বৃহস্পতিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
স্ম র ণ

যে ফুল না ফুটিতে

আসমা আব্বাসী

অত্যন্ত সদালাপী সহৃদয় সহাস্য একজন মানুষ। যেন একটি সদ্য ফোটা ফুল। অন্তর এবং বাহির দুই জায়গাতেই শুভ্র সমুজ্জ্বল, কাছে এলে মনে হয়, যে কোনো সমস্যার সমাধানে তার হস্তক্ষেপে মুহূর্তে মিলিয়ে দেয় আকাশে জমে থাকা কালো মেঘ, তিনি আমাদের সবার অতি প্রিয়জন, দেশবাসী অশ্রু বিসর্জন করছে তার জন্য, পুত্রতুল্য আনিসুল হক। তরুণ আনিসকে প্রথম দেখি টেলিভিশনের পর্দায়, উপস্থাপনা তার এত সজীব, প্রাণবন্ত ও হৃদয়কাড়া যে, দর্শকমাত্রই মন্ত্রমুগ্ধের মতো বসে থাকতেন টিভির সামনে। পরবর্তীতে দেখলাম নানা রূপে তার অসামান্য কার্যকলাপ। বাংলাদেশের পোশাকশিল্প থেকে শুরু করে আরও নানা রকম কর্মকাণ্ডে তিনি অগ্রগামী। বিগত কটি বছর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে যে জনপ্রিয়তা, তার তুলনা মেলে না। কী অসাধারণ দক্ষতায় তিনি শত সমস্যা জর্জরিত এ অঞ্চলকে করে তুললেন স্বপ্নের মতো অলীক। এত বাধা-বিপত্তি সমস্যার মধ্যেও তার মুখে একই স্মিত হাসি। এর মূলে তার কর্মদক্ষতা ও আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা। রুবানা হক নিপাকে প্রথম দেখি তার শৈশবে ফুটফুটে ফর্সা লাবণ্যময়ী বালিকা আমার কন্যা সামিরার সহপাঠী ভিকারুন্নেসা নূন স্কুলে ক্লাস থ্রিতে। তাদের দুজনের মধ্যে দারুণ সখ্য এবং প্রতিযোগিতা। কে পরীক্ষায় প্রথম স্থানটি অধিকার করবে, কখনো রুবানা, কখনো সামিরা। পড়াশোনার পাশাপাশি আবৃত্তি বিতর্ক টেলিভিশনে নতুন কুঁড়ি সবকিছুতেই তারা অংশগ্রহণ করে, বাড়ি ফিরে প্রথম বা দ্বিতীয় প্রাইজটি হাতে নিয়ে হাসিমুখে। তখনকার দিনে বাচ্চাদের কোথাও পাঠানো বা ফেরত নিয়ে আসা তেমন কঠিন ছিল না। আমার মেয়েকে বাড়ি ফিরিয়ে আনতেন কখনো আলী ইমাম, কখনো ফরিদুর রেজা সাগর এবং বেশির ভাগ সময় নিপার আম্মা আমার প্রিয়দর্শিনী ভাবী। দিনের পর দিন ভালোবাসার সুতো দিয়ে আমাদের দুটি পরিবারের মধ্যে গাঁথা হয়েছে সুন্দর একটি মালা। নিপা যখন বড় হলো, মাঝে মাঝে দেখা হয় এবং দেখামাত্র সুমিষ্ট হাসি নিয়ে জড়িয়ে ধরে আমাকে, যেন আমার মধ্যে খুঁজে ফেরে তার ছেলেবেলার প্রিয় সখী সামিরাকে। প্রায়ই সংগীত অনুষ্ঠান হয় আনিস ও নিপার বাড়িতে। সদা আমন্ত্রিত আমরা। হোস্ট হিসেবে তারা অত্যন্ত পারদর্শী, নানা রকম নানা দেশি সুস্বাদু খাদ্য পরিবেশন করেন এবং তাদের নিচতলার হল রুমের বিশাল আয়োজনে থাকে বরেণ্য শিল্পীদের পরিবেশনা। নিপা ও আনিসের সন্তানেরা ধারণ করেছে বাবা-মার এই গুণ, উত্তরাধিকার সূত্রে তাদের মুখে সব সময় মিষ্টি হাসি ও আদব-কায়দার রূপালী তবক। অগ্রহায়ণের এক মধ্যরাতে জানতে পারলাম একটি হৃদয়বিদারী কণ্ঠ, আমার ছোট কন্যা শারমিনী অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলল, ‘আম্মা শুনেছ, আনিস ভাই আর নেই’। বিনা মেঘে বজ্রপাতের কথা শুনেছি, মাঝে মাঝে দেখেছিও, কিন্তু আনিস চলে যাবেন এমন একটি সংবাদ শত দুঃসংবাদের কষ্টকেও ছাপিয়ে গেল। চোখ থেকে ঝরছে পানি, হৃদয়ে জমে আছে বেদনার মেঘ, যে মেঘ সহস্র বৃষ্টিপাতেও থামবে না। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মতিথি ও ওফাতের মাসে আনিস চলে গেলেন সহস্র কোটি মানুষের দোয়ার হাত প্রসারিত করে। মানুষের বিচার হয় কর্মের ভিত্তিতে, সে পরীক্ষায় আনিস শতভাগ সাফল্য নিয়ে উত্তীর্ণ হবেন। মহান আল্লাহতায়ালা জান্নাতুল ফেরদৌসের সুন্দরতম কাননে তাকে স্থান দিন— এই আমাদের মোনাজাত। আসমা আব্বাসী : শিক্ষাবিদ-সাহিত্যিক

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর