রবিবার, ১ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

আজ পবিত্র আশুরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

আজ পবিত্র আশুরা

আজ রবিবার, হিজরি বর্ষের ১০ মহররম, পবিত্র আশুরা। সারা বিশ্বের মুসলমানদের কাছে আজকের দিনটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যময়। ইসলাম ধর্মমতে, মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন এ দিনেই পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং এই দিনেই কিয়ামত বা পৃথিবী ধ্বংস হবে। বেহেস্ত থেকে মানব জাতির আদি পিতা হজরত আদম (আ.) ও মা হাওয়া (আ.) পৃথিবীতে আগমনের ঘটনা ঘটে এই দিনেই। আবার ৩০০ বছর প্রার্থনার পর এই দিনেই তারা মহান আল্লাহর ক্ষমা লাভ করেন এবং আরাফার ময়দানে তাদের পুনরায় সাক্ষাৎ লাভ ঘটে। এই দিনেই বিশ্বে সংঘটিত অলৌকিক অনেক ধর্মীয় ঘটনার কারণে সব আসমানি কিতাবের অনুসারীদের কাছেই ১০ মহররম বিশেষভাবে মহিমান্বিত। এ ছাড়া এই দিনেই ঐতিহাসিক কারবালা প্রান্তরে আল্লাহর প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) সপরিবারে মর্মান্তিকভাবে শাহাদাতবরণ করেন। ইসলামের ইতিহাসের মর্মান্তিক এ বিয়োগান্তক ঘটনা দিনটিকে দিয়েছে শোকাবহ বেদনার বিশেষ মাত্রা। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ৯ ও ১০ মহররম দুই দিন রোজা পালনসহ নফল ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে দিনটি পালন করে থাকেন। বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে দিনটি পালনে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। আশুরা উপলক্ষে বাংলাদেশে আজ সরকারি ছুটি। শিয়া মুসলমানরা দিনটিকে শোক ও মর্সিয়া দিবস হিসেবে পালন করে থাকেন। আজ রাজধানীতে হোসনি দালান ও মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় তাজিয়া মিছিল বের করবে শিয়া সম্প্রদায়। পবিত্র আশুরা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন। যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে আশুরা পালন উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন গতকাল বাদ মাগরিব বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ‘আশুরার গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ শীর্ষক ওয়াজ ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন রাজধানীতে বসবাসরত শিয়া মুসলমানদের পবিত্র আশুরা পালনের প্রস্তুতি দেখতে গতকাল পুরান ঢাকার হোসনি দালান পরিদর্শন করেন। হিজরি ৬১ সালের ১০ মহররম কারবালা প্রান্তরে ইসলামের সুমহান আদর্শের পতাকা সমুন্নত রাখতে ১০ দিন অবরুদ্ধ থেকে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) নির্মমভাবে শাহাদাতবরণ করেন। কিন্তু তবুও মদ্যপ, ব্যভিচারী ও বেনামাজি ইয়াজিদকে ইসলামের খলিফা ঘোষণা করে তার হাতে বাইয়াত হওয়ার অন্যায় দাবির কাছে নতি স্বীকার করেননি। এভাবেই তিনি উম্মতে মোহাম্মাদীর সামনে কোনো ধরনের অন্যায়, জুলুম ও অত্যাচারের কাছে নতি স্বীকার না করার দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠা করে যান। ইতিহাসের বর্ণনা অনুযায়ী, ১ মহররম বর্তমান ইরাকের কুফা নগরীর কাছে ফোরাত নদের তীরে কারবালা প্রান্তরে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন ইমান হোসাইন। নবীর আদরের নাতির পরিবার-পরিজন ও সাথীদের জন্য ফোরাতের পানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। কুফার গভর্নর ইবনে জিয়াদের নিয়োজিত বাহিনীর প্রধান সাদ ইবনে ওমর ইয়াজিদকে ইসলামের খলিফা ঘোষণা করে তার হাতে বাইয়াত গ্রহণের জন্য ইমাম হোসাইনের ওপর চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু তিনি ইসলামের আদর্শ রক্ষার স্বার্থে বেনামাজি, মদ্যপ ও ধর্ম-কর্মের বিষয়ে উদাসীন ইয়াজিদকে ইসলামের খলিফা ঘোষণা ও তার ইমামত স্বীকার করতে অস্বীকৃতি জানান। ইয়াজিদের বাইয়াত মানতে রাজি না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত নির্মমভাবে নবী দৌহিত্রকে হত্যা করা হয়।

অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা সব মানুষের কর্তব্য : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘অন্যায়, অবিচার, অন্যায্য ও অবৈধ অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হওয়া প্রতিটি মানুষের কর্তব্য। ইসলাম আমাদের সেই শিক্ষাই দেয়। মহানবী (সা.) অন্যায়কে প্রতিহত করতে নির্দেশ দিয়ে গেছেন। তাঁর উম্মত হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য— যে কোনো গণবিরোধী ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর মানুষকে দমিয়ে রাখার দুঃশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা।’ পবিত্র আশুরা উপলক্ষে গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বাণীতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। খালেদা জিয়া বলেন, ‘পবিত্র আশুরার এই দিনে কারবালা প্রান্তরের সেই হৃদয়বিদারক ঘটনা আজও মানুষকে কাঁদায় এবং বেদনার্ত করে। অন্যায় আর অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) এই দিনে শাহাদাতবরণ করেছিলেন। সত্য ও ন্যায়ের জন্য তাঁর আত্মত্যাগ বাংলাদেশসহ বিশ্বের মুসলমানদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। ক্ষমতার প্রতি নিবিড় নিবিষ্ট মোহে আচ্ছন্ন থেকে যারা ন্যায়-নীতি-ন্যায্যতাকে অগ্রাহ্য করে তাদের বিরুদ্ধেই ইমাম বাহিনী মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে লড়াই চালিয়ে গেছে। কারবালায় ইমাম বাহিনীর আত্মত্যাগ সর্বকালে দেশে দেশে বর্বর দুঃশাসনের কবল থেকে মুক্ত হতে মজলুম মানুষকে প্রেরণা জোগাবে।’ বিএনপি-প্রধান হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) ও তাঁর পরিবারের সদস্যসহ কারবালার সব শহীদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর