বৃহস্পতিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

খণ্ডিত বক্তব্য উপস্থাপনে বিভ্রান্তি : শিক্ষামন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

খণ্ডিত বক্তব্য উপস্থাপনে বিভ্রান্তি : শিক্ষামন্ত্রী

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, ঘুষ খাওয়া নিয়ে তার বক্তব্য ‘খণ্ডিত আকারে’ প্রচার করায় বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। বক্তব্যের জন্য সমালোচনা হচ্ছে, অনেক ‘বিশিষ্ট ব্যক্তিও’ এখন প্রশ্ন তুলছেন। তিনি বলেন, অতীতের উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি এ বক্তব্য দিয়েছিলেন।

এখনকার পরিস্থিতি ততটা খারাপ নয়। ঘুষ নিয়ে দেওয়া তার সাম্প্রতিক ওই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে নানামুখী সমালোচনার মুখে গতকাল সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষামন্ত্রী। তবে তিনি কোনো প্রশ্নের জবাব দেননি। নাহিদ বলেন, বিশিষ্টজনদের কেউ কেউ কিছু মিডিয়ার খণ্ডিত ও ভিত্তিহীন সংবাদের ওপর ভিত্তি করে আমার বিরুদ্ধে নানা প্রশ্ন তুলছেন। তাদের উদ্দেশে সবিনয়ে বলতে চাই— সুদীর্ঘকাল ধরে আপনারা আমার সততার সংগ্রাম, নীতি-আদর্শ, কর্তব্যনিষ্ঠা, দায়িত্ববোধ বিষয়ে অবগত। মিডিয়ার খণ্ডিত-ভিত্তিহীন সংবাদের ওপর ভিত্তি করে কোনো মন্তব্য করার আগে সরাসরি আমাকে প্রশ্ন করলে অনেক বেশি খুশি হতাম।

তিনি বলেন, ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বিভিন্ন দফতর, অধিদফতর ও সংস্থার মধ্যে ভাবমূর্তির দিক থেকে সবচেয়ে পিছিয়ে ছিল পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতর (ডিআইএ)। দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও মনিটরিংয়ের দুর্বলতা ছিল দৃশ্যমান। কর্মকর্তারা ঘুষ-দুর্নীতিতে ছিলেন ‘আকণ্ঠ নিমজ্জিত’। এসবই ছিল পূর্ববর্তী বিএনপি-জামায়াত সরকারের অপশাসনের ফসল। সেই সময় ডিআইএ কর্মকর্তারা স্কুল-কলেজ পরিদর্শনে গিয়ে অসহায় শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে ভয় দেখিয়ে লাখ লাখ টাকার ঘুষের খাম গ্রহণ করার সময় বলতেন এর ভাগ ওপরেও দিতে হয়। তাতে শিক্ষক-কর্মচারীরা মনে করতে বাধ্য হতেন— তাদের দেওয়া ঘুষ শুধু পরিদর্শনকারী অফিসাররাই খান না, ঊর্ধ্বতন আমলারাও পান, এমনকি মন্ত্রী হিসেবে আমিও পাই। স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষক-কর্মচারীরা মনে করতেন— ‘অফিসাররা চোর, মন্ত্রীও চোর’।

তিনি বলেন, সে সময় তাদের ঘুষ-দুর্নীতি থেকে বিরত রাখার পরিবেশ তো ছিলই না, অনেক শিক্ষক এসে আমার কাছে কান্নাকাটি করে বলতেন, ‘আমরা নিম্ন বেতনের চাকরি করি, এত টাকা আমরা কোথা থেকে দেব? এক মাসের সম্পূর্ণ বেতনের টাকা ঘুষ দিলে পরিবার-পরিজন নিয়ে আমরা খাব কী? ঘুষের মাত্রা আরেকটু সহনীয় হলেও বাঁচতাম।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ২৪ ডিসেম্বরের অনুষ্ঠানে অতীতের ওইসব ঘটনার উদাহরণ তুলে ধরতে গিয়েই আমি উদ্ধৃতি দিয়েছিলাম— ‘ঘুষের সহনীয় মাত্রা’ এবং ‘অফিসাররা চোর’, ‘মন্ত্রী চোর’। কিন্তু কিছু পত্রিকা ও অনলাইনে ওই বক্তব্য খণ্ডিতভাবে প্রকাশিত হওয়ায় ‘বিভ্রান্তি’ সৃষ্টি হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে নাহিদ বলেন, ‘ওই বক্তৃতায় বা কোনোখানেই আমি বিএনপি-জামায়াতের এই প্রসঙ্গটা বলি নাই। কিন্তু যাদের (বিএনপি-জামায়াত) এই কথাটা প্রচার হয়েছে তারাও এখন মাঠে নেমে পড়েছেন আমাকে অভিযুক্ত করবার জন্য। আসলে তাদের (বিএনপি-জমায়াত) সময়েই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। বরং তাদের উচিত তাদের সময়ের ব্যাখ্যা দেওয়া, তাদের কুশাসনের ফল হলো এটা।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষকদের প্রতি তিনি শ্রদ্ধাপূর্ণ ব্যবহার করেন, প্রাথমিকের শিক্ষকদেরও স্যার বলেন। মানুষের সঙ্গে ব্যবহারে নমনীয় হলেও নীতি, আদর্শ, সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তিনি দৃঢ় এবং কঠোর। মন্ত্রী বলেন, আমার কোনো কিছুর তো ভয় নেই, কোনো কিছু হারানোর কোনো ভয় নেই। যার জন্য কখনো কারোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে আমি পিছপা হই না। তিনি বলেন, আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে আমি অবিচল। সততা, স্বচ্ছতা আর দেশপ্রেমের ভিত্তিতেই একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে দেশ ও জাতির সেবায় সারা জীবন নিজেকে নিয়োজিত রেখেছি। এটিই আমার রাজনৈতিক শিক্ষা।

প্রসঙ্গত, গত রবিবার শিক্ষা ভবনে এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের একটি ভিডিও ধরে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়, যাতে কর্মকর্তাদের ‘সহনশীল মাত্রায় ঘুষ খাওয়ার’ পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর