শুক্রবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

নৌকায় ভোট চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

রাজশাহীতে বিশাল জনসভা, ৩১ উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন

রফিকুল ইসলাম রনি, কাজী শাহেদ ও মর্তুজা নুর, রাজশাহী থেকে

নৌকায় ভোট চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রাজশাহীতে বিশাল জনসভায় ভাষণ দেন —বাংলাদেশ প্রতিদিন

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রাজশাহী মাদ্রাসা মাঠের জনসমুদ্রে দলীয় প্রতীক নৌকায় ভোট চেয়েছেন। তিনি জনতার উদ্দেশে বলেন, ‘নৌকা মার্কায় ভোট দিন, উন্নত বাংলাদেশ দেব।’ এ সময় উপস্থিত লাখো জনতা দুই হাত উঁচিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে একাদশ সংসদসহ প্রতিটি নির্বাচনে নৌকায় ভোট দেওয়ার অঙ্গীকার করেন।

রাজশাহী জেলা ও মহানগরী আওয়ামী লীগ গতকাল এ জনসভার আয়োজন করে। জনসভার মঞ্চ সাজানো হয় নৌকার আদলে। মাঠে থাকা কয়েকটি বড় গাছে ঝুলিয়ে রাখা কৃত্রিম নৌকায় লেখা ছিল, ‘নৌকায় ভোট দিন’। মঞ্চের বাঁ পাশের একটি ভবনের ছাদসহ মাঠজুড়ে কাঠের তৈরি নৌকা রাখা ছিল।

এ জনসভা কেন্দ্র সকাল থেকেই মানুষের ঢল নামে শহরজুড়ে। বিভাগের ৮ জেলা ও ৬৬ উপজেলা থেকে দলীয় নেতা-কর্মীরা এসে জড় হন জনসভায়। দুপুরের আগেই গোটা রাজশাহী শহর মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের শরিক দলগুলোও মিছিল নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় যোগ দেয়। বিভিন্ন আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী নিয়ে জনসভায় আসেন।

প্রধানমন্ত্রী জনসভায় বলেন, নুহ নবীর (আ.) আমল থেকে নৌকা মানুষের কল্যাণে কাজ করে আসছে। বিপদ থেকে রক্ষা করেছে। এ নৌকাই আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছিল। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিলেন বলেই আজ দেশ উন্নত হচ্ছে। আওয়ামী লীগই মানুষের কল্যাণে কাজ করে। আর বিএনপির রাজনীতি মানেই মানুষ হত্যা, লুটপাট ও বিদেশে অর্থ পাচার। এই রাজশাহীকে বিএনপি সন্ত্রাসের নগরীতে পরিণত করেছিল। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া গ্রেফতার হয়েছেন। কেন গ্রেফতার হয়েছেন? এতিমের টাকা মেরে খেয়েছেন। তিনি বলেন, ১৯৯১ সালে এতিমখানা তৈরি করবে বলে বিদেশ থেকে তিনি টাকা এনেছেন। কিন্তু এতিমখানার ঠিকানা কেউ জানে না। প্রায় ২৭ বছর পর বলা হচ্ছে, টাকা আছে। সুদে-আসলে বেড়েছে। এতিমের টাকা এতিমের হাতে যায়নি। টাকা তারা লুটপাট করে খেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মামলা দিয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার। মামলায় তাঁর সাজা হয়েছে, তিনি গ্রেফতার হয়েছেন। তিনি বলেন, বিএনপি নেতারা আন্দোলন করেন চোরের জন্য। টাকা চুরি করে তাদের নেত্রী জেলে গেছেন। এতিমের টাকা চুরি করে খাওয়া আমাদের কোরআন শরিফেও নিষেধ করা আছে। তারই শাস্তি তিনি ভোগ করছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, এতিমের টাকা সুদে-আসলে বেড়েছে, আর তা ভোগ করেছেন খালেদা জিয়া, তার পরিবার আর তার দলের লোকজন। এতিমের কোনো ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য কাজ করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে একটা ট্রাস্ট ফান্ড করেছি। প্রায় ১৮০০ শিক্ষার্থী ও একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত এবং আওয়ামী লীগের দুস্থ নেতা-কর্মীদের আমরা সাহায্য দিয়ে থাকি। কেয়ারটেকার সরকার তন্ন তন্ন করে খুঁজেও সেখানে কোনো অনিয়ম পায়নি। আমি বলেছিলাম, ভালোভাবে তদন্ত করে দেখেন। আমরা জনগণের জন্য কাজ করতে আসি। জনগণের সম্পদ কেড়ে খেতে নয়। তিনি বলেন, আমরা দুই বোন পৈতৃকসূত্রে যে বাড়ি পেয়েছি তা জনগণকে দান করে দিয়েছি। যে অর্থ পেয়েছি ট্রাস্ট করে এ দেশের ছেলে-মেয়েদের আমরা শিক্ষার জন্য বৃত্তি দিচ্ছি। আমরা এতিমের টাকা মেরে খাইনি। বরং মানুষকে দিয়েছি।

মহানগরী আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, দলের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বি এম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা, কেন্দ্রীয় নেতা নুরুল ইসলাম ঠাণ্ডু, মেরিনা জাহান কবিতা, যুব মহিলা লীগের অপু উকিল, যুবলীগের আবদুস সাত্তার, মহিলা লীগের সাফিয়া খাতুন, ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী প্রমুখ।

উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ : জনসভায় উপস্থিত হয়েই প্রধানমন্ত্রী ৩১টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর মধ্যে ২৫টি উদ্বোধন আর ৬টির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। প্রকল্পগুলো হলো— মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন ও ১ হাজার শয্যাবিশিষ্ট আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণকাজের উদ্বোধন, মহানগর পুলিশের নতুন ৮টি থানা উদ্বোধন, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের ৮টি ভবনের মধ্যে ৭টির উদ্বোধন ও ১টির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্পের ২টি উপকেন্দ্র নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, সিটি করপোরেশনের রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়ক থেকে রাজশাহী-নাটোর মহাসড়ক পর্যন্ত সংযোগ সড়কের ফ্লাইওভার নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পুঠিয়ার বারনই নদীতে রাবার ড্যাম উদ্বোধন, গণপূর্ত বিভাগের আওতায় নির্মিত ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ২টি ফায়ার স্টেশন উদ্বোধন, স্থানীয় সরকার অধিদফতরের আওতায় নির্মিত রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সার্ভে ইনস্টিটিউট এবং চারঘাট ও গোদাগাড়ীতে ৩টি রাস্তার ১টির উদ্বোধন ও ২টির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের আওতায় নির্মিত পুঠিয়ার মাড়িয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং বেসরকারি শাহ মখদুম মেডিকল কলেজের একাডেমিক ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন।

গণতন্ত্র ও সংবিধান সমুন্নত রাখতে সেনাবাহিনীর প্রতি  প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক ধারা সমুন্নত রাখার পাশাপাশি সুখী, সমৃদ্ধ দেশ গড়ায় অবদান রাখতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘দেশের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি আধুনিক, উন্নত ও সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে সেনাবাহিনীকে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকালে কাদিরাবাদ সেনানিবাসে ইঞ্জিনিয়ার্স সেন্টার অ্যান্ড স্কুল অব মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিএসএমই)-এর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের ষষ্ঠ কোর পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে ভাষণে এ কথা বলেন। নাটোর প্রতিনিধি ও আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানায়, বাংলাদেশকে বিশ্বে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের পবিত্র সংবিধান এবং দেশের সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় ঐক্যবদ্ধ থেকে অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক যে কোনো হুমকি মোকাবিলায় সবর্দা প্রস্তুত থাকতে হবে। এ জন্য সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। ‘কোনো অশুভ এবং স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি যেন দেশের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে না পারে, সে জন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রী কোর পুনর্মিলনী উপলক্ষে আয়োজিত বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন। প্যারেড পরিচালনা করেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফরিদউদ্দিন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, এমপি, তিন বাহিনী প্রধান এবং পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা অংশ নেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী ইসিএসএমই প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছলে সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মুহম্মদ শফিউল হক এবং কর্নেল কমান্ড্যান্ট এবং কমান্ড্যান্ট অব দ্য ইসিএসএমই প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। পরে প্রধানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের বার্ষিক অধিনায়ক সম্মেলনে যোগ দেন।

সর্বশেষ খবর