বৃহস্পতিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা
মানি লন্ডারিং অনিয়ম দুর্নীতি

সোনালী ব্যাংক ইউকে’র কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ

মানিক মুনতাসির

মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে ব্যর্থতা এবং অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে সোনালী ব্যাংক ইউকে-এর কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক আবু ফারাহ মো. নাছের স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ১৯ অক্টোবর ইস্যু হওয়া ওই চিঠির কপি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব ইউনূসুর রহমানের কাছে পাঠানো হয়েছে। অন্যথায় সোনালী ব্যাংক ইউকে-এর কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে একজন বিদেশি প্রজেক্ট ম্যানেজার নিয়োগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের পরামর্শ অবশ্য যুক্তরাজ্যের (ইউকে) প্রুডেন্সিয়াল রেগুলেশন অথরিটি আগে দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়, সোনালী ব্যাংক (ইউকে) লিমিটেডের উইন্ডিং ডাউন (বন্ধ) এর সিদ্ধান্ত যদি সরকারি পর্যায়ে গৃহীত না হয় তবে যুক্তরাজ্যের প্রুডেন্সিয়াল রেগুলেশন অথরিটির পরামর্শ অনুযায়ী একজন বিদেশি প্রকল্প ব্যবস্থাপক নিয়োগ দিতে হবে। ওই প্রকল্প ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠানটির কার্যকম স্বাভাবিক করতে সম্ভাব্য পরিকল্পনা তৈরি করবেন। এতে সোনালী ব্যাংক ইউকে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে যুক্তরাজ্যের প্রুডেন্সিয়াল রেগুলেশন অথরিটির এ পরামর্শ না শুনলে কার্যক্রম বন্ধ করা ছাড়া আর কোনো পথ থাকবে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সোনালী ব্যাংক ইউকে-এর কার্যক্রম নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বিব্রত। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কার্যক্রম বন্ধের বিকল্প হিসেবে একজন বিদেশি প্রজেক্ট ম্যানেজার নিয়োগ করা যায় কিনা-সে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অপর একটি সূত্র জানায়, সম্প্রতি মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে ব্যর্থতার দায়ে বড় অঙ্কের জরিমানা গুনতে হয়েছে সোনালী ব্যাংক ইউকে কর্তৃপক্ষকে। এ জন্য ব্যাংকটির ক্লিয়ারিং কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছিল যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই ব্যাংকে বাংলাদেশি যেসব ব্যাংকের ‘নস্ট্রো’ অ্যাকাউন্ট ছিল তা বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেওয়া শর্ত পালনে ব্যর্থ হওয়ায় সম্প্রতি এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। জানা গেছে, প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছ থেকে রেমিট্যান্স আহরণ ও ঋণপত্রের নিশ্চয়তা দিতে ২০০১ সালে আলাদা কোম্পানি খুলে যুক্তরাজ্যে যাত্রা শুরু করে সোনালী ব্যাংক (ইউকে) লিমিটেড। এর ছয়টি শাখা খোলা হলেও নানা অনিয়ম ও ব্যর্থতার জেরে এরই মধ্যে চারটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে ব্যর্থ হওয়ায় গত বছরের অক্টোবরে সোনালী ব্যাংক ইউকেকে ৩১ কোটি টাকা সমপরিমাণ প্রায় ৩৩ লাখ পাউন্ড জরিমানা করে যুক্তরাজ্যের ফিন্যান্সিয়াল কনডাক্ট অথরিটি (এফসিএ)। একই সঙ্গে ১৬৮ দিন নতুন গ্রাহকের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। সেই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই এখন ব্যাংকটির পুরো কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অবশ্য প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তি উদ্ধার করে চালু রাখতে বিকল্প নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। যা আগে ইউকে সরকারের প্রুডেন্সিয়াল রেগুলেটরি অথরিটি থেকে দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, ব্যর্থতা, অনিয়ম আর দুর্নীতির কারণে ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছে সোনালী ব্যাংক ইউকে। উদ্ভূত এই পরিস্থিতি সামাল দিতে সোনালী ব্যাংক ইউকে পরিচালনা পর্ষদের জরুরি সভা করেছে। সোনালী ব্যাংক ইউকের পর্ষদ সদস্য হিসেবে সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ওবায়েদ উল্লাহ আল-মাসুদ বর্তমানে যুক্তরাজ্য সফরে আছেন। তিনি দেশে ফেরার পর প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশনার বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে তা জানা যাবে। শুধু তাই নয়, শর্ত ভেঙে সোনালী ব্যাংক ইউকেতে সম্প্রতি একজন পাকিস্তানি নাগরিককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ নিয়েও ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। শর্ত অনুযায়ী শুধু বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের প্রকৃত নাগরিকরাই প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়োগ পাওয়ার কথা।

সর্বশেষ খবর