শনিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

পুরুষের চেয়ে নারীরা আত্মহত্যায় এগিয়ে

জয়শ্রী ভাদুড়ী

রাজধানীর মিরপুরে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেন গৃহবধূ রোকসানা আক্তার পান্না। গত ১৫ অক্টোবর একই দিনে কাফরুলে আত্মহত্যা করেন ফেরদৌসী তামান্না নামের এক তরুণী। শুধু রাজধানী নয়, দেশে প্রতিদিনই ঘটছে এরকম অসংখ্য আত্মহত্যার ঘটনা।

চলতি বছরের জুলাই মাসে স্বামীকে ভিডিও কল দিয়ে আত্মহত্যা করেন গুলশানের গৃহবধূ রিসিলা বিনতে ওয়াজের। স্ত্রীকে এভাবে আত্মহত্যা করতে দেখে বাসার বাইরে থাকা স্বামী সঙ্গে সঙ্গে ফোন দেন স্বজনদের। ততক্ষণে রিসিলার দেহ নিথর হয়ে পড়েছে। এর মাসখানেক আগে ঠাকুরগাঁওয়ে প্রবাসী স্বামীকে ভিডিও কলে রেখে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন গৃহবধূ সাবিনা ইয়াসমিন। পুলিশ সদর দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১০ সাল থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত সাড়ে সাত বছরে সারা দেশে ৮০ হাজার ১৮৫ জন আত্মহত্যা করেন। এ হিসাবে বছরে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার এবং দিনে গড়ে ২৯ জনের বেশি মানুষ আত্মহত্যা করছেন। পুরুষের চেয়ে নারীরা আত্মহত্যা করছেন বেশি। শুধু চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ২ হাজার ৯৭৮ জন আত্মহত্যাকারীর মধ্যে এক হাজার ৭৮৯ জনই নারী। এ বিষয়ে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মুনতাসীর মারুফ বলেন, আত্মহত্যার পেছনে সবচেয়ে বেশি দায়ী মানসিক রোগ। আত্মহত্যার ঘটনাগুলোতে দেখা যায় ৭০-৮০ শতাংশ বিষণ্নতায় ভুগছেন। তাই বিষণ্নতায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। এ ছাড়া মাদকাসক্ত এবং পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার সংক্রান্ত সমস্যার কারণেও অনেকে আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যার প্রবণতা কমাতে সঠিক সামাজিকীকরণ এবং মানসিক চাপ মোকাবিলা করতে শেখা জরুরি। বাংলাদেশ হেলথ ইনজুরি সার্ভে (বিএইচআইএস)-২০১৬-এর তথ্য অনুসারে, দেশে প্রতি এক লাখ জনসংখ্যার মধ্যে ৬৬ দশমিক ৮ জন মানুষের মৃত্যু হয় আঘাতজনিত কারণে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় আত্মহত্যার ফলে। প্রতি এক লাখে ১৪ দশমিক ৭ জন মানুষ আত্মহননের পথ বেছে নেয়। এ ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনায় ১৪ দশমিক ৪ জন, পানিতে ডুবে ১১ দশমিক ৭, উঁচু স্থান থেকে পড়ে ৯ দশমিক ৪, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৫ দশমিক ৭ ও হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়ে চারজন মানুষের মৃত্যু হয়।

জানা গেছে, আত্মহত্যার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি কিশোর-কিশোরীর মধ্যে। বয়সের কারণে তারা অনেক বেশি আবেগপ্রবণ। মানসিক আঘাত পেলে যুক্তির চেয়ে বেশি আবেগতাড়িত হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেয় তারা। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘মেন্টাল হেলথ স্ট্যাটাস অব অ্যাডলসেন্টস ইন সাউথ-ইস্ট এশিয়া : এভিডেন্স ফর অ্যাকশন’ শীর্ষক প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ৭ শতাংশ কিশোর-কিশোরী এক বা একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করছে। আত্মহত্যার শীর্ষে রয়েছে ঝিনাইদহ।

বেসরকারি সংস্থা শোভার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ঝিনাইদহে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ১৮৫ জন আত্মহত্যা করেন। এর মধ্যে নারী ১০৪, পুরুষ ৮১ জন। উদ্বেগের বিষয় হলো, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ঝিনাইদহে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ২৪৭ জন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিয়া রহমান বলেন, আমাদের সমাজে অস্বাভাবিক রূপান্তর ঘটেছে। নগর সমাজে তৈরি হচ্ছে সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং সম্পর্ক শিথিল হয়ে যাওয়ার চাপ। এ অবস্থায় নিয়ন্ত্রণ থাকছে না সামাজিক সংগঠনগুলোর। এরকম পরিস্থিতিতে জীবনকে অর্থহীন মনে করে মানুষ বেছে নিচ্ছে আত্মহত্যার পথ। এ জন্য পারিবারিক বন্ধনকে আরও মজবুত করতে হবে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।

সর্বশেষ খবর