শিরোনাম
শনিবার, ১৭ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

পাইলট-ক্রুদের লাশে ১২ পরীক্ষা

বিমান বিধ্বস্তের কারণ তদন্তে নতুন মোড়

জুলকার নাইন, কাঠমান্ডু (নেপাল) থেকে

পাইলট-ক্রুদের লাশে ১২ পরীক্ষা

আহত আরও তিনজন ফিরলেন দেশে। গতকাল শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তোলা ছবি —জয়ীতা রায়

দুর্ঘটনার কারণ তদন্তের ক্ষেত্রে বিমানের ব্লাক বক্স ও অন্যান্য এভিয়েশন রেকর্ডের বাইরে তদন্তের কেন্দ্রস্থলে চলে এসেছে পাইলট, কো-পাইলট ও বিমানের ক্রুদের মরদেহ। বিমান দুর্ঘটনার তদন্ত করা কমিটির নির্দেশনায় তাদের মরদেহের ওপর বিশেষ ১২টি পরীক্ষা চালাচ্ছেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা।

ক্লু খুঁজে দেখা হচ্ছে পাইলট-কো পাইলটদের মোবাইল ফোনও। ককপিট থেকে এরই মধ্যে অকেজো অবস্থায় মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে তদন্ত কমিটি। সেটিকে পাঠানো হয়েছে ফরেনসিক গবেষণার জন্য। সবমিলিয়ে বেশগুরুত্বের সঙ্গে নেপালের এভিয়েশন বিভাগের তদন্তকারীরা বিমান দুর্ঘটনার কারণ খুঁজছেন। তারা একবছর সময় চাইলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে ছয় মাসের মধ্যে তদন্তের ফল জানাতে বলা হয়েছে নেপাল সরকারকে। তবে নিজের ধারণার কথা জানিয়ে ত্রিভুবন বিমানবন্দরের মহাব্যবস্থাপক রাজকুমার ছত্রী জানিয়েছেন, একমাসের মধ্যে কারণ জানা যেতে পারে। জানা গেছে, নেপালের টিচিং হাসপাতালের মর্গে থাকা পাইলট আবিদ ও কেবিন ক্রুদের বডি ফ্লুইড সংগ্রহ করে বিশেষ পরীক্ষার জন্য বিমান  দুর্ঘটনার তদন্তকারীদের দেওয়া হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তাদের মরদেহগুলোতে কোন বিষাক্ত কিছুর উপস্থিতি আছে কিনা, তাদের শারীরিক অবস্থা, উত্তেজক কোনো কিছুর উপস্থিতি, অ্যালকোহলের মাত্রা, ফিটনেসসহ ১২ পরীক্ষার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মরদেহের ফরেনসিক টেস্টের সঙ্গে যুক্ত থাকা চিকিৎসক হরিহর ওয়াস্তি জানান, বিমান দুর্ঘটনার প্রতেকটি মরদেহের ময়নাতদন্তই বিশেষ মনোযোগের সঙ্গে সময় নিয়ে করা হচ্ছে। তবে ক্রু ও পাইলটদের মরদেহের বিষয়ে বিশেষ বিষয় সম্পৃক্ত থাকায় এগুলোতে সময় লাগছে বেশি। এদের বডি ফু্লইডস ও প্রত্যেকটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গের অনেক বিষয় সময় নিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অন্যদিকে নেপাল এভিয়েশনের কয়েকজন কর্মকর্তাসহ তদন্ত কমিটির কর্মকর্তারা গতকাল দুই দফায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সেখানে তারা নানান বিষয় খতিয়ে দেখেছেন। কমিটির এক সদস্য জানান, ইউএস বাংলার বিমানটির ব্ল্যাকবক্সের  ফ্লাইট ডাটা রের্কডার (এফডিআর) ও ককপিট ডাটা রেকর্ডার (সিভিআর)সহ  অন্য তথ্য ডি-কোড  করে বিশ্লেষণ করার কাজ শুরু হয়েছে। প্রতিটি বিষয় বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। ককপিটে পাইলট, কো-পাইলটের সঙ্গে কী কথা বলেছেন, এয়ারট্রাফিকের সঙ্গে কী কথা হয়েছে, ককপিটের অপারেশন কী ছিল, সময় ধরে ধরে প্রতিটি বিষয় বিশ্লেষণ করা হবে।  ফ্লাইট ডাটা রেকর্ডারের তথ্যের সঙ্গে  ককপিট ডাটা রেকর্ডারের তথ্য, এয়ারট্রাফিকের রেকর্ড সব মিলিয়ে দেখা হবে। এ কাজটি করতে সময় প্রয়োজন। একইসঙ্গে পাইলট, কো-পাইলটের লাইসেন্সসহ অন্য বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হবে। বিমানটির মেইন্টেন্যান্সসহ অন্য বিষয়গুলোও তদন্তে বিবেচনা করা হবে। বাংলাদেশ থেকে ইউএস-বাংলার ফ্লাইট সংশ্লিষ্ট নানান কাগজপত্র নিয়ে বাংলাদেশের সিভিল এভিয়েশনের কয়েকজন অফিসার কমিটির কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন বলে জানান নেপালি এই কর্মকর্তা। তবে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে নতুন করে সিভিল এভিয়েশনের কর্মকর্তাদের যুক্ত হওয়ার বিষযে বিস্তারিত তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে এর আগে বিমানমন্ত্রীর সঙ্গে কাঠমান্ডু ঘুরে যাওয়া এক কর্মকর্তা জানান, দুর্ঘটনার দিনই ইউএস-বাংলার বিএস ২১১ ফ্লাইট ও ফ্লাইটের পাইলট সংক্রান্ত কাগজপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের কাছেও থাকা বিমান, পাইলট সংক্রান্ত কাগজপত্রও সংগ্রহ করা হয়েছে ঘটনার দিন। পরদিন বাংলাদেশের সিভিল এভিয়েশন অথরিটি ৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের নামের তালিকাও পাঠিয়েছে নেপালের সিভিল এভিয়েশনে। এ ছাড়া নেপাল সিভিল এভিয়েশনকে ঢাকা থেকে জানানো হয়েছে, তাদের কী কী তথ্য দরকার, তাদের চাহিদামতো সব তথ্য তদন্তকারী দলকে দেওয়া হবে। এদিকে নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরের জেনারেল ম্যানেজার রাজকুমার ছত্রী বাংলাদেশের সাংবাদিককের কাছে দাবি করেছেন, এয়ার কন্টোল টাওয়ারে থাকা কর্মকর্তা-সিসিটিভি ফুটেজ এবং উপস্থিত যাত্রী-অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, ইউএস বাংলার পাইলটের ল্যান্ডিং সাধারণ ল্যান্ডিং এর নিয়ম মানেননি। সাধারণত যে অ্যালাইনমেন্টে বিমান অবতরণ করে ইউএস বাংলার ফ্লাইটটি তা না এসে অন্যদিকে চলে গেছে। এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের গাফিলতির বিষয়টি অস্বীকার করছেন কিনা- জানতে চাইলে রাজকুমার ছত্রী বলেন, তদন্ত কমটি কাজ করছে, তাই কোন কিছু স্বীকার বা অস্বীকার করার অবস্থা নেই। তবে এয়ার ট্রাফিক কন্টোলের সঙ্গে পাইলটের কথোপকথনের বিষয়ে ফাঁস হওয়া কথোপকথন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটাতে কোনো পক্ষেরই দোষ দেওয়া যায় বলে আমি মনে করি না। কিন্তু শেষ সিদ্ধান্ত পাইলটেরই নেওয়ার এখতিয়ার, এয়ার ট্রাফিক কন্টোল শুধু পাইলট হেল্প করে থাকে। তবে পাইলটকে স্বাভাবিক নিয়ম-রীতিগুলো মানতে হয়, সেটা এক্ষেত্রে হয়নি। উড়োজাহাজটি অ্যালাইনমেন্ট মানেনি। অবতরণের জন্য ০২ টার্ির্মনালে নামতে উত্তর দিক থেকে নিতে হয়, কিন্তু তিনি নিয়েছেন দক্ষিণ দিক থেকে। কিন্তু তার জন্য ০২ এবং ২০ টার্মিনালই খোলা ছিল। কিন্তু দুর্ঘটনার আগে অন্য কোন দিন ইউএস-বাংলার বিমানটির বিষয়ে কোনো অভিযোগ তার কাছে আসেনি বলে জানান ত্রিভুবন বিমানের মহা-ব্যবস্থাপক ছাত্রী। তিনি জানান, ইংল্যান্ডের বিশেষজ্ঞরা দুূর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে আসতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। এ ছাড়া ব্লাকবক্স নিয়ে প্রয়োজনে কানাডা যাওয়ার কথা বলেছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।

সর্বশেষ খবর