শিরোনাম
শনিবার, ১৭ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

স্বপ্নের ফাইনালে বাংলাদেশ

মেজবাহ্-উল-হক

স্বপ্নের ফাইনালে বাংলাদেশ

কলম্বোয় জয়ের উচ্ছ্বাসে নাগিন নৃত্যে মেতে ওঠে টিম বাংলাদেশ —এএফপি

প্রতিশোধ! প্রতিশোধ!! একেই বলে প্রতিশোধ!!! বাংলাদেশে এসে আগের সিরিজে টাইগারদের দুই টি-২০তে হারিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। সেই শ্রীলঙ্কাকেই এবার তাদের মাটিতে টানা দুই ম্যাচে হারিয়ে চরম প্রতিশোধ নিলেন সাকিবরা। হাতুরা সিংহের শিষ্যদের কাঁদিয়ে স্বপ্নের ফাইনালে উঠল টাইগাররা। আগামীকাল নিদাহাস টি-২০ ট্রফির মহারণে ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।

শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে শেষ চার বলে দরকার ছিল ১২ রান। উইকেটে ছিলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। সেই মাহমুদুল্লাহ যিনি বছর দুয়েক আগে টি-২০ বিশ্বকাপে বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামীতে শেষ তিন বলে দুই রান নিতে পারেননি! এ ম্যাচে কি পারবেন? এমন ভাবনা মনে আসতে না আসতেই লঙ্কান বোলার ইসুরু উদানার বলে কাভার দিয়ে অসাধারণ এক বাউন্ডারি! লঙ্কান দর্শকে ঠাসা কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে তখন পিনপতন নীরবতা। পরের বল ডিপ মিড উইকেটে পাঠিয়ে দিয়ে আবারও দুই রান। ২ বলে দরকার ৬ রান। তবে শেষ বলের জন্য আর অপেক্ষা করলেন না মাহমুদুল্লাহ। লেগ স্ট্যাম্পের ওপর বল পেয়ে ফ্লিক করে ডিপ স্কোয়ার লেগ দিয়ে তা পাঠিয়ে দেন গ্যালারিতে। গ্রেট ছক্কা! অবিস্মরণীয় জয় পায় বাংলাদেশ। এই জয়ে যেন বেঙ্গালুরুতে হারের দায় থেকে নিজেকে মুক্ত করলেন মাহমুদুল্লাহ। মজার বিষয়, বেদনাদায়ক সেই হারের ম্যাচে খলনায়ক ছিলেন মুশফিকও! কারণ মাহমুদুল্লাহর আউট হওয়ার আগের বলেই আউট হয়েছিলেন তিনি। তবে এই নিদাহাস ট্রফিতে আগের ম্যাচে এই শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ২১৫ রানের পাহাড় টপকে শ্বাসরুদ্ধকর এক জয় এনে দিয়ে দায়মুক্ত হয়েছিলেন মুশফিকও! দুই ভায়রা ভাইয়ের ‘দায়মুক্তি’র দুই ম্যাচ দিয়ে প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কার মাটিতে ফাইনালে উঠে ইতিহাস সৃষ্টি করল বাংলাদেশ। ক্রিকেট আসলে এমনই। কখনো সব কেড়ে নেয়, আবার কখনো দুই হাত ভরিয়ে দেয়। শেষ ওভারে দরকার ছিল ১২ রান। হাতে ছিল তিন উইকেট। প্রথম বল ডট। দ্বিতীয় বলে মুস্তাফিজ রানআউট। তবে দু-দুটি বলই ব্যাটসম্যানের মাথার ওপর দিয়ে গেলেও লঙ্কান আম্পায়ার ‘ওয়াইড’ বলের সিদ্ধান্ত দেননি। এ কারণে খেলা সাময়িক বন্ধ ছিল। ম্যাচ বয়কট করার কথাও ভাবছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ক্রিকেটে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তাই লঙ্কান আম্পায়ারের ‘অন্যায়’ সিদ্ধান্ত মেনে খেলতে বাধ্য হন মাহমুদুল্লাহরা। তারপরই রচিত হলো রূপকথা। কলম্বোর প্রেমাদাসায় কালকের ম্যাচে রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল বেশ আগে থেকেই। ১৩ বলে যখন বাংলাদেশের দরকার ছিল ২৩ রান, ঠিক তখনই থার্ডম্যানে ক্যাচ তুলে দিয়ে আউট হয়ে যান সাকিব আল হাসান। ম্যাচের চিত্রনাট্যই যেন পাল্টে যেতে ছিল। কিন্তু অপর প্রান্তে ‘অবিসংবাদিত’ নায়ক মাহমুদুল্লাহ ছিল বলেই শেষ পর্যন্ত জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে টাইগাররা। জয়ের নায়ক মাহমুদুল্লাহ মাত্র ১৮ বলে খেলেছেন ৪৩ রানের সাইক্লোন ইনিংস। ম্যাচ শেষে বলেন, ‘আমার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস এটি। খুবই চাপে ছিলাম। কী হবে তা ভেবে সংশয়ও জাগছিল। তারপরও জিতে গেলাম।’ গতকাল ম্যাচের ভিত গড়ে দিয়েছিল তামিম ইকবালের ৪২ বলে ৫০ রানের ইনিংসটি। আগের দুই ম্যাচে টানা হাফ সেঞ্চুরি করা মুশফিকের এ দিন ২৮ রানের ইনিংসটাও মহাগুরুত্বপূর্ণ। তবে এই ম্যাচে বাংলাদেশকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছিল সাকিব আল হাসানের প্রত্যাবর্তন।  অনেক দিন পর বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার দলে ফিরলেন, টস করতে গিয়ে টসও জিতলেন! ফিল্ডিং নিয়ে প্রথম ওভারে বল হাতে নিজেই চলে যান আক্রমণে। প্রথম ওভারে মাত্র ৩ রান দেন। দ্বিতীয় ওভারে ৬ রান দিয়ে একটি উইকেটও তুলে নেন। সাকিবের বোলিং দেখে মনেই হয়নি তিনি ইনজুরি থেকে সবেমাত্র ফিরেছেন! দাপট দেখিয়েছেন অন্য বোলাররাও। তবে শুরুর ছন্দটা শেষের দিকে হারিয়ে ফেলেন তারা। প্রথম ১০ ওভারে যে শ্রীলঙ্কা ৫ উইকেট হারিয়ে করেছিল মাত্র ৫৩ রান, শেষের ১০ ওভারে তারা করেছে ১০৬ রান। কুশল পেরেরা মাত্র ৪০ বলে করেছেন ৬১ রান। ৭ বাউন্ডারির সঙ্গে ১টি ছক্কা। থিসারা পেরেরা ৩৭ বলে খেলেছেন ৫৮ রানের ঝড়ো ইনিংস। ৩টি করে ছক্কা-চার। দুই পেরেরার ৯৭ রানের জুটিতেই ১৫৯ রানের বড় স্কোর পায় লঙ্কানরা। ৪১ রানে ৫ উইকেট নেওয়ার পরও লঙ্কানদের রানের গতি থামাতে পারেননি বাংলাদেশের বোলাররা। ৪ ওভারে রুবেল ৪১ এবং মুস্তাফিজ দিয়েছেন ৩৯ রান। মুস্তাফিজ তার শেষের দুই ওভারেই দিয়েছেন ৩৬ রান। তবে দারুণ বোলিং করেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। চার ওভারে দিয়েছেন মাত্র ১৬ রান। একটি উইকেটও নিয়েছেন। তবে সব আলোচনা-সমালোচনাই আড়াল হয়ে গেছে মাহমুদুল্লাহর আলোক ঝলকানির ব্যাটিংয়ের পর। রোমাঞ্চকর এক জয় বলে কথা। শাবাশ, বাংলাদেশ।

অভিনন্দন : বাংলাদেশের অবিস্মরণীয় জয়ের পর অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সর্বশেষ খবর