বৃহস্পতিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

খালেদার খালাস চেয়ে আবেদন, চলছে যুক্তি উপস্থাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে চতুর্থ দিনের মতো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে। এ সময় এই মামলা থেকে খালেদা জিয়ার খালাস চেয়ে আবেদন করেন তাঁর প্রধান আইনজীবী আবদুর রেজ্জাক খান। তিনি আদালতকে বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। শুধু কিছু ছায়া প্রমাণ দিয়ে মামলাটি সাজানো হয়েছে। অথচ এর কোনো ভিত্তি নেই। সারা দেশে এত মামলা থাকতে দুদক এই মামলার বিষয়ে এত আগ্রহী কেন? সে প্রশ্নও রাখেন আবদুর রেজ্জাক খান। খালেদা জিয়া মামলার সব অভিযোগ থেকে খালাস পাবেন আশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আশা করি স্বাধীনভাবে আপনি (বিচারক) ন্যায়বিচার করবেন এবং তিনি অবশ্যই খালাস পাবেন। রেজ্জাক খানের যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন শেষে খালেদা জিয়ার অপর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন। তিনি আদালতে বলেন, এটি একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক মামলা। বেগম খালেদা জিয়াকে চোর বানানোই এ মামলার উদ্দেশ্য।

আজ বৃহস্পতিবারও আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবেন খন্দকার মাহবুব হোসেন। এর আগে বেলা সোয়া এগারোটায় আদালতে পৌঁছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। মাঝখানে ১৫ মিনিটের বিরতি দিয়ে বেলা দুইটা পর্যন্ত রাজধানীর পুরান ঢাকার বকশীবাজারে স্থাপিত ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ আদালতের বিচারক ড. আখতারুজ্জামান এ শুনানি গ্রহণ করেন। বেলা আড়াইটায় বেগম খালেদা জিয়া আদালত থেকে বাসার উদ্দেশে রওনা হন।

রেজ্জাক খান আদালতকে বলেন, সেনাসমর্থিত সরকারের সময় এ মামলা হয়। এ সরকারের আমলেও তাঁর বিরুদ্ধে অনেক মামলা দেওয়া হয়েছে। মামলার ভারে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবন ব্যাহত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়াকে জনসমক্ষে হেয় করার জন্য মানহানিকর বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে ক্ষমতাসীনরা, যা বিচারের ওপর হস্তক্ষেপের শামিল। খালেদা জিয়া আত্মপক্ষ সমর্থন করে আদালতে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, তা আদালতকে গতকালও পড়ে শোনান রেজ্জাক খান। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা একটি মামলা। বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ নেই। যুক্তিতর্ককালে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া কুয়েতের টাকা রাখার জন্য অ্যাকাউন্ট খুলেছেন তার প্রমাণশূন্য। শুধু তাই নয়, তাঁর বিরুদ্ধে লিখিত ও মৌখিক কোনো প্রমাণও নেই। বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতার অপব্যবহার করে কুয়েত থেকে আসা টাকা আত্মসাৎ করেছেন তার বিন্দুমাত্র কোনো প্রমাণ নেই। মামলার  কোনো সাক্ষীও এ বিষয়ে কিছু বলেননি। মামলার এফআইআর-এ আছে বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। তা মোটেও ঠিক নয়। আর এফআইআর-এর কথা যে বেদবাক্যের মতো বিশ্বাস করতে হবে— তাও ঠিক নয়। তিনি আরও বলেন, মামলার সাক্ষ্য দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার কাছে কোনো টাকা গচ্ছিত ছিল না।  খন্দকার মাহবুব আরও বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের জীবনে এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি মামলা। এ মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে রাষ্ট্রপক্ষ সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। তাই এ মামলা থেকে তার খালাস চাই। এটি একটি রাজনৈতিক মামলা। খালেদা জিয়াকে চোর বানানোই এ মামলার উদ্দেশ্য। আমরা যতই বলি— খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই, এতে কোনো লাভ হবে না, দিন শেষে যদি বলা হয়— ‘কেস্ট বেটাই চোর’। তিনি বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের জন্য যিনি টাকা অনুদান দিয়েছেন, এই টাকা কীভাবে ব্যয় করা হবে, সেই বিষয়ে তিনি কোনো নির্দেশনা দেননি। এই টাকা কে দিয়েছেন, তদন্ত প্রতিবেদনে সেই বিষয়েও কিছু উল্লেখ করা হয়নি। বেগম খালেদা জিয়ার নিকট এসব টাকা গচ্ছিতও ছিল না। জিয়া অরফানেজের কোনো টাকা খালেদা জিয়া নিজে উত্তোলন করেননি বা ব্যয় করেননি। সুতরাং তিনি এ মামলায় খালাস পাওয়ার যোগ্য। অপরদিকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় যুক্তি উপস্থাপনের জন্যও একই দিন ধার্য করে আদালত।

সর্বশেষ খবর