বৃহস্পতিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

রোহিঙ্গা ইস্যুতে মার্কিন কংগ্রেসে আবার আলোচনা

প্রতিদিন ডেস্ক

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ও অন্যান্য সংখ্যালঘু মানুষের ওপর দেশটির সেনাবাহিনীর অত্যাচার ও সহিংসতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এর ফলে দেশের ভিতরে ও সীমান্ত অতিক্রম করে বাস্তুচ্যুত মানুষের ঢল নেমেছে। এতে প্রতিবেশী বাংলাদেশে সৃষ্টি হয়েছে এক মানবিক সংকট। মার্কিন কংগ্রেসের এক রিপোর্টে এ কথা বলা হয়েছে। রিপোর্টে আরও বলা হয়, অর্ধশতাব্দী ধরে সামরিক শাসনের পর সম্প্রতি নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে মিয়ানমারে শাসনব্যবস্থায় কিছুটা অর্জন হয়েছে। ভঙ্গুর এই ক্ষমতার পালাবদল বা অর্জনকে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো নির্যাতন খর্ব করে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট কমিটি অন ফরেন রিলেশন্সের রিপোর্টে এসব কথা বলেছেন পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরবিষয়ক ব্যুরোর উপসহকারী মন্ত্রী ডব্লিউ প্যাট্রিক মারফি ও জনসংখ্যা, শরণার্থী, অভিবাসনবিষয়ক উপসহকারী মন্ত্রী মার্ক স্টোরেলা। ওয়াশিংটন ডিসিতে তারা মঙ্গলবার কমিটির কাছে দীর্ঘ এক প্রতিবেদন দাখিল করেন মিয়ানমার পরিস্থিতির ওপর। এতে তারা তুলে ধরেছেন মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বর্তমান অবস্থা, এ ক্ষেত্রে কূটনৈতিক তত্পরতা, রাখাইন সংকটে মানবিক চ্যালেঞ্জ, দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জসহ অনেক বিষয়। কমিটির চেয়ারম্যান সিনেটর করকার, র্যাংকিং সদস্য কার্ডিনসহ উপস্থিত অন্যদের উদ্দেশে তারা বলেন, রাখাইনে ভয়াবহ মানবিক ট্র্যাজেডি চলছে। এতে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে। এর আগে তারা ৫ অক্টোবর এই কমিটিতে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। সে প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্যাট্রিক মারফি ও মার্ক স্টোরেলা বলেন, ‘এখনো রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশ অব্যাহত আছে। রাখাইনে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতার বিশ্বাসযোগ্য রিপোর্ট পাচ্ছি আমরা। এর মধ্যে রয়েছে অগ্নিসংযোগ, শারীরিক ক্ষতি করার হুমকি। সুনাম আছে এমন আন্তর্জাতিক এনজিওগুলো বলছে, নতুন স্যাটেলাইন ইমেজে দেখা গেছে প্রায় ৩০০ গ্রাম আংশিক বা পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে ২৫ আগস্টের পর।’

‘জাতিগত নিধন’ বলতেও আপত্তি মার্কিন কর্মকর্তার একাংশের : রাখাইনের ঘটনার পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনার আগ পর্যন্ত জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তারা রোহিঙ্গাবিরোধী সহিংসতাকে ‘জাতিগত নিধন’ আখ্যা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। নিউ দিল্লি টাইমসের এক প্রতিবেদন এ কথা বলা হয়েছে। সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের পক্ষ থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি তাদের মঙ্গলবারের এক প্রতিবেদনে খবর দেয়, রাখাইনের সহিংসতাকে ‘জাতিগত নিধন’ আখ্যা দিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের জন্য একটি সুপারিশপত্র তৈরি করছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। আন্তর্জাতিক আদালতের বিধান অনুযায়ী কেবল জাতিগত নিধনের কারণে আইনি পথ নেওয়ার সুযোগ নেই। সে কারণে রাখাইনের ঘটনায় ‘জাতিগত নিধনে’র অভিযোগ আনলে যুক্তরাষ্ট্রকে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনো আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে না। জাতিসংঘের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় জাতিগত নিধনযজ্ঞকে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার সমান্তরাল মনে করা হয় না। আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় এটি কোনো স্বতন্ত্র অপরাধ হিসেবেই বিবেচিত নয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতও জাতিগত নিধনকে গণহত্যা বিবেচনা করে না। এটিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই শুধুই জাতিগত নিধন মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবেও বিবেচিত হয় না। তবে নিউ দিল্লি টাইমস বলছে, আইনি কোনো পদক্ষেপের সুযোগ না থাকা সত্ত্বেও রোহিঙ্গা নিপীড়নকে ‘জাতিগত নিধন’ আখ্যা দেওয়ার ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তাদের একাংশের সায় নেই। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াবিষয়ক মার্কিন উপসহকারী মন্ত্রী প্যাট্রিক মারফি মঙ্গলবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকাকে বলেন, ‘রাখাইন রাজ্যের ভিতরে আমরা গুরুতর নৃশংসতার আলামত দেখেছি।’ রাখাইনের সহিংসতাকে ওয়াশিংটন ‘গণহত্যা’ নাকি ‘জাতিগত নিধন’ আখ্যা দেবে সেই প্রশ্নের প্রসঙ্গ টেনে প্যাট্রিক বলেন, ‘কীভাবে একে বর্ণনা করা যাবে সে ব্যাপারে আলোচনার টেবিলে সব সুযোগই রাখা আছে।’

এদিকে মার্কিন গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শ্রমবিষয়ক সাবেক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী টম মালিনৌস্কি ভয়েস অব আমেরিকাকে বলেন, ‘জেনোসাইড কনভেনশন অনুযায়ী গণহত্যা হলো একটি আইনি পরিভাষা। জাতিগত নিধন আইনি পরিভাষা নয়। নির্দিষ্ট ধরনের নৃশংসতা বর্ণনা করতে আমরা এ বুলিটি ব্যবহার করি। তা ছাড়া, এ ধরনের আখ্যাগুলো (জাতিগত নিধন) অতটা গুরুতর নয়। মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক সংস্কারের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির সম্পর্কোন্নয়ন হয়েছে, কিন্তু এ ধরনের আখ্যা (জাতিগত নিধন) কোনো আইনগত বাধ্যবাধকতা বহন করে না।’

সর্বশেষ খবর