সোমবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

দেশ স্বাধীন হলেও মুক্তি পেল না জনগণ

বাদল নূর

দেশ স্বাধীন হলেও মুক্তি পেল না জনগণ

টিপু বিশ্বাস

জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস বলেছেন, দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে দেশ পাকিস্তানের হাত থেকে মুক্ত হলো। কিন্তু শ্রমিক-কৃষক, ক্ষেতমজুর-নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হলো না। দেশ স্বাধীন হলেও জনগণ মুক্তি পেল না। জনগণের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

টিপু বিশ্বাস বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে গতকাল আলাপ করছিলেন। তিনি বলেন, এ দেশে ৪৭ বছর ধরে ঘুরেফিরে কখনো সামরিক স্বৈরাচার, কখনো নির্বাচিত স্বৈরাচার সরকার ক্ষমতায় আসছে। জনগণের ভোট ও ভাত এবং দেশের উন্নয়নের কথা বলে যারাই ক্ষমতায় এসেছে তাদের কাছ থেকে প্রকৃতপক্ষে সুবিধা পেয়েছে আমলা, দালাল ও ধনীরা। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-জামায়াত এবং জাতীয় পার্টি সব সরকারের সময়ই শ্রমিক শোষিত ও নির্যাতিত হয়েছে। সব সরকারই দেশের প্রতিষ্ঠিত কলকারখানা ধ্বংস ও লুটপাট করেছে। পাকিস্তান আমলের পুরনো কল কারখানা সবই ধ্বংস হয়ে গেছে। হাজার হাজার শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছে। কৃষক জমি হারিয়েছে, শ্রমিক কাজ পাচ্ছে না। পাকিস্তান আমলে ভূমিহীনের সংখ্যা ছিল শতকরা ৩২ জন আর এখন ভূমিহীনের সংখ্যা শতকরা ৭৪। বর্তমানে দেশের প্রধান শিল্প হয়ে দাঁড়িয়েছে পোশাক খাত; যা মৌলিক শিল্পের সংজ্ঞায় পড়ে না। এ শিল্প চলছে মূলত শ্রমিকদের সস্তা শ্রমের ওপরে। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় বসে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে। গুম-হত্যা করা হচ্ছে। এই সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন নিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে হবে বলে মনে হচ্ছে না। আবার বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের যে দাবি করেছে তা আওয়ামী লীগ মেনে নেবে না। নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ নির্বাচন করবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। আবার এটাও আশা করা যায় না যে, বিএনপির মতো দল যারা অতীতে গণবিরোধী ভূমিকা পালন করেছে তারা ক্ষমতায় এলে জনগণ মুক্তি পাবে। টিপু বিশ্বাস বলেন, আমরা চাই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলন-সংগ্রাম এবং আগামী নির্বাচন। আগামী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশে এমন একটি পরিবেশ প্রতিষ্ঠিত হোক যেখানে জনগণ কথা বলতে পারবে, আন্দোলন করতে পারবে। জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত হবে। কৃষক তার ফসলের ন্যায্য মূল্য পাবে। অন্যদিকে মধ্যস্বত্বভোগী ও ব্যবসায়ীরা প্রধান খাদ্য চাল-আটাসহ প্রতিটি দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। তাই এগুলো জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। আমাদের দল জাতীয় গণফ্রন্ট মনে করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ভারতসহ বিদেশি ধনিক শ্রেণি যারা অতীত ও বর্তমান সরকারকে নানাভাবে সমর্থন করছে তারা এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যাটিতে শুধু মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয় জড়িত নয়, এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক শক্তিসমূহ জড়িত। জানা গেছে, যেসব অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের বসবাস সেখানে মূল্যবান খনিজ সম্পদ রয়েছে। দক্ষিণ চীন সাগরে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ঘাঁটি করে অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি করেছে। আবার চীন-রাশিয়া দক্ষিণ চীন সাগরে মার্কিন ঘাঁটির বিরুদ্ধে মিয়ানমার সামরিক জান্তাকে সমর্থন দিচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। টিপু বিশ্বাস সেই আন্দোলনে জনগণকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। টিপু বিশ্বাস ১৯৪৪ সালের ডিসেম্বরে পাবনায় জন্মগ্রহণ করেন। পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে লেখাপড়ার সময় ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দেন। এরপর পূর্ব বাংলা ছাত্র ইউনিয়ন এবং মওলানা ভাসানীর কৃষক সমিতিতে অংশ নেন। ১৯৬৯ সালে ১১ দফা আন্দোলনে অংশগ্রহণকালে গ্রেফতার হয়ে দুই বছর কারাভোগ করেন।

’৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ’৭৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি ঢাকায় গ্রেফতার হন এবং পাঁচ বছর কারাভোগ করেন।

সর্বশেষ খবর