নির্বাচনে যেতে চাই। আমরা নির্বাচনে অবশ্যই যেতে চাই, সেই নির্বাচনটা যেন সবার অংশগ্রহণে হয় এবং নিরপেক্ষ হয়, সেটাই আমরা দাবি করে আসছি।’ রবিবার নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার এএইচসি উচ্চবিদ্যালয়ে ঈদ পুনর্মিলনী ও শিক্ষক সম্মাননা অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সহায়ক সরকার সংবিধানেই আছে। শেখ হাসিনার সরকারই আগামী নির্বাচনে সহায়ক সরকারের ভূমিকা পালন করবে। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করবে।’ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এরকম একটা সরকার তারা চাচ্ছে না। এর মূল কারণটা হচ্ছে যে, তারা একদলীয় একটা শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায় একতরফা একটা নির্বাচন করে। আমরা বলতে চাই, এবার এটা সম্ভব হবে না। এবার দেশের মানুষও তা গ্রহণ করবে না। যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন তারা কেউ তাদের এই চিন্তাভাবনাগুলো মেনে নেবে না।’

সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে—সরকারের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ফখরুল বলেন, ‘এ কথা  তারা বহুবার বলে এসেছে। সংবিধান অনেকবার এর আগে পরিবর্তনও করা হয়েছে। ১৯৯১ সালে সংবিধান স্থগিত রেখে সংবিধান পরিবর্তন করা হয়েছে, ‘৯৬ সালে সংবিধান পরিবর্তন করা হয়েছে।’ মিয়ানমারের রাখাইনে চলমান সহিংসতার মুখে বাংলাদেশ সীমান্তে রোহিঙ্গাদের প্রবেশ নিয়েও কথা বলেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আমরা সুনির্দিষ্টভাবে বলেছি, আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বিবৃতি দিয়েছেন যে, এটা অমানবিক শুধু নয়, এটা মানবতাবিরোধী একটা অপরাধ। আমরা এ ব্যাপারে অতিদ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জাতিসংঘের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি, তাদের ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। সরকারের উচিত, যারা এভাবে বিতাড়িত হয়ে আসছে, তাদের সাময়িকভাবে আশ্রয় দেওয়া এবং মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে অতিদ্রুত আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তাদেরকে সসম্মানে তাদের দেশে ফেরতের ব্যবস্থা করা।’

সর্বশেষ খবর