শনিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
নাগরিক সমাবেশের আড়ালে আজ বিশাল শোডাউন

নির্বাচনী বার্তা দেবেন শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্মরণকালের বৃহত্তম সমাবেশের মাধ্যমে বড় ধরনের শোডাউন করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে ইউনেস্কো স্বীকৃতি দেওয়ায় নাগরিক সমাবেশ ডাকা হলেও এর মধ্য দিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সাংগঠনিক শক্তির মহড়া দেবে ক্ষমতাসীন দলটি। এই সমাবেশটিকে জনসমুদ্রে রূপ দিতে ব্যাপক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। আজকের নাগরিক সমাবেশে স্মরণকালের স্মরণযোগ্য জনসমাগম ঘটাতে চায় দলটি। আজকের এই নাগরিক সমাবেশ থেকে জাতির জনকের সোনার বাংলা গড়া, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা এবং জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে নির্বাচনী বার্তা দেবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই (তখন নাম ছিল রেসকোর্স ময়দান) ৭ কোটি বাঙালিকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা দেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম/এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ তার ওই ভাষণের ১৮ দিন পর পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালি নিধনে নামলে বঙ্গবন্ধুর ডাকে শুরু হয় প্রতিরোধযুদ্ধ। নয় মাসের সেই সশস্ত্র সংগ্রামের পর আসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। বিভিন্ন দেশের আরও ৭৭টি ঐতিহাসিক নথি ও প্রামাণ্য দলিলের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণকেও গত মাসের শেষে ‘ডকুমেন্টারি হেরিটেজ’ হিসেবে ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে’ যুক্ত করে নেয় ইউনেস্কো। এই স্বীকৃতির উদ্যাপনেই নাগরিক কমিটির ব্যানারে সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে সোহরাওয়ার্দীতে, যেখানে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন, যেখানে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে লেখা হয়েছিল বাঙালির মুক্তির দলিল। সেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই ৯০ ফুট নৌকার ওপর নির্মাণ করা হয়েছে মূল মঞ্চ। বিকাল ৩টায় সমাবেশ শুরু হবে জাতীয় সংগীত, ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ আর বাংলাদেশের ইতিহাসের সেই দিনটি নিয়ে কবি নির্মলেন্দু গুণের কবিতা আবৃত্তির মধ্য দিয়ে। নাগরিক কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যাপক হারুন-অর রশিদ জানান, সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার, শহীদজায়া শ্যামলী নাসরীন চৌধুরী, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও বাংলাদেশে ইউনেস্কোর কান্ট্রি ডিরেক্টর বিট্রিস কালদুল নাগরিক সমাবেশে বক্তব্য দেবেন। ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি ইউনেস্কোর প্রতিনিধির হাতে একটি ধন্যবাদ স্মারকও তুলে দেবেন। আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল জানান, আলোচনা ছাড়াও সমাবেশে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে। নির্মলেন্দু গুণ ছাড়াও সেখানে কবিতা আবৃত্তি করবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমির সমবেত সংগীতের পর শুরু হবে একক সংগীত। কিরণ চন্দ্র রায়ের স্ত্রী চন্দনা মজুমদার লোকসংগীত গাইবেন। রবীন্দ্রসংগীত শোনাবেন সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরীর ছেলে শিল্পী সাজেদ আকবর। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় থাকবেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার ও শহীদ বুদ্ধিজীবী আবদুল আলীম চৌধুরীর মেয়ে ডা. নুজহাত চৌধুরী। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, আজকের নাগরিক সমাবেশ থেকে সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতার জন্য দেশবাসীর কাছে আবারও নৌকা মার্কায় ভোট চাইবেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে নেতা-কর্মীদের দিকনির্দেশনামূলক বার্তা দেবেন। এই সমাবেশে তুলে ধরবেন বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক কর্মময় জীবনের সংগ্রাম-ইতিহাস। প্রস্তুতি : নাগরিক সমাবেশ সফল করতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। সমাবেশে দলের নেতা-কর্মী ছাড়াও নাগরিক সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তি, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, পেশাজীবীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় দলটি। এ লক্ষ্যে রাজধানীর সব থানা ও ওয়ার্ড থেকে নেতা-কর্মীরা অংশ নেওয়া ছাড়াও ঢাকার আশপাশের জেলা থেকেও সর্বোচ্চসংখ্যক নেতা-কর্মী নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে।

৩০ হাজার সবুজ গেঞ্জি-টুপি ও পতাকা : আয়োজনের অংশ হিসেবে সমাবেশকে নান্দনিক রূপ দিতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ যুবলীগ। সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের সেই ভাষণটি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষণ এবং ইউনেস্কোর ‘বিশ্ব ঐতিহ্যের দলিল’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সেই ভাষণটিকে সেলিব্রেশন করতে আজকের নাগরিক সমাবেশ ডাকা হয়েছে। এই সমাবেশকে দৃষ্টিনন্দন করতে ৩০ হাজার সবুজ গেঞ্জি, সবুজ ক্যাপ ও ক্যাপ (টুপি) বিতরণ করা হয়েছে যুবলীগ দক্ষিণের নেতা-কর্মীদের মাঝে। হাতে থাকবে যুবলীগের পতাকা।

সেই সঙ্গে লাল রঙের রুমাল থাকবে প্রতিটি নেতা-কর্মীর হাতে। রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা যখন মঞ্চে আসবেন তখন পতাকা নেড়ে অভিবাদন জানাব। সমাবেশের উপস্থিতি নিশ্চিত ও দৃষ্টিনন্দন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আজকের সমাবেশ থেকে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে দিকনির্দেশনা দেবেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এই সমাবেশ হবে তাদের, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী, যারা বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসে। সমাবেশে জনসমাগম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই নাগরিক সমাবেশ স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সমাবেশ হবে বলে আমরা আশা করছি। চারদিকে অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছি। দলমতনির্বিশেষে জনতার বিস্ফোরণ ঘটবে ১৮ (আজ) তারিখের সমাবেশে।

সর্বশেষ খবর