শুক্রবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

হুমকিতে নাগরিক তথ্যভাণ্ডার

গোলাম রাব্বানী

হুমকিতে নাগরিক তথ্যভাণ্ডার

হুমকিতে রয়েছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নাগরিক তথ্যভাণ্ডার। দেশের ১০ কোটি ৪০ লাখের বেশি নাগরিকের তথ্যের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খোদ ইসির কর্মকর্তারা। এ তথ্য সুরক্ষার জন্য বর্তমান যে ডাটাবেজ রয়েছে তা প্রতিস্থাপন করা এবং নতুন সার্ভার ক্রয়সহ বেশ কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছেন তারা। এদিকে এই তথ্যভাণ্ডারের সাময়িক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগকে জরুরি ভিত্তিতে (সাময়িক) ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দিয়েছে কমিশন। এ জন্য ৫০ টেরাবাইটের দুটি এনআইডি (তথ্য রাখার) স্টোরেজ ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি কেনার অনুমোদনও দিয়েছে সাংবিধানিক এই সংস্থাটি। সেই সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র-সংক্রান্ত জরুরি সেবা দিতেও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন প্রিন্টার মেশিন কেনা হচ্ছে। আর এসব কেনাকাটার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথাও বলেছে ইসি। ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, নাগরিকদের তথ্যভাণ্ডারের নিরাপত্তা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। এ তথ্য সুরক্ষার জন্য বর্তমান যে ডাটাবেজ রয়েছে তা প্রতিস্থাপন করা এবং নতুন সার্ভার ক্রয়সহ বেশ কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছেন কর্মকর্তারা। এ জন্য সাময়িক ব্যবস্থার পাশাপাশি মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনকে বলেছেন সংশ্লিষ্টরা। এসব কাজের জন্য প্রায় ৩৬১ কোটি টাকা প্রয়োজন হতে পারে। তবে কমিশন তথ্যভাণ্ডারের নিরাপত্তার জন্য জরুরি ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে। যন্ত্রপাতি কেনাকাটার অনুমতিও দিয়েছে সংস্থাটি।

ইসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, ভোটার তথ্য-সংবলিত ডাটাবেজ বা তথ্যভাণ্ডার দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ইসির ওরাকল এক্সট্রাডাটা সিস্টেমের স্টোরেজের জায়গা প্রায় শেষ পর্যায়ে। যদিও ইতিমধ্যে কিছু ফাইল সরিয়ে জায়গা ফাঁকা করে কাজ করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে তথ্যভাণ্ডারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগকে মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জরুরি কিছু যন্ত্রপাতি কেনাকাটার বিষয়ে নির্বাচন কমিশন অনুমোদন দিয়েছে। আশা করছি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে দ্রুত যন্ত্রপাতি কেনা যাবে। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে তথ্যভাণ্ডার সুরক্ষার জন্য কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবের কার্যপত্রে বলা হয়েছে, বর্তমানে অত্যন্ত জরুরি সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে নাগরিক তথ্যভাণ্ডারের নিরাপত্তা, জরুরি সেবা, সংবেদনশীলতা এবং চলমান কার্যক্রমগুলো নিরবচ্ছিন্ন রাখার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার লক্ষ্যে ডাটা সেন্টার (ডিসি) ও ডিজাস্টার রিকভারি স্টোরেজের (ডিআরএস) জন্য ৫০ টেরাবাইটের দুটি স্টোরেজ কেনা যেতে পারে। এতে ব্যয় হবে আনুমানিক দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা। এ ছাড়া উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কালার প্রিন্টার কেনার বিষয়ে কার্যপত্রে বলা হয়েছে, প্রতিদিন শত শত ভোটার তাদের হারানো জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার জন্য এবং জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের আবেদন করেন। যে তিনটি প্রিন্টার মেশিনে কার্ড প্রিন্ট করা হয় তা ২০১৫ সালের কেনা। প্রিন্টারগুলো প্রায়ই নষ্ট হয় এবং মেরামত করতে হয়। মেরামত করেও পর্যাপ্ত সুবিধা পাওয়া যায় না। নাগরিক ভোগান্তি কমাতে তিনটি প্রিন্টার কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা কমিশন অনুমোদন করেছে। এদিকে রবিবার কমিশনের সভা শেষে দুপুরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা, ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ ও জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম অর্থ মন্ত্রণালয়ে যান। সেখানে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন তারা। এ সময় নাগরিক তথ্যভাণ্ডারের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের বিষয়ে আলোচনা করেন সিইসি। ইসির কর্মকর্তারা জানান, তথ্যভাণ্ডারের সমস্যা সমাধান ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য ১৭৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে ১৯ অক্টোবর চিঠি দিয়েছিল ইসি সচিবালয়। কিন্তু আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। এ ছাড়া জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের একটি প্রকল্প প্রস্তাবও পাঠানো হয়েছে।

সর্বশেষ খবর