সোমবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগ দেশ চালাচ্ছে পাকিস্তানি কায়দায় : খালেদা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, গণতন্ত্রের জন্য আমরা পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। কারণ পাকিস্তানিরা আমাদের গণতন্ত্র ও সব মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। দেশে এখন গণতন্ত্র নেই। আইনের শাসন নেই। মানুষের মৌলিক অধিকার নেই। সেই পাকিস্তানি কায়দায় দেশ চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ। তিনি বলেন, স্বাধীন দেশ হয়েও আজকে আমরা আওয়ামী লীগের কারণে পরাধীন। আওয়ামী লীগের এই শৃঙ্খল থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে। এ সময় তিনি আগামী দিনের আন্দোলন কর্মসূচি ও জাতীয় নির্বাচনের জন্য দলমত নির্বিশেষে সবাইকে একসঙ্গে প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান। গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে অনুষ্ঠিত মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজীজ ওলফাতের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক খানের পরিচালনায় এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, বেগম সেলিমা রহমান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, আমান উল্লাহ আমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সকালের সমাবেশে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাই নির্বাচন চায়, সে নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে। আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে কোনো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, বিনা ভোটে ১৫৪ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছে। এ কথা একটি রায়ের পর্যবেক্ষণে দেশের প্রধান বিচারপতি নিজে বলে গেছেন। তিনি বর্তমান সংসদকে অকার্যকর সংসদ বলেও আখ্যায়িত করে গেছেন। যা এখনো বহাল রয়েছে। স্বাধীন বিচার বিভাগের জন্য কাজ করতে চেয়েছিলেন বলেই প্রধান বিচারপতিকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতিকে অপসারণের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ‘জুডিশিয়াল ক্যু’ করেছে। এর শাস্তি হওয়া উচিত। বেগম জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ দেশকে একদলীয় বাকশালের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে যারাই কথা বলছেন তাদের গুম করা হচ্ছে, না হয় মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। শুধু বিএনপি কিংবা বিরোধী দলের নেতা-কর্মীই নন, সাধারণ মানুষও আজ এই হেনস্তার শিকার। কারও জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। সব শ্রেণি-পেশার মানুষই আজ গুম-খুনের শিকার। তিনি বলেন, সবাই আজ শান্তি চায়, স্বস্তি চায়। কিন্তু আওয়ামী লীগের কিছু লোক ছাড়া কোনো মানুষের মনেই আজ কোনো শান্তি নেই। মানুষ আওয়ামী লীগের এই শৃঙ্খল থেকে মুক্তি চায়। মানুষ আজ পরিবর্তন চায়। বেগম খালেদা জিয়া দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, আমাদের মাধ্যমেই দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র এসেছিল, জিয়াউর রহমানের হাত ধরে। আবারও বিএনপির মাধ্যমেই এ দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে ইনশা আল্লাহ। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময় সত্য?কে গোপন ক?রে। স্বাধীনতার ঘোষণা করেছেন জিয়াউর রহমান। এ নিয়ে তারা সব সময় হীনম্মন্যতায় ভুগে। সব সময় বিএনপি এবং মুক্তিযোদ্ধা?দের নাম শুনলে তাদের মাথা খারাপ হয়ে যায়। সবার দাবি, অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন। আমাদের দাবি হচ্ছে, আওয়ামী লীগ ও হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। তিনি আরও বলেন, ‘তারা একতরফা সমাবেশ করতে পারবে, অন্য দলকে সমাবেশ করতে দেয় না, এর নাম কি গণতন্ত্র?

বেগম খালেদা জিয়া বলেন, আজকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। প্রধান বিচারপতিকে তাঁর এজলাসে বসতে দেওয়া হ?লো না। পরিষ্কার তিনি বলেছেন, তিনি অসুস্থ নন এবং ছুটিও চাননি, তাকে জোর করে দেশের বাইরে পাঠানো হলো, এরা ‘জুডিশিয়াল ক্যু’ করেছে। এ অপরাধে তাদের তো শাস্তি হওয়া উচিত। রাতের অন্ধকারে সরকারি অনুগত অযোগ্য অফিসারদের প্রমোশন দেওয়া হচ্ছে। আর ভালো ভালো অফিসার?দের? আজ ওএসডি করে রাখা হয়েছে। পুলিশ বাহিনীসহ সব ক্ষেত্রেই আজ একই অবস্থা, সিনিয়র-জুনিয়র মানা হয় না। দেশে এখন এক ব্যক্তির শাসন চলছে। এই এক ব্যক্তি মুখে যা-ই বলবে তা-ই হবে। খালেদা জিয়া আরও বলেন, বিএনপির লোকজন দিয়ে জেলখানা ভরে রাখা হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে আজ দেশের মানুষ দিশাহারা। মোটা চালের কেজি ৭০ টাকা। পিয়াজের কেজি ১২০ থেকে ১৪০ টাকা। রসুন ৩০০ টাকা। এদিকে সরকারের নজর নেই, শুধু আমাদের গালাগালি করে আর বাজে কথা বলে। দেশ শাসন করছে তারা। খাচ্ছে-দাচ্ছে তারা। চুরি করে তারা, আর দোষ দেয় আমাদের। এ অবস্থায় দেশ চলতে পারে না, এ জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়নি। যারা ভালো কাজ করবে, জনগণই তাদের ভোট দেবে। তাহলে আসেন, দেখেন, জনগণ কাকে ভোট দেয়, দেখেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো- এ সরকারের আমলে জনগণকে ভোট কেন্দ্রে যেতে দেওয়া হয় না। আর জনগণই যদি ভোট কেন্দ্রে যেতে না পারে, তাহলে ভোটটা দেবে কে খালেদা জিয়া আরও বলেন, তাদের (সরকারের) অত্যাচারের মাত্রা কিন্তু কমেনি। জনগণের মুখ বন্ধ করে রাখতে চায়। গুম-খুন কি বন্ধ হয়েছে দেশে শুধু রাজনৈতিক দলের ওপর নয়, সাধারণ মানু?ষের ওপরও তারা অত্যাচার করছে, ফলে মানুষ এখন পরিবর্তন চায়। বেকারত্বের অবস্থা ব্যাখ্যা করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘হাজার হাজার শিক্ষিত বেকার তৈরি করেছে তারা, প্রবাসীরা এ দেশে এসে তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চায়। কিন্তু তারা সে সুযোগ পাচ্ছে না। মিটমিট করে চুলা জ্বলে, মানুষ গ্যাস পায় না। গ্রামাঞ্চলের মানুষ বিদ্যুৎ পায় না। কিন্তু দাম প্রতিনিয়ত বেড়েই যা?চ্ছে। খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগের এই দুঃশাসন ও শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হতে হলে আমাদের আরেকবার জেগে উঠতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। অন্যান্য রাজনৈতিক দল যারা আছে, তাদেরও আহ্বান জানাই— আসুন, আপনারা আমরা সবাই ঐক্য করি। ঐক্যবদ্ধ হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করি। গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করি। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মাঠে গিয়ে ভোট চাচ্ছে- আর আমরা ঘরে বসেও সমাবেশ করতে পারব না, এটা তো কখনো হতে পারে না। এর আগে অনুষ্ঠিত মুক্তিযোদ্ধা দলের সম্মেলনে ইশতিয়াক আজিজ ওলফাত ও সাদেক আহমেদ খান যথাক্রমে- সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হন। বেগম খালেদা জিয়া তাদের নাম ঘোষণা করে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার নির্দেশ দেন।

সর্বশেষ খবর