বৃহস্পতিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

উড্ডয়নের পরেই চাকা খুলে পড়ল বিমানের

নিজস্ব প্রতিবেদক

উড্ডয়নের পরেই চাকা খুলে পড়ল বিমানের

আবারও উড্ডয়নের পর পরই বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটের চাকা খুলে রানওয়েতে পড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে ক্যাপ্টেন নিরাপদে ওই ফ্লাইটটিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করাতে সক্ষম হয়েছেন।

গতকাল সকালে ৬৬ জন যাত্রী নিয়ে সৈয়দপুর বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসার সময় এ ঘটনা  ঘটে। ফ্লাইটের চাকা খুলে পড়ার এই ঘটনায় চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান বিমানের পরিচালক আলী আহসান বাবু। বিমানের ডেপুটি চিফ অব ফ্লাইট সেফটি ক্যাপ্টেন এনামকে প্রধান করে এ কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিমানটিতে পাইলটসহ মোট ৭১ জন ছিলেন। সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে উড়োজাহাজটি ঢাকায় জরুরি অবতরণ করে। বিকালে বিমানের খুলে পড়া চাকাটি সৈয়দপুর বিমানবন্দরের রানওয়ে থেকে কুড়িয়ে এনে ঢাকায় প্রকৌশল শাখায় জমা দেওয়া হয়েছে। কী কারণে এ ঘটনা ঘটেছে— তা কমিটির অনুসন্ধান শেষে জানা যাবে। জানা গেছে, সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানের ড্যাশ ৮ উড়োজাহাজে ৬৬ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু উড্ডয়নের পর পরই উড়োজাহাজের একটি চাকা খুলে পড়ে যায়। সৈয়দপুর কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে ক্যাপ্টেনকে ফ্লাইটের চাকা খুলে পড়ে যাওয়ার বিষয়ে জানানো হয়। এ সংবাদ পেয়ে ফ্লাইটের অপারেটিং ক্যাপ্টেন আতিক ও ফাস্ট অফিসার ইয়ামিন ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমার্জেন্সি ল্যান্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন। সে মোতাবেক ঢাকায় ইমার্জেন্সি ল্যান্ডিংয়ের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়। সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে ক্যাপ্টেন আতিক রানওয়ের ওপর লো লেভেল ফ্লাই করলে তাকে জানানো হয় যে পেছনের ডানপাশের ৪ নম্বর চাকাটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব প্রস্তুতি শেষে ক্যাপ্টেন আতিক নিরাপদে ও সফলভাবে ফ্লাইট অবতরণ করান। এ ঘটনায় আরোহী ও উড়োজাহাজের কোনো ক্ষতি হয়নি। এদিকে বারবার কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটছে— জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, বারবার বলছেন কেন? আপনারা সব কিছুকে এভাবে দেখছেন কেন? এ ঘটনায় পাইলট অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ফ্লাইটটি নিরাপদে অবতরণ করিয়েছে। এ জন্য পাইলটকে পুরস্কৃত করা উচিত। এতগুলো যাত্রীকে নিরাপদে রেখে যেভাবে ল্যান্ড করেছেন সেটাই হাইলাইট করতে হবে। কিন্তু উড়ন্ত অবস্থায় কেন চাকা খুলে পড়ে যায়? সেটার জন্য ইঞ্জিনিয়ার শাখার অবহেলা অথবা অন্য কেউ দায়ী কি না? এমন প্রশ্ন করা হলে মন্ত্রি বলেন, সেটা ভিন্ন কথা। সেটা আপনারা খুঁজে বের করেন। এ বিষয়ে এভিয়েশান বিশেষজ্ঞ আশীষ রায় চৌধুরী বলেন, আমার জীবনে এমন ঘটনা দেখিনি। সাধারণত উড্ডয়নের সময় চাকা ফেটে যাওয়া বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনা ঘটে থাকে। এ অবস্থায় অবতরণ করাটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হলেও এক চাকার ওপর নির্ভর করেও অবতরণ করা যায়। কারণ একটা চাকা নষ্ট হলেও সাপোর্টিং আরেকটি চাকা থাকে। এমনটি হতেই পারে। কিন্তু উড্ডয়নের পর চাকাই খুলে পড়ে যায় এবং সেটাকে পরে খুঁজে বের করতে হয়— এটা তো অস্বাভাবিক ঘটনা। এর মানে বিমানের প্রকৌশল শাখায় ঠিকমতো উড়োজাহাজের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ হচ্ছে না। ওই উড়োজাহাজ উড্ডয়নের আগের চেকআপে সেটা ধরা পড়ল না কেন? চাকা সংযুক্তিতে বড় ধরনের দুর্বলতা ও ত্রুটি ছিল বলেই এমনটি ঘটেছে। আশীষ রায় চৌধুরী আরও বলেন, ‘আসলে বিমানের প্রকৌশল শাখার প্রতি কারোর কোনো নজর ও গুরুত্ব নেই। যে কারণে সাত মাস ধরে এখানে পরিচালকের পদ শূন্য থাকলেও সেটা পূরণ করতে পারছে না বিমান। বিমান যে কীভাবে চলছে— তা কেবল ভগবানই জানেন।’

সর্বশেষ খবর