বৃহস্পতিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

রোডম্যাপে অগ্রগতি কম

নূরুল হুদার নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনের এক বছর

গোলাম রাব্বানী

রোডম্যাপে অগ্রগতি কম

একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত এক বছরে নির্বাচন কমিশন ঘোষিত রোডম্যাপের কাজের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। নির্বাচন বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গত ডিসেম্বরের মধ্যে সংসদীয় আসনের সীমানা চূড়ান্ত করা কিংবা চলতি ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনী আইন সংস্কারসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজের তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি।  তবে রাজনৈতিক দলের আস্থা অর্জনের স্বস্তি নিয়ে আজ বছরপূর্তি করছে বর্তমান নির্বাচন কমিশন। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে নতুন ইসি গঠনের পর মার্চে কুমিল্লা সিটির সুষ্ঠু নির্বাচন এবং বছর শেষে রংপুরের ভোটের সাফল্য যুক্ত হয়েছে এ ইসির ঝুলিতে। কোনো ধরনের গোলযোগ, সহিংসতা, কারচুপি ও অনিয়ম না থাকায় রংপুর সিটি ভোটকে ‘মডেল’ নির্বাচন বলছেন বিশ্লেষকরা। এ ছাড়া বছরজুড়ে ছোটখাটো নির্বাচনেও সুনাম কুড়িয়েছে নূরুল হুদা কমিশন। আর দায়িত্ব পালনের প্রথম বছরে সুষ্ঠু ভোট করে দলগুলোর কিছুটা আস্থায় আসে কমিশন। সব মিলে এসব স্থানীয় সরকারের নির্বাচন এবং সংলাপে বিএনপিসহ অন্যান্য দলের অংশগ্রহণের কারণে বছরজুড়ে স্বস্তিতে ছিল নির্বাচন কমিশন। যদিও সংলাপে জিয়াউর রহমানকে ‘বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠাতা’ বলায় সিইসিকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। তবে নতুন বছরের বিভিন্ন সিটি ও সংসদ নির্বাচনে সব দলকে ভোটে রাখা বর্তমান কমিশনের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। গত বছর ১৫ ফেব্রুয়ারিতে সিইসি কে এম নূরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার হিসেবে মাহবুব তালুকদার, মো. রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও শাহাদাত হোসেন চৌধুরী যোগ দেন কমিশনে।

রোডম্যাপে নেই ইসি : একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ঘোষিত রোডম্যাপ থেকে ছিটকে পড়েছে নির্বাচন কমিশন। গত বছর ডিসেম্বরের মধ্যে সংসদীয় আসনের সীমানা চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশের কথা থাকলেও এখনো অনেক কাজ বাকি। কমিশন বলছে, কিছু কাজ এগিয়েছে; কিন্তু দুটি আসন নিয়ে আদালতের নির্দেশনা থাকায় ডিসেম্বরের মধ্যে প্রাথমিক খসড়া প্রকাশের কাজটিও পিছিয়ে গেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা গত ১৬ জুলাই নির্বাচনী রোডম্যাপ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ অনুযায়ী গত বছর অক্টোবরে ৩০০ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে খসড়া তালিকা প্রণয়ন; নভেম্বরে খসড়া তালিকা প্রকাশ করে দাবি-আপত্তি-সুপারিশ আহ্বান ও নভেম্বর-ডিসেম্বরে আপত্তির বিষয়ে অঞ্চলভিত্তিক শুনানি নিষ্পত্তি করার পরিকল্পনা ইসি প্রকাশিত রোডম্যাপেই বলা হয়েছে। এরপর সংসদীয় আসনের সীমানা চূড়ান্ত গেজেট গত ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রকাশ করার কথা ছিল। এ ছাড়া চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে আইন প্রণয়নের কথা রয়েছে। তাও হবে কি-না তা নিয়ে খোদ নির্বাচন কমিশনের ভিতরেই সংশয় রয়েছে।

পাঁচ সিটি নিয়ে বাড়ছে প্রত্যাশা : ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৮ সাল হচ্ছে নির্বাচনের বছর। এই ইসির অধীনে স্থানীয় সরকারের কুমিল্লা ও রংপুর সিটির ভোট সফল হওয়ার পর এ বছর অনুষ্ঠেয় পাঁচ সিটি নির্বাচন ঘিরে সবার প্রত্যাশাও বাড়ছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচন ও উত্তর-দক্ষিণের নতুন যোগ হওয়া ৩৬টি ওয়ার্ডের সাধারণ ও ১২টি সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ভোট আইনি জটিলতায় আটকে যাওয়ার পর এখন আগামী ১৩ মার্চ অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদের দুই উপনির্বাচন এবং পাঁচ সিটির ভোট নিয়ে ভাবছে কমিশন। রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট হবে বছরের মধ্যভাগে। চলতি বছরের ৩০ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে করতে হবে একাদশ সংসদ নির্বাচন। নভেম্বরে তফসিল ঘোষণা করতে হবে ইসিকে। দশম সংসদ নির্বাচন অধিকাংশ রাজনৈতিক দল বর্জন করায় আগামী নির্বাচনে সব দলকে আনাই এই ইসির প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত।

জিয়া নিয়ে আলোচনায় সিইসি : নির্বাচন কমিশনের সংলাপে জিয়াউর রহমানকে ‘বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠাতা’ বলায় সিইসি কে এম নূরুল হুদাকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমালোচনা করে। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ এর প্রতিবাদে সংলাপও বর্জন করে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, এটা সিইসির কৌশল হতে পারে; আর বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী পদত্যাগই চেয়েছিলেন সিইসি কে এম নূরুল হুদার।

সর্বশেষ খবর