রবিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

রংপুর থেকে শিখবে আওয়ামী লীগ

পাঁচ সিটিতে সর্বোচ্চ সতর্কতা, কোন্দল মেটানোর উদ্যোগ

রফিকুল ইসলাম রনি

রংপুর থেকে শিখবে আওয়ামী লীগ

রংপুর সিটি নির্বাচনে পরাজয় থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী বছরে অনুষ্ঠেয় রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনে এগোবে আওয়ামী লীগ। প্রার্থী মনোনয়নে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন, তৃণমূলকে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনের মাঠে নামানো, নির্বাচনের আগেই অভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেবেন ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা। রংপুরে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ‘গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে’ বলে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুললেও কী কারণে প্রায় ১ লাখ ভোটের ব্যবধানে পরাজয় তা খুঁজে দেখা হচ্ছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছর আগে রংপুর সিটি নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য কী বার্তা দিল, তা বিশ্লেষণ করছেন তারা। ভুলগুলো চিহ্নিত করে আগামী সিটি নির্বাচনে কোমর বেঁধে মাঠে নামবে আওয়ামী লীগ।

দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, রংপুর সিটি নির্বাচনে দলকে বিজয়ী করতে সর্বস্তরের নেতা-কর্মীর যেভাবে মাঠে নামা দরকার ছিল সেভাবে নামা হয়নি। এ ছাড়া টানা পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনকারী মেয়র সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুর ‘নেতিবাচক’ ভাবমূর্তি ভোটারদের দূরে ঠেলেছে। ঝন্টুর প্রতীক নৌকা হলেও ভোটাররা মূল্যায়ন করেছেন ব্যক্তি ঝন্টুর কাজ। এ ছাড়া রংপুরের আওয়ামী লীগ নেতাদের কেউ কেউ চাননি দ্বিতীয় মেয়াদে ঝন্টু মেয়র হোন। নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকেই তাদের ছিল গাছাড়া ভাব। জাতীয় পার্টির সর্বস্তরের নেতা-কর্মী যেভাবে মাঠে ছিলেন তা দেখা যায়নি আওয়ামী লীগের বেলায়। তবে দলটির নেতারা এই ভেবে তৃপ্ত যে, ফল যাই হোক, ভোট নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেনি। এটাই আওয়ামী লীগের অর্জন।

সূত্রমতে, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করার পর দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে হবে বা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যেতে হবে— এমন মনোভাব দেখা যায়নি। নির্বাচনকে আওয়ামী লীগ যদি গুরুত্বের সঙ্গে নিত তাহলে প্রথম থেকেই এই নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে যুক্তরা মাঠে থাকতেন। কিন্তু তারা এ বিষয়ে কোনো খোঁজখবরই রাখেননি। রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক, বি এম মোজাম্মেল হক এবং একসময় এই বিভাগের দায়িত্ব পালনকারী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি হওয়ায় সরাসরি মাঠে যেতে পারেননি। তারা সৈয়দপুরে গিয়ে রংপুরের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন। মাঠে ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন। কেন্দ্রের অনেক নেতা এমপি না হলেও তাদের তৎপরতা রংপুরে লক্ষ্য করা যায়নি। ঝন্টু ছাড়াও যেসব নেতা মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন তারাও সক্রিয়ভাবে মাঠে কাজ করেননি। কয়েকজন করলেও তা ছিল নিছক লোক দেখানো বলে মনে করেন দলের নীতিনির্ধারকরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রংপুর সিটি নির্বাচনে পরাজয় আমাদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করেছে। কিছু আচরণগত, কৌশলগত ও সাংগঠনিক ভুলের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের ঈর্ষণীয় সাফল্য থাকার পরও পরাজয় হয়েছে। এগুলো থেকে শিক্ষা নিয়েই আমরা পরবর্তী সিটিসহ সব নির্বাচনে পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’ এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রংপুর সিটি নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব। এত উন্নয়ন করার পরও এমন ফল প্রত্যাশিত না হলেও অবাক হইনি। কারণ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে স্থানীয় কিছু ইক্যুয়েশন থাকে।’ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছর আগে রংপুর সিটি নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য দুটি বার্তা দিয়েছে। এক. টানা দুই মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার যে বিপুল উন্নয়ন করেছে, তা ভোটে রূপান্তিত করতে পারেনি। কারণ আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রধান হাতিয়ার উন্নয়ন। দুই. কিছু জনপ্রতিনিধির দাম্ভিকতা, নেতা-কর্মী ও সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে রূঢ় ব্যবহার কেউ ভালোভাবে নেয় না। তাই আগামীতে পাঁচ সিটিসহ যে কোনো নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ার ক্ষেত্রে এদিক বিবেচনা করেই দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করতে হবে। তা না হলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রভাব পড়বে। তবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, ‘রংপুর সিটি নির্বাচনের ফলাফলের কোনো প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে পড়বে না।’ তিনি বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ব্যক্তির জনপ্রিয়তার প্রতিফলন ঘটে ও আঞ্চলিকতা কাজ করে। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনে একটি দলের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও জনপ্রিয়তা কাজ করে।’

সর্বশেষ খবর