শিরোনাম
সোমবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

স্বর্ণ খাত নিয়ন্ত্রণে নেই : টিআইবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের সোনার বাজার চোরাচালান ও কালোবাজারনির্ভর এবং এ খাতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই বলে জানিয়েছে দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলনকারীদের সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। আমদানি শুল্ক কমিয়ে বৈধভাবে সোনা আমদানির সুযোগ প্রদানের দাবি জানিয়ে টিআইবি বলেছে, বৈধভাবে সোনা আমদানি ও রপ্তানির সুযোগ ব্যবসায়ীরা পেলে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে। একই সঙ্গে দেশে ইতিমধ্যে চোরাচালানের মাধ্যমে আসা সোনায় দায়মুক্তি দেওয়া যেতে পারে বলে মনে করে টিআইবি। গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে আয়োজিত ‘বাংলাদেশে সোনা খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা : চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নোত্তর পর্বে এসব কথা বলেন সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. ইফতেখারুজ্জামান ও গবেষণা পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন টিআইবি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের। সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান। তার নেতৃত্বে এ গবেষণায় যুক্ত ছিলেন মো. রেজাউল করিম ও অমিত সরকার। এ গবেষণার আলোকে একটি খসড়া সোনা নীতিমালাও তৈরি করে সরকারকে দিয়েছে টিআইবি।  সংবাদ সম্মেলনে ড. ইফতেখারুজ্জামান প্রশ্নোত্তর পর্বে বলেন, ‘সোনা একটি জনপ্রিয় ও জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট খাত হলেও বাংলাদেশে তা চোরাচালাননির্ভর। চোরাচালান আজীবন চলতে থাকবে, তেমনটা চাই না। যদিও বাংলাদেশে মোটেই চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ হয় না। তবে সোনা চোরাচালান মাফিয়ানির্ভর থাকুক তা চাই না। এ দেশে সোনা চোরাচালানের বড় ঝুঁকি অস্ত্র ও মাদকে। এমন একটি জনপ্রিয় ও জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট খাতে অনৈতিকতা এভাবে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করবে, চোরাকারবারিনির্ভর ব্যবসা চিরজীবন চলতে থাকবে, এটা আমরা আশা করি না।’

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, চোরাচালাননির্ভর সোনা ব্যবসায় সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাংশ, স্থলবন্দর ও বিমানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশ এবং এদের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারিদের যোগসাজশে অবৈধতা, অনিয়ম অব্যাহত আছে। শুধু তা-ই নয়, এ চক্রটির একাংশ এ দেশে একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা হোক বা বিস্তৃত আইন প্রণয়ন হোক সে ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। অন্যদিকে ভোক্তা বা সাধারণ জনগণ অতিরিক্ত মূল্য প্রদানসহ বিভিন্নভাবে প্রতারিত হচ্ছেন। ফলে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদনের সুপারিশ তুলে ধরে টিআইবি বলেছে, এ খাতে সংশ্লিষ্ট সব পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে একটি পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন। সব ব্যবসায়ী কর্তৃক সরকার নির্ধারিত লাইসেন্স গ্রহণ ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নবায়ন বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। এ ছাড়াও ব্যাগেজ রুলের মাধ্যমে আনা স্বর্ণালঙ্কারের বাণিজ্যিক ব্যবহার নিষিদ্ধ ও শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে নির্ধারিত সরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে সোনা আমদানির ব্যবস্থা করতে হবে। টিআইবি বলেছে, স্থল ও বিমানবন্দরের প্রতিটি আগমন ও বহির্গমন দরজায় সর্বাধিক প্রযুক্তির স্ক্যানার ও আর্চওয়ে স্থাপন এবং শুল্ক কর্মকর্তার উপস্থিতি নিশ্চিতসহ সোনা চোরাচালান নিয়ন্ত্রণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কার্যকর সমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে। ওই গবেষণায় দেখা যায়, দেশের বাজারে বছরে ১৮ থেকে ৩৬ টন সোনার চাহিদা থাকা সত্ত্বেও এ চাহিদার সিংহভাগ চোরাচালানের মাধ্যমে পূরণ হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর