বৃহস্পতিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

সুষ্ঠু গণতন্ত্র এ দেশে কখনই ছিল না

প্রতিদিন ডেস্ক

সুষ্ঠু গণতন্ত্র এ দেশে কখনই ছিল না

এমাজউদ্দীন আহমদ

দেশের রাজনৈতিক অবস্থা ভালো না। জনগণ বর্তমান পরিস্থিতির পরিবর্তন চায়। এই পরিবর্তন কীভাবে হবে তা নিয়ে একান্ত সাক্ষাত্কারে বর্তমান রাজনীতি এবং ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে নিজের মতামত তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. এমাজউদ্দীন আহমদ। সম্প্রতি বাংলানিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, যেখানে গণতন্ত্র থাকে না সেখানে রাজনৈতিক অবস্থাও ভালো থাকে না। সুষ্ঠু গণতন্ত্র এ দেশে কোনো সময়ই ছিল না। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে কেউ যদি বলে ‘গণতন্ত্র’ আছে। তাহলে এটা হবে গণতন্ত্রের ওপর প্রহসন, অপমান।

তিনি বলেন, জাতীয় সংসদের ১৫৪টি আসনে বিনা ভোটেই প্রার্থীরা আটো ইলেক্টেড হয়ে গেল। এটাকে কি গণতন্ত্র বলা যায়? গণতন্ত্রের কোনো চিহ্নই এখানে নেই। এই নির্বাচনের পর বিদেশি সাংবাদিকরা প্রধানমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, এই যে নির্বাচন করলেন, এটা তো অগণতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক সিস্টেমে হলো না। শেখ হাসিনা উত্তর দিয়েছিলেন, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য করতে বাধ্য হয়েছিলাম এবং ?অচিরেই সব দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করব। ওই ধরনের কোনো নির্বাচনের ব্যবস্থা কিন্তু হয়নি।

বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে, মামলা দেওয়া হয়েছে। যে কোনো একটা কর্মসূচি দিলেই পুলিশ বাধা দেয়। এ পর্যন্ত ২৫ হাজারের মতো মামলা দেওয়া হয়েছে। তারা কর্মসূচি দিলে পুলিশ অনুমতি দেয় না। অনুমতি দিলেও বাধা দেওয়া হয়। আরেকটা দিক হলো, পুলিশের মামলা দিয়ে হয়রানির ভয়ে অনেকে এগোয় না। সুতরাং এগুলোকে ব্যর্থতাও বলা যায়। এক অর্থে, আবার ব্যর্থতা বলাটা ঠিক না—এই কারণে যে, পরিবেশটাই এমন যে মিটিং হয়, উপস্থিতির হার প্রচুর। মারধর খাওয়ার পরও তারা সেখানে উপস্থিত হয়। এতেই বোঝা যায়, জনসাধারণের একটা আগ্রহ— ‘টু হ্যাভ এ চেঞ্জ’-একটা পরিবর্তনের দিকে দৃষ্টি আছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে জনগণের পক্ষ থেকে অসন্তোস সৃষ্টি হয়েছে। তারা চায় বিএনপি একটা পদক্ষেপ নিক। এরপরও জনসাধারণের দিকে তাকালে এটা বোঝা যায় দে ওয়ান্ট এ চেঞ্জ।

বিএনপি এই মুহূর্তে সঠিক পথে আছে কিনা জানতে চাইলে এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, সঠিক বেঠিক এগুলো স্পষ্ট করে বলা ঠিক হবে না। নেতা-কর্মী বিশেষ করে তরুণ কর্মীদের মধ্যে তীব্র আগ্রহ আছে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন হোক। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় বা ক্ষমতার কাছাকাছি যাওয়া যায়। বিএনপি বিরোধী দল হিসেবে ক্ষমতার বাইরে আছে। সুতরাং ক্ষমতায় না যেতে পারলে কর্মী বা নিম্নপর্যায়ের নেতাদের তাদের ধরে রাখা শক্ত হবে। এ জন্যই কিছু একটা করতেই হবে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা যদি চালু রাখতে হয় তাহলে কতগুলো পদক্ষেপ সরকারকে নিতে হবে। জাতীয় সংসদকে ভেঙে দিয়ে তফসিল ঘোষণা করতে হবে। যেসব নেতা-কর্মীদের নামে মামলা আছে, সেগুলো হয় তুলে দেওয়া উচিত না হয় সাসপেন্ড করা উচিত নির্বাচন পর্যন্ত।

ঢাবির সাবেক এই ভিসি বলেন, নির্বাচনে যদি বিএনপি অংশগ্রহণ না করে তাতে তাদের ক্ষতি হবে। ক্ষমতাসীন দলও ভয়ঙ্করভাবে জাতীয় পর্যায়ে তো বটেই, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সমালোচিত হবে। এ জন্য তাদের উচিত একটা সংলাপ আহ্বান করা যাতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার আবহ তৈরি হয়। রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বিশিষ্ট এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, মিয়ানমার থেকে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ লোক এসেছে। এর আগে অনেকে এসেছিল এবং থেকেও গেছে। সব মিলিয়ে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা এখানে এসেছে। এ সময়ে বিরোধী দল দাবি উত্থাপন করেছিল যে, জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সহায়তা-সহযোগিতা লাভ করে রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো উচিত যাতে তারা নিশ্চিন্তভাবে সেখানে থাকতে পারে।

সর্বশেষ খবর