শুক্রবার, ১৬ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

লাশের পরিচয় জানতে আরও সময়

নেপাল ছাড়তে শুরু করেছেন গুরুতর আহতরা, পৌঁছল বাংলাদেশি মেডিকেল টিম

কূটনৈতিক প্রতিবেদক, কাঠমান্ডু (নেপাল) থেকে

লাশের পরিচয় জানতে আরও সময়

আহত শাহরিনকে গতকাল ঢাকায় আনা হয় —বাংলাদেশ প্রতিদিন

ইউএস-বাংলার বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের ভাগ্য এখনো অনিশ্চিত। ডিএনএ স্যাম্পল সংগ্রহ করার পর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সময় লাগে কমপক্ষে ৮-১০ দিন। আর গুরুতর আহতরা নেপাল ছাড়তে শুরু করেছেন। বাংলাদেশিরা যেসব স্থানে চিকিৎসা সুবিধা ভালো বলে নিশ্চিত হয়েছেন তাদেরকে সেখানে পাঠানো হচ্ছে। কাঠমান্ডুর ওম হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ডা. রেজওয়ানুল হক শাওনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বুধবার রাতে সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়া হয়। গতকাল কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজে ভর্তি আশঙ্কাজনক অবস্থায় থাকা শাহরীন আহমেদকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়া হয়। এ ছাড়া সেখানে থাকা ইয়াকুব আলীকে নয়াদিল্লিতে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে আলমুন নাহার অ্যানি, মেহেদী হাসান ও কামরুন নাহার স্বর্ণাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর একটি প্রক্রিয়া চলছে। আহত বাকি বাংলাদেশিরা কাঠমান্ডুর তিনটি হাসপাতালে ভর্তি আছেন। আহতদের স্বজনরা তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বারবার তাগিদ দিচ্ছেন।

এদিকে আহতদের উন্নত চিকিৎসার উদ্দেশে বাংলাদেশ থেকে তিনজন বার্ন বিশেষজ্ঞ, দুজন অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ, দুজন আইসিইউ বিশেষজ্ঞ এবং একজন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞসহ ৯ সদস্যের একটি মেডিকেল টিম গতকাল নেপাল পৌঁছায়। ডা. লুত্ফর কাদের লেনিনের নেতৃত্বে এই প্রতিনিধি দলে আছেন ডা. ইমাম হোসাইন, ডা. মজিদ রিয়াদ, ডা. মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন, ডা. এ কে এম ফেরদৌস রহমান, ডা. রাজিব আহমেদ, ডা. সোহেল মাহমুদ এবং সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুস সালাম, অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিএনএ এনালাইসিস আশরাফুল আলম। তারা গতকাল বিকালে দুই ভাগে ভাগ হয়ে কাজ শুরু করেন। চিকিৎসকরা আহতদের অবস্থা দেখতে হাসপাতালে যান এবং ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা লাশ দেখতে যান মর্গে।

ঘটনার চার দিন পরও কোনো মরদেহ স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, পরিচয় নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকলে মরদেহ হস্তান্তরে ডিএনএ টেস্ট করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ জন্য নেপালের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রত্যেকের পরিচয় নিশ্চিত হয়েই লাশ হস্তান্তর করা হবে।

ত্রিভুবন ইউনিভার্সিটি টিচিং হাসপাতালের ফরেনসিক ডিপার্টমেন্ট প্রধান ড. প্রমোদ শ্রেষ্ঠ জানিয়েছেন, পরিচয় সুনিশ্চিত হয়েই তারা মরদেহ হস্তান্তর করতে চান। ইতিমধ্যে ৩০টি মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে। এদের মধ্যে আটজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। বাকিদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তিনি জানিয়েছেন, ময়নাতদন্ত, ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ ও পরিচয় জানতে চারটি বিশেষজ্ঞ দল কাজ করছে। এর মধ্যে দুটি দল ময়নাতদন্ত করছে। একটি দল মরদেহের নানা নমুনা নিয়ে সেখান থেকে পরিচয় জানার চেষ্টা করছে। আর অন্যটি পরিবারের স্বজনদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য নিয়ে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছে। এই চারটি দল সম্মিলিতভাবে একটি মরদেহের পরিচয় নিশ্চিত করার কাজটি করবে। এ জন্যই মরদেহের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে।

প্রতিনিধি দলের হয়ে নেপাল পৌঁছানোর পর গতকালই কাজ শুরু করা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ দূতাবাসে সাংবাদিকদের জানান, নিহতদের ডিএনএ সংগ্রহের পর স্বজনদের স্যাম্পলের সঙ্গে মিলিয়ে শনাক্ত করা হবে। প্রত্যেকের দুটি করে স্যাম্পল নিয়ে একটি নেপালে দিয়ে আরেকটি নিয়ে দেশে ফিরবে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া বিশেষজ্ঞ দল।

মরদেহের ডিএনএ স্যাম্পল হিসেবে দাঁত, চুল এবং হাড় সংগ্রহ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, সব স্যাম্পল হাতে আসার পর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ৮-১০ দিন সময় লাগবে। তাবে সবার আগে স্যাম্পল সংগ্রহটা জরুরি।

সর্বশেষ খবর