বৃহস্পতিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা
গোয়েন্দা কাহিনী ৫৫

প্রাণ দিতে হলো পুলিশকে

মির্জা মেহেদী তমাল

প্রাণ দিতে হলো পুলিশকে

ঢাকায় লাশ পড়ছে। রক্ত ঝরছে। আজ  রেললাইনের কাছে, কাল রাস্তায়। অস্ত্রধারীদের মধ্যে সংঘর্ষ যেন খেলায় পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে মাদক ব্যবসার আধিপত্য নিয়েই খরচা হচ্ছে গুলি আর বোমা। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি তেজগাঁও এলাকার। এই এলাকায় গজিয়ে ওঠা এক সন্ত্রাসী এতটাই বেপরোয়া, পুলিশ  দেখলেই সে এবং তার বাহিনী গুলি চালাতে থাকে। বোমা ফাটায় মুড়িমুড়কির মতো। এসব এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর। পুলিশ এই অপরাধী ধরতে মরিয়া। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছে, তেজগাঁও এলাকার রায়পুরা সেইল্লা গোটা এলাকার নিয়ন্ত্রণ করছে সে। তাকে যেভাবেই হোক গ্রেফতার করতেই হবে।

তেজগাঁও রেলস্টেশন। পূর্ব দিকেই পরিত্যক্ত রেললাইনের পর বেশ কয়েকটি বগি। সেখানেই কাপড় দিয়ে চোখ আর দড়ি দিয়ে হাত বাঁধা এক যুবককে বসিয়ে রাখা হয়েছে। ৮-১০ জন তাকিয়ে আছে। তারা অপেক্ষায় তাদের বস সেইল্লার জন্য। তিনি আসার পর যা করার করবে। চোখ বাঁধা যুবকটি খুব হাঁকডাক করছে। অই খুইল্লা দে কইলাম। পরে কিন্তু তোগো খবর হইবো। ঘিরে থাকা যুবকরা অট্টহাসি দেয়। একজন বলে, আরে তোর দিন শেষ। সেইল্লা আইলেই তো কাহিনী বুঝতে পারবি। সন্ধ্যার পর আসে সেইল্লা। দাঁড়ায় চোখ বাঁধা যুবকটির পিছনে। চিত্কার করে বলে, কিরে গেসু, তোরে আজ কে বাঁচাইবো? কেঁপে ওঠে গেসু। ভাবে আজ বোধ হয় তার জীবনের শেষ দিন। সে অনুনয়-বিনয় করে বলে, সেইল্লা, তুই আমার ছোট বোনের জামাই। কিন্তু তোরে আমি দেখি ভাই হিসেবে। এরপরেও তুই আমারে মারবি? সেইল্লা কাটা রাইফেল হাতে নেয়। চিত্কার করে বলে, আজ আমি কিছু শুনুম না। বলেই রাইফেলের ট্রিগারে চাপ দেয়। গুলি বেরিয়ে গেসুর পিঠ-বুক এফোঁড়-ওফোঁড়। দুই হাত শূন্যে উঠে একটু দূরে যেয়ে পড়ে গেসু। সেখানে এগিয়ে যায় সেইল্লা। আবারও চিত্কার, আবারও গুলি। গেসুর প্রাণ প্রদীপ আর নেই। সেইল্লা গুলি করার সময় চিত্কার করে। এটা তার অভ্যাস। সেইল্লার মাদকের স্পট চাঁদাবাজির টাকা নিয়ে বিরোধের জের ধরে নিজের সম্বন্ধিকেই দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়। এই সেইল্লাই পুলিশের ঘুম হারাম করে রাখে দীর্ঘ দিন ধরে। কিন্তু পুলিশ তাকে ধরতে পারছিল না। পুলিশ রীতিমতো ভয় করত এই সন্ত্রাসীকে। পরে জীবনের বিনিময়ে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়। পুলিশ ও অন্য সূত্রগুলো জানিয়েছে, দূর থেকে সেইল্লা যদি পুলিশের টুপি দেখতে পেতেন, সঙ্গে সঙ্গেই গুলি চালাতেন। সেইল্লার স্ত্রী পারভীনও পিস্তল চালাতে পারদর্শী ছিলেন। ২০০২ সালের দিকে সেইল্লা তেজগাঁও থেকে একদিন যাচ্ছিলেন উত্তরায়। জসীমউদ্দীন রোডের কাছাকাছি পুলিশের চেকপোস্টে পড়ে। পুলিশ দেখা মাত্রই সেইল্লা গুলি চালিয়ে এক পুলিশ সদস্যকে হত্যা করেন। তিনি গাড়ি ঘুরিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। পুলিশের একটি দল তাকে ধাওয়া করে পাকড়াও করে। কিছুদিন জেলে থেকে ফের জামিনে মুক্তি। পুলিশ আবারও তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করে। তেজগাঁও এলাকায় তাকে গ্রেফতার করতে গেলে তুমুল বন্দুকযুদ্ধ হয়। সেখানে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন আন্ডারওয়ার্ল্ডের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সেইল্লা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর