শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

প্রশ্ন ফাঁসের পাঁচ হোতা গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের পাঁচ হোতাকে রাজধানীর উত্তরখান ও গাজীপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গতকাল সকালে র‌্যাব-৩-এর একটি দল এ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে। তাদের মধ্যে রয়েছেন চারজন শিক্ষক এবং একজন ফেসবুকের একটি গ্রুপের অ্যাডমিন। আসামিদের মধ্যে তানভীর হোসেন (২৯) উত্তরখানের ক্যামব্রিজ হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক (হেডমাস্টার)। র‌্যাবের দাবি, তানভীর ফাঁস হওয়া প্রশ্ন নিয়ে দ্রুত সলভ (সমাধান) করে দিতেন। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে র‌্যাব আরও জানিয়েছে, তানভীর হোসেন ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন হাসানুর রহমান ওরফে রকি ভাই (২৯), মো. সজীব মিয়া (২৬), মো. এনামুল হক (২৭), মো. ইব্রাহিম (২১)। তাদের মধ্যে মো. সজীব মিয়া ক্যামব্রিজ হাইস্কুলের অ্যাকাউন্টিং বিষয়ের শিক্ষক, মো. ইব্রাহিম এবং মো. এনামুল হক সৃজনশীল কোচিং সেন্টারের শিক্ষক। র‌্যাব জানায়, হাসানুর রহমান ওরফে রকি ভাই একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তার ফেসবুক আইডি ‘রকি ভাই’। প্রশ্নপত্র সরবরাহের ক্ষেত্রে তার বেশ খ্যাতি আছে। তিনি ফেসবুক গ্রুপের অ্যাডমিন। গত ৪ বছর ধরে তিনি প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত। গ্রেফতারকৃত হাসান পরীক্ষার শুরু হওয়ার দুই মাস আগে থেকেই ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ, ইমোতে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার নম্বর আইডি দিয়ে প্রচারণা করতে শুরু করেন। প্রচারণায় উল্লেখ থাকে যে, যারা প্রশ্ন পেতে চায় তারা ২০০০ টাকার বিনিময়ে তার গ্রুপের সদস্য হতে পারে। পরীক্ষার দিন ভোরে হাসানুর রহমান ফাঁস হওয়া প্রশ্ন এসব শিক্ষকদের দিতেন এবং শিক্ষকরা খুব কম সময়ের মধ্যে প্রশ্নপত্র সমাধান করে হাতে লেখা উত্তরপত্র সরবরাহ করতেন। র‌্যাব আরও জানায়, ফাঁস হওয়া প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার নতুন কৌশল গ্রহণ করে আসামিরা। আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাব জানতে পেরেছে, তারা ব্লাড ডোনেশন-১, ব্লাড ডোনেশন-২ এবং ব্লাড ডোনেশন-৩ নামে গ্রুপ খোলে, যাতে কেউ একে প্রশ্ন ফাঁসের গ্রুপ মনে না করতে পারে। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে আটটি মোবাইল সেট ও একটি ট্যাব উদ্ধার করা হয়। ট্যাবে ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ভিতরে এসএসসি পরীক্ষার বিভিন্ন প্রশ্নপত্র পাওয়া গেছে।

বিভিন্নস্থানে রিমান্ড কারাদণ্ড : পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় গতকাল আরও কয়েকজনকে গ্রেফতার, রিমান্ডে নেওয়াসহ জেল-জরিমানা করা হয়েছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর— কুমিল্লা : কুমিল্লার চান্দিনায় এসএসসির জীববিজ্ঞান প্রশ্ন ফাঁসের দায়ে দুই যুবককে আটক করে প্রত্যেককে দুই বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গত রবিবার তাদের আটক করে এ সাজা দেওয়া হয়। দণ্ডিতরা হলেন চান্দিনা উপজেলার মহারং গ্রামের টিপু ভুইয়ার ছেলে ফুয়াদ হাসান ও পার্শ্ববর্তী দেবিদ্বার উপজেলার তেবারিয়া গ্রামের সফিকুল ইসলামের ছেলে শাহরিয়ার। চান্দিনা থানার ওসি আলী মাহমুদ জানান, চান্দিনা ড. ফিরোজ আহমেদ গার্লস স্কুলের সামনে এসএসসি জীববিজ্ঞান পরীক্ষার প্রশ্ন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার সময় সাদা পোশাকধারী পুলিশ দুই যুবককে আটক করে। পরে চান্দিনা উপজেলা এসিল্যান্ড তুষার আহমেদের ভ্রাম্যমাণ আদালত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যুবকদের প্রত্যেককে দুই বছর করে কারাদণ্ড দেয়। তাদেরকে কুমিল্লা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। নাটোর : নাটোরের লালপুরে এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষার ফুড প্রসেসিং অ্যান্ড পিজারভিষণ পার্ট-১-এর পরীক্ষা চলাকালীন সময় হলে গিয়ে প্রশ্ন ফাঁস করে উত্তরপত্র প্রস্তুতের সময় মতিউর রহমান (৪৫) নামের এক শিক্ষককে আটক করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার নজরুল ইসলাম। মতিউর রহমান লালপুর থানা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের কারিগরি শাখার ট্রেড ইন্সট্রাক্টর ও উপজেলার বড় বড়িয়া গ্রমের আজিজুল হকের ছেলে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার নজরুল ইসলাম জানান, মতিউর রহমান সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গোপালপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে প্রশ্ন ফাঁস করে কেন্দ্রের অদূরে তার কর্মস্থল থানা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে বসে গাইড বইয়ের পাতা কেটে এবং লিখে প্রশ্নের উত্তর প্রস্তুত করছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে একাধিক চিরকুটে প্রশ্নোত্তরসহ তাকে হাতেনাতে আটক করা হয়। চিরকুটগুলো পরীক্ষার হলে তার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নকল হিসেবে সরবরাহের জন্য লেখা হচ্ছিল। তাকে লালপুর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। খুলনা : এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের মামলায় গ্রেফতার হওয়া আটজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। গতকাল খুলনার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ও শিশু আদালতের বিচারক এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দৌলতপুর থানা পুলিশের উপপরিদর্শক রুহুল আমিন এ তথ্য জানান। আসামিদের মধ্যে ইব্রাহিম আল নাঈম (১৬), মোনায়েম সাহরিয়া রাফি (১৬) ও চয়ন রায় (১৭) চলমান এসএসসি পরীক্ষার্থী। অন্য আসামিরা হচ্ছে খায়রুল ইসলাম শাওন (১৮), সাব্বির হোসেন (১৮), সাজিদ মল্লিক (১৬), সাব্বির হোসেন রিয়াজ (১৮) ও আরাফাত হোসেন সাকিব (১৮)। তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছিল। কিন্তু বিচারক তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পুলিশ জানায়, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় (সৃজনশীল) পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় র‌্যাব তাদেরকে গ্রেফতার করে। সখীপুর (টাঙ্গাইল) : সখীপুরে এসএসসি পরীক্ষায় ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র ও উত্তর মোবাইলে ধারণ করে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করার সময় দুই পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল সকালে সখীপুর মডেল পিএম পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজের এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থীরা হলো কচুয়া পাবলিক উচ্চবিদ্যালয়ের লাবণী আক্তার (বিজ্ঞান বিভাগ রোল ১৬২৫৭১) ও সখীপুর পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের আফরোজা আক্তার (বিজ্ঞান বিভাগ রোল ১৬৩০৮৮)। এ দিকে ওই পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ আগে স্কুল মাঠে প্রবেশ করে মোবাইল ব্যবহার করার অপরাধে আরিফ (২৭), আমিনুল (২৩), বুলবুল (২৫) ও ফারুখ (৫০) নামের চার অভিভাবককে জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আয়শা জান্নাত তাহেরা এ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বলেন, মোবাইল সেটে পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তর পাওয়ায় দুই পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং কেন্দ্রের দুইশ গজের মধ্যে মোবাইল সেট ব্যবহার করার অপরাধে চারজনকে জরিমানা করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর