শুক্রবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
চিকিৎসকদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী

উপজেলায় থাকতে না চাইলে চাকরি ছাড়ুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

উপজেলায় থাকতে না চাইলে চাকরি ছাড়ুন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি চিকিৎসকদের উদ্দেশে বলেছেন, আমরা যখন উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসকদের নিয়োগ দেই তখন অনেকেই আছেন যারা কর্মক্ষেত্রে থাকতে    চান না। বরং তারা যে কোনো উপায়ে ঢাকায় থাকেন। যদি চিকিৎসকদের ঢাকাতেই থাকার ইচ্ছা হয়, তাহলে তাদের সরকারি চাকরি করার প্রয়োজন নেই। রাজধানীতে বসে প্রাইভেট রোগী দেখে তারা অনেক টাকা উপার্জন করতে পারেন। তাই তাদের চাকরি ছেড়ে বাড়িতে চলে যাওয়াই ভালো। দয়া করে তারা বিদায় নিয়ে বাড়ি চলে যাক, আমরা তাদের স্থানে নতুন নিয়োগ দেব। গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সাতটি সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জাপানের তৈরি অত্যাধুনিক অ্যাম্বুলেন্সের চাবি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মেডিকেল কলেজগুলো আমরা করে দিচ্ছি। এর মান বজায় রাখতে হবে। কী চিকিৎসা হচ্ছে, রোগী মারা ডাক্তার হচ্ছে, না রোগী বাঁচানোর ডাক্তার হচ্ছে, এটা একটু ভালো করে দেখতে হবে। তিনি বলেন, অনেকগুলো মেডিকেল কলেজ আমরা দিয়েছি। আর যেখানে যেখানে ক্যান্টনমেন্ট আছে, সেখানে অলরেডি পাঁচটি মেডিকেল কলেজ করার পারমিশন আমরা দিয়েছি। বলেছি যে, সব জায়গায় আমরা দেব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবা দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। আপনাদের আরও সচেতন হতে হবে। আমাদের ডাক্তাররা যেন কর্মস্থলে থাকে। গ্রামে ডাক্তার না থাকার একটা সমস্যা আমি খুঁজে বের করেছি। সেটা হচ্ছে, তাদের আবাসিক সমস্যা। অনেক ইয়ং ডাক্তাররা যায়, এখন মেয়েরাও যায়। কিন্তু গেলে উপজেলায় তাদের থাকার জায়গা নেই। তিনি বলেন, প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে মাল্টিস্টোরেড বিল্ডিং যদি করে দেই, অনেক সরকারি অফিসার তারা যেয়ে ওখানে ভাড়া নিয়ে থাকতে পারবে। গ্যাস্ট্রো অ্যান্ট্রোলজিতে পিছিয়ে থাকার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা জায়গায় আমরা পিছিয়ে আছি, সেটা হলো— গ্যাস্ট্রো অ্যান্ট্রোলজিস্ট, এটা আমাদের খুব কম। এ বিষয়ে আমাদের হাতে গোনা কয়েকজন ডাক্তার ছিল। এখন কিছু নতুন ডাক্তার এসেছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ পেটের পীড়ায় সব থেকে বেশি ভোগে। এটা আমাদের পরিবেশের জন্য, আমাদের জলবায়ুটা এমন যে, এটা হবেই। এটা অস্বাভাবিক কিছু না।’ স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ৭০ ভাগ সাফল্য অর্জন করেছিল। তিনি বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক সম্পূর্ণ আমার নিজস্ব ধারণা। সেভাবেই এটা তৈরি করা হয়েছিল। ১১ হাজার ক্লিনিক তৈরি করেছিলাম। চার হাজার আমরা চালু করেছিলাম। এক বছরের মধ্যে দেখা গিয়েছিল যে, প্রায় ৭০ ভাগ সাফল্য অর্জন করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে তৎকালীন বিএনপি সরকার কমিউনিটি প্রকল্প বন্ধ করে দেয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন, মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, স্বাস্থ্য সচিব মো. সিরাজুল হক খান, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

পটুয়াখালী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের শপথ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকালে তাঁর কার্যালয়ে পটুয়াখালী জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান খলিলুর রহমানকে শপথ বাক্য পাঠ করিয়েছেন। শপথ অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের এ কথা জানান। স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবদুল মালেক অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ প্রমুখ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

সাংবাদিক লাভলুর চিকিৎসায় প্রধানমন্ত্রীর অনুদান : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৈনিক ভোরের কাগজের প্রধান প্রতিবেদক সৈয়দ আকতারুজ্জামান সিদ্দিকী লাভলুর চিকিৎসায় ১০ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছেন। গতকাল বিকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তাঁর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এই অনুদানের চেক প্রদান করেন। দীর্ঘদিন ধরে লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত সাংবাদিক লাভলু সম্প্রতি ভারত থেকে চিকিৎসা নিয়ে ফিরেছেন। জানা গেছে, তিনি চিকিৎসা নিতে আবারও ভারতে যাবেন।

সর্বশেষ খবর